Search

Wednesday, February 2, 2022

একজন ওসি প্রদীপ হয়ে উঠার পেছনের মহান কুশীলবগণ...!

আসলে একজন ওসি প্রদীপ কেউ না, কিছু না []। ইমাজিন, একটা বিদেশী মিডিয়ার সঙ্গে নাকি ওসি প্রদীপের কানেকশন []! শবরি কলা মাখানো ফাঁসির দড়ির সাধ্য নেই যে নাগাল পাবে মিডিয়ার মায় আমাদের []। ওসি প্রদীপকে নিয়ে অসাধারণ এই লেখাটি লিখেছেন, Zia Hassan :
"বাংলাদেশ থেকে অনেকে সাংবাদিক এখন  উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে যাচ্ছেন। আমি আশা করবো তাদের কেউ একটি পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণা করবেন, কিভাবে ৪ই জানুয়ারি ২০১৯ এ টেকনাফ থানায় দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার পরে, ১৫০ জনের উপরে নাগরিককে  হত্যার রিপোর্ট বাংলাদেশের মিডিয়া এড়িয়ে গেছে! সুশীল সমাজের মাঝে  কোন সংবেদনশীলতা তৈরি করেনি  এবং ফাইনালি বাংলাদেশের এলিট শ্রেণির নাগরিক মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা হত্যার পরে ওসি প্রদীপের ম্যাসাকার  আলোচনায় এসেছে। 
আমি চিন্তা করে বিস্মিত হই, মেজর সিনহা হত্যা না-হলে, আরো কত শত ব্যক্তিকে ওসি প্রদীপ খুন করতো। 

গুগলের এডভান্সড সার্চ ফিচার ব্যবহার করে, আমি  ২০২০ এর জুলাই এর পূর্বে  বিভিন্ন নিউজ পেপারের রিপোর্ট গুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছি, ওসি প্রদিপের প্রতি মিডিয়ার এটিচ্যুড কি ছিল এবং এই ১৫০ নাগরিক হত্যা  সম্পর্কে মিডিয়ার ইনভেস্টিগেশান কি ছিল?
বিস্ময়কর ভাবে দেখতে পেয়েছি, প্রায় ১৫০ জন হত্যার খবর মিডিয়ার কাছে কোন গুরুত্ব পায়নি! অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই রিপোর্ট গুলোতে  হত্যা হওয়া নাগরিককে ওসি প্রদীপ এর চাহিদা মত  ইয়াবা ব্যবসায়ী বা অস্ত্র ব্যবসায়ী  হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের সকল ইস্যুতে আমি প্রথম আলোকে আইডিয়াল ধরি। তো, প্রথম আলোর হিস্টরি সার্চ করে দেখলাম, এই দুই বছরে, হত্যা কান্ড গুলোতে প্রথম আলোর শিরোনাম ছিল, টেকনাফে 'বন্দুকযুদ্ধে' ইয়াবার হোতা সাইফুল নিহত (১২ জুন ২০১৯)' বা মানবপাচার মামলার দুই আসামি 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত (২৪ জুন ২০১৯, প্রথম আলো)' বা 'টেকনাফে মাদক ব্যবসায়ীদের 'গোলাগুলি', নিহত ৪ (২৮ জুলাই ২০২০, প্রথম আলো)'
ইয়াবার জনপদে বসবাস নামে ০৯ ডিসেম্বার ২০১৮ এর একটি আর্টিকেলে প্রথম আলোর প্রতিবেদক লিখেছেন:
'শুরুতেই ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানতে চাইলেন, আমরা কোথায় উঠলাম। একজনের ফ্ল্যাটে উঠব এমনটি বলতেই, তিনি আঁতকে উঠে বললেন, কারও ফ্ল্যাট বা বাসায় ওঠার সুযোগ নেই। যেকোনো হোটেলেও ওঠা যাবে না। অবস্থা যে কী ভয়াবহ, সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনারা হোটেল সেন্ট্রাল রিসোর্টে গিয়ে ওঠেন।’ 

আমি প্রথম আলোর আর্কাইভে ওসি প্রদীপ সার্চ দিয়ে দেখেছি, শুধু মাত্র ২০২০ এর একটি রিপোর্টে ওসি প্রদীপ নিয়ে একটি নেগেটিভ রিপোর্ট আছে, যখন ওসি প্রদিপের একটি বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হলে সমালোচনা হয়। মাদক নির্মূলে এবার ওসির 'গায়েবি হামলা' ( ২৫ জুলাই, ২০২০, প্রথম আলো)। 
১৫০ জন মানুষকে একট থানার ওসি খুন করে মেরে ফেলেছে, ১৮ মাস সময়ের মধ্যে, এই খবর নিশ্চয়ই মেইন স্ট্রিম মিডিয়াগুলোর কাছে ছিল। এমন কি বিভিন্ন রিপোর্টে তারা সেইটা উল্লেখও করেছে। ২০২০ এর ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের ২৪ টিভি ওসি প্রদিপের হাতে মানব হত্যা নিয়ে রিপোর্ট ও করে।
কিন্তু, বাংলাদেশের মিডিয়া এবং সুশীল সমাজ এই হত্যাকান্ডগুলোর ভয়াবহতা ও স্কেল  নিয়ে  সম্পূর্ণ নির্বিকার ছিল। একটা দেশের ১৫০ মানুষকে একটা  থানার  ওসি গুলি করে মেরে ফেলছে সেটা নিয়ে কোন এডিটরিয়াল লেখা হচ্ছে না, সেটা নিয়ে কোন মানবাধিকার সংস্থা উচ্চকিত না, সুলতানা কামালের কোন বিবৃতি নাই, বামপন্থিদের  কোন মানব বন্ধন নাই ।
আমাদের প্রশ্ন করতে হবে, কেন? এইটা নিয়ে আমার একটা সিম্পল হাইপোথেসিস আছে। ইরাক যুদ্ধে বা আফগানিস্তানে দখল রাখার সময় মার্কিনীরা বাগদাদে বা কাবুলে  কিছু সিকিউরড মিলিটারি বেইস বানায়, যার ভেতরে তারা সম্পূর্ণ ভাবে সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু এই বেইজ গুলোর বাইরে কত মানুষ মারা যাচ্ছে, কত মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে সেটা নিয়ে  তাদের  কোন দুশ্চিন্তা ছিল না কারণ বেইসগুলোর ভেতরে তারা নিজেদের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করেছিল। এই বেইজ গুলো পুরো একটা শহরের মত। এগুলোর মধ্যে সিনেমা হল, স্টেডিয়াম, স্কুল, কলেজ, পানশালা, অডিটোরিয়াম সব কিছু আছে।
এই মিলিটারি বেইসগুলোর বাইরে কি হচ্ছে তা নিয়ে তাদের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না-থাকার কারণ, প্রথমত, তারা চাইলেও এই বেইসের বাইরের পুরো অঞ্চলের পূর্ণ  নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। 
দ্বিতীয়ত, এই বেইজ গুলোর নিয়ন্ত্রণ করেই তারা পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ  করতে পারে, পুরো দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশী শ্রম দেওয়ার  প্রয়োজন পরে না।  

আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশের ঢাকা এবং চট্টগ্রাম  শহর এই ধরনের দখলদার বাহিনীর  দুইটা বিশাল  মিলিটারি  বেইস -ক্যাম্প। 
বাংলাদেশের নিউজ পেপার গুলো বা  সিভিল সোসাইটি এই মিলিটারি বেইসটি  সিকিউর রাখতে পারলেই খুশি।  কারণ, এই মিলিটারি বেইসের  ভেতরেই দেশের ৮০% অর্থনীতি জেনারেট হয়, দেশের ৭০% বিদ্যুৎ এই ক্যাম্পের ভেতরে ব্যবহৃত হয়। ফলে এই মিলিটারি-বেইসের  বাহিরে যারা আছে, তাদের গুলি করে মারা হচ্ছে কিনা, তারা ধর্ষিত হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে এই ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপদ আচ্ছাদনে থাকা ব্যক্তিদের  মাথা  ব্যথা নেই, যতক্ষণ-না কোন কিছু ভাইরাল হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম নামের এই মিলিটারি বেইস-ক্যাম্পের কিছু মানুষের মানবিকতা বোধ অত্যন্ত প্রখর। ১৫০ জন ব্যক্তির  হত্যাকাণ্ডে  সম্পূর্ণ উদাসীন থাকলেও, কোনো একটি ঘটনা  ভাইরাল হওয়া মাত্রই তাদের তীব্র মানবতা উত্থিত হয় । তাই, ওসি প্রদীপের হাতে  ১৫০ জন নাগরিক হত্যার সংবাদে নীরব থাকলেও, সিনহার মৃত্যুর ঘটনা  ভাইরাল  হওয়া মাত্র তাদের মানবতা চাগিয়ে উঠে। বাংলাদেশের সরকারও জানে, এই মিলিটারি-বেইসের দখল রাখতে পারলে পুরো দেশের উপরে কন্ট্রোল রাখা যায়। 

ইরাক বা আফগানিস্তানে যেভাবে দখলদার বাহিনী কিছু অপারেশানের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় মিলিট্যান্টদের দমন করে ঠিক তেমনি  ওসি প্রদীপদেরকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহরে পাঠানো হয় সেই প্রান্তিক নাগরিকদের দমন করতে। উদ্দেশ্যে  সেই রিমোট অঞ্চল গুলোর উপরে কন্ট্রোল বজায় রেখে, সেই অঞ্চলগুলোর রিসোর্সের উপরে দখল ধরে রাখা  ও রেন্ট ও ট্যাক্স প্রবাহ বহমান রাখা ।
বাংলাদেশের মিডিয়া এবং সুশীল সমাজ এই হত্যাকাণ্ড গুলো নিয়ে চিন্তিত না কারণ, তারা জানে, এই ১৫০ জন মানুষ হত্যার মাধ্যমে ওসি প্রদীপ মূলত ঢাকা নামের  মিলিটারি বেইসটাকে সিকিউর করেছে এবং ঢাকার রেভেনিউ জেনারেট করার জন্যে টেকনাফের মতো রিমোট অধিকৃত অঞ্চলে উপরে আরো শক্ত কন্ট্রোল স্থাপন করেছে।
ফলে ঢাকার সাংবাদিকেরা বাইরে গিয়ে, আউটপোস্টে ভিজিট করে, ওসি প্রদীপের সাহচর্য কাটিয়ে এসে আরটিকেল লেখেন, ইয়াবার জনপদে বসবাস এবং সবকিছু জেনে বুঝেও ওসি প্রদীপদের  হাতে ১৫০ জন  নাগরিকের হত্যা কান্ডে তারা নীরব থাকেন।
কারণ, এই  হত্যা হওয়া ১৫০ জন নাগরিক তাদের কাছে নাগরিক নয়, মিলিট্যান্ট। তাই, তাদের লেখায় তারা হত্যা হওয়া মিলিট্যান্টদের  যুবলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি, অস্ত্র ব্যবসায়ী, বা ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত করিয়ে দেন যেন ক্যাম্পের ভেতরে থাকা অধিক সেন্সিটিভ  মানুষ গুলোর মানবতা  চাগিয়ে না উঠে । 

এই  হত্যার শিকার হওয়া মানুষগুলোকে ডিহিউমানাইজ করার মাধ্যমে এই   হত্যাকান্ডগুলোকে মিডিয়া নরমালাইজ করে, কারণ এই  হত্যা গুলোর মাধ্যমেই তাদের ঢাকা নামের মিলিটারি বেইজ ক্যাম্প সুরক্ষিত  হয়ে উঠে।
২০২০ এর ফেব্রুয়ারীতে ফ্রান্স টিভির রিপোর্টটা সংযুক্ত করলাম:

 
সহায়ক সূত্র: 
১. হায় সিনহা...: https://www.ali-mahmed.com/2020/08/blog-post_9.html
২. বিদেশী দূতাবাস...: https://www.ali-mahmed.com/2020/09/blog-post_14.html
৩. কী ভয়ংকর আমরা! এই একটা উদাহরণে এটা স্পষ্ট হবে। এই ভিডিও ক্লিপে প্রদীপ কথা বলছে আইন ভাল বোঝেন এমন একজন মানুষের সঙ্গে। এবং ওই মানুষটার বাচনভঙ্গিতে ধারণা করা যাচ্ছে ওই মানুষটার মেঘে-মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে যার চালু নাম কবরে এক পা দিয়ে রেখেছেন। তিনি এক পর্যায়ে অবলীলায় বলছেন: আর্মি...ও অবসরপ্রাপ্ত? ও তাহলে সমস্যা নাই...।
কারও হাতে সময় কম থাকলে ৫০ থেকে ৫৮ সেসেন্ড শুনুন। কী ভয়ংকর, কী ভয়াবহ!
...
ওই পরামর্শদাতা মানুষটা নাকি সাবেক এসপি! ঘটা করে আবার মিডিয়ার কাছে এহেন বক্তব্য রাখার পরও আইনের হাত গুটিয়ে যাওয়ার কোন কারণ তো দেখি না:

 

No comments: