Search

Thursday, September 10, 2020

ইউনিলিভার পিউরইটের আপত্তিকর বিজ্ঞাপন!

'পিউরইট' নামের একটি ব্রান্ডের ফিল্টার যা পানি বিশুদ্ধ করে, এটি ইউনিলিভার নামের বহুজাতিক কোম্পানি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বাংলাদেশেও বাজারজাত করে থাকে। এরা দাবী করে থাকে এদের পানি অমায়িক বিশুদ্ধ।
সে দাবী এরা করতেই পারে। এরা যদি বলে এটা এই গ্রহের সবচেয়ে নিরাপদ পানি সে ভিন্ন আলোচনার বিষয়। তবে এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ-ব্যাখ্যা অবশ্যই থাকতে হবে।

'হরলিকস'-এর মতো কেউ বলে দিল, যে বাপ-মা ৩ফুট পোলা হবে ৬ আর এই পরীক্ষা করেছেন ভারতের এক বোডিং স্কুলে [] তাহলে এ দেশে এই পানীয় অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে।
যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ইউনিলিভার নিয়ম করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তাদের এই পানির ফিল্টারের বিজ্ঞাপনটি দেখায়। নমুনা:
এই বিজ্ঞাপনে আমরা দেখতে পাই এক অভিনেতা বয়স্ক একজন মানুষ সেজে এক বাড়িতে কল-বেল টিপে পানি খেতে চাচ্ছেন।
পানি দেওয়ার পর তিনি জানতে চাইছেন, 'ফুটানো তো'?
গৃহকর্ত্রী ঝলমলে মুখে উত্তর দিচ্ছেন, 'একশ বার' বা একশ ভাগ।
তারপর সেই অভিনেতা গ্লাসের ফুটানো পানিটা অবহেলা ভরে ফেলে দিচ্ছেন এবং তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলছেন, 'তাহলে তো খাব না'।
তারপর তিনি বয়স্ক মানুষের ছদ্মবেশ সরিয়ে নেওয়ার পর ওই ভদ্রমহিলা চিল-চিৎকার দিয়ে বলেন: আরে, ছাতার ভাই...।
আমাদের দেশে এটা-একটা খুবই সহজলভ্য বিষয়। ভাল টাকা পেলে অভিনেতারা পটিতে বসে উবু হয়ে ইয়ে করার পোজ দিতেও পিছপা হন না। আবার এই সমস্ত অভিনয় দেখে আমরা দর্শক প্রায় অজ্ঞান হওয়ার পর্যায়ে চলে যাই।

যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম একটা কোম্পানি তাদের পণ্যটা সেরা এটা বলে বিজ্ঞাপন দিতেই পারেন কিন্তু ভঙ্গিটা লক্ষনীয়। এখানে তারা কেবল তাদের পণ্যটাকেই সেরাই বলছেন না যুগ-যুগ ধরে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার আমাদের যে অভ্যেস তাকে কেবল তুড়ি মেরেই উড়িয়েই দিচ্ছেন না, ভারী তাচ্ছিল্যের আচরণ করছেন। এ এক অসভ্যতা, চরম ধৃষ্টতা! এই প্রজন্মের জন্য ভুল বার্তা!

মিয়া ছলিমুল্লার দল, ক-বছর হলো, হাঁ? আমরা তো চাপকলে মুখ লাগিয়ে পানি খেয়েই বড় হলুম। অনেকের কপালে তো চাপকলের এই বিশুদ্ধ পানি এখনও জোটে না। অনেকের কাছে এখনও ফোটানো পানি এক বিলাসিতার নাম, শ্রদ্ধার নাম!
বাহ, বেনিয়া-এক কোম্পানি কয়েকটা ময়লা নোট দিল এক অভিনেতাকে আর তিনি ধাম করে ফুটানো পানি একেবারে ফেলেই দিলেন!
এই বক্তব্য-ভঙ্গি নিয়েই আমার আপত্তি। আচ্ছা, ইউনিলিভার আপনাদের সঙ্গে একটু বাতচিত করা যাক। ধরুন, 'আখুরাদেশ' নামে একটা দেশে 'অ্যালিস' নামের একজন 'কেনডেস্ট্যাং' নামের একটা পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র আবিষ্কার করল।
তো, একদা এক বালক পানি খেতে চাইল। সে যখন জানল ওটা পিউরইটের পানি তখন ক্ষেপে গিয়ে পিউরিটের উপর বিসর্জন করল, পানি এবং মুত্র দুই-ই। আচ্ছা, ইউনিলিভার ভাইয়া, বুকে বা আপনাদের পিউরইটে হাত দিয়ে বলুন তো এটা কী বিজ্ঞাপনে দেখানো আদৌ ঠিক হবে? হবে না, কেন? আহা, ওটাই হচ্ছে আমার মূল বক্তব্য, কোন প্রকারেই ভুল বার্তা দেওয়া চলে না।
  

পানির বিশুদ্ধতা যাচাই করার বিভিন্ন পন্থা আছে। এটা দেখার দায়িত্ব এই বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তাঁদের। তাঁরাই ভাল বলতে পারবেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি সবিনয়ে কেবল ছোট্ট একটা উদাহরণ দিতে চাই। বিশুদ্ধ পানি বোঝাবার জন্য অনেক প্যারামিটারের মধ্যে  TDS একটা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, TDS ৩০০-এর ভেতরে থাকলে পানি খুবই ভাল ১২০০-এর উপর হলে একেবারেই পানের অনুপযুক্ত। TDS বা Total Dissolved Solid হচ্ছে পানির পরিচ্ছন্নতার নির্দেশক। প্রতি এক লিটার পানিতে কত মিলিগ্রাম দ্রাব্য কঠিন পদার্থ দ্রবীভূত অবস্থায় আছে তা TDS দিয়ে বোঝানো বা প্রকাশ করা হয়। এবং TDS এর একক ppm আর 1 ppm = 1mg/Liter ধরা হয়।
আমরা একটু দেখি 'পিউরইট' এবং অন্য পানির TDS কত? এই সমস্ত স্যাম্পল একই দিনে নেওয়া:
১. পিউরইট: ১৯২ থেকে ১৯৩ ppm
২. 'মাম' নামের বানিজ্যিক পানি: ১৩৯ ppm
৩. ফোটানো পানি: ১৬৮ ppm
৪. টিউব-ওয়েলের পানি: ৩১৯ ppm (এটায় আয়রণ মাত্রাতিরিক্ত)
৫. অন্য-একটি টিউব-ওয়েল: ১৪৮ ppm 
৬. পুকুরের পানি: ২৮৭ ppm
৭. ড্রেনের পানি: ৫৮৭ ppm
৮. ভারত (ত্রিপুরা) থেকে পানি নামের যে বর্জ্য বাংলাদেশে আসে: ১২৪৬ ppm 
নমুনা হিসাবে 'ঢাকার পানি' পাওয়া গেলে এর পূর্ণতা পেত। যোগাড় করা সম্ভব হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করি!
আগে যেটা বলেছি আবারও বলি, পানির বিশুদ্ধতা দেখা এটা বিশেষজ্ঞদের কাজ। কিন্তু বিজ্ঞাপনে যে ভুল ম্যাসেজ দেওয়া হচ্ছে ফোটানো পানি নিয়ে এটায় আমার তীব্র আপত্তি আছে। এই বহুজাতিক  কোম্পানিটি অহরহ যে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে এটা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য 'নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর'-এর কাছে আবেদন জানাচ্ছি।

* এবং নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে আলাদা করে মেইলের মাধ্যমে আমার আপত্তির বিষয়টা জানিয়ে রাখছি।

সহায়ক সূত্র:
১. বদনা ভরে খাও হরলিক্স...: https://www.ali-mahmed.com/2012/12/blog-post_9436.html

       
   

No comments: