শপথ আমার লেখালেখির, শপথ আমার সন্তানের- 'জুতাবাবা' এই কথাটা লিখতে আমার বড় কষ্ট হচ্ছে, বড় কষ্ট! কিন্তু কেউ যখন তার বাপকে জুতা মারে, জুতা মেরে উল্লাস করে তখন সেই বাপকে 'জুতাবাবা' বলাটাই সমীচীন।
আমি পূর্বে কোন লেখায় বলেছিলাম, আমাদের বাপরা যখন মাঠে-ঘাটে পড়ে থাকত- জমিতে চাষ করত, আপিসে কেরানিগিরি করত সে সময়টায় পড়ার নাম করে আমরা ইশকুলে। তখন আমাদের শিক্ষকরাই বাপের ভূমিকা পালন করতেন। আইজিপির এই কথাটা আমার ভাল লেগেছে। তিনি বলেছেন, আমরা তো আমাদের শিক্ষকদের এখনও পায়ে হাত দিয়ে সালাম করি। তাই তো হওয়ার কথা একজন আইজিপি হয়েছে নাকি মন্ত্রী তাতে তার শিক্ষকের কী আসে যায়! আমার দু-একজন শিক্ষক এখনও জীবিত। কালেভদ্রে দেখা হয়ে গেলে ভয়ে কাঠ হয়ে থাকি। শ্বাস ফেলি আস্তে ধীরে...!
এই ভিডিও ক্লিপটা দেব কিনা এই ধন্দে ছিলাম। কিন্তু অনেক ভেবে-ভেবে মনে হলো দিলে দোষ কী! এই মুহূর্তে আমার নিজেকে একজন নগ্ন অমানুষ মনে হচ্ছে। তো, ল্যাংটার আবার লাজ কী- গ্রামের চালু ভাষায়, 'ল্যাংটার নমাজ কী, সমাজ কী'!
ধরে নিলাম শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছে অশিক্ষিত উম্মাদ জনতা কিন্তু সারি-সারি পুলিশ দাঁড়িয়ে নড়াইলের এই শিক্ষককে যে সম্মান দিয়েছে, এ অভূতপূর্ব! ভাবা যায়, কী দুর্ধর্ষ একটা সন্ত্রাসী! কত হাজার খুন ধর্ষণ যে করেছে তার ইয়াত্তা নেই। আহা, সত্যি সত্যি খুন করে থাকলেও একজন শিক্ষককে কী তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তারই ছাত্রদের চোখের সামনে থেকে এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া যায়? খোদা, কেমন করে ঘাড় চেপে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে! তাও আবার ঘটনাস্থলে নাকি ডিসি মহোদয় এবং এসপি মহোদয় উপস্থিত ছিলেন। আহারে-আহারে, এমন একটা দৃশ্য আবারও দেখার চেয়ে আমি মরে যেতে চাইব। চোখ বন্ধ করে মৃত্যু কামনা করব।
'ভিলেজ পলিটিক্স' নামের একটা জিনিস বহুকাল ধরে চালু আছে। এ নতুন কিছু না! যেমন ধরুন এই ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের পদের জন্য অন্য একজন লালায়িত। তিনি গুটি চালবেন। অন্যদের মটর সাইকেল আগুনে পুড়বে কিন্তু বিচিত্র কারণে তারটা পুড়বে না। কিন্তু একটা দেশ নষ্ট হওয়ার আর কী বাকি থাকে যখন একজন আইনপ্রণেতা এহেন আচরণ করেন [১]। পিনাকী ভট্টাচার্য নামের একজন লেখক এমনটা করে বলেন:
এই ভিডিও ক্লিপে তিনি শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরাবার মধ্যে কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না। এই ক্লিপের প্রথম দিকের কিছু অংশ অপ্রয়োজনীয় মনে করায় আমি ফেলে দিয়েছি যতটুকু আছে তাতে কি আছে? পিনাকীর বক্তব্য আমরা যদি একটু সংক্ষেপ করি:
১. ...কিন্তু প্রিন্সিপাল কি করল...সে পুলিশ ডাকল। ...সে মনে করেছে ওই হিন্দিু ছেলের ফ্রিডম অভ স্পিচ রক্ষা করতে হবে।
২. ...তো এই শিক্ষকের শিক্ষা হওয়ার দরকার আছে না...?
৩. আমাদের প্রজন্ম তাদেরই শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিল যারা চাইল্ড এবিউজার...।
৪. ...এই যে বামেরা কত বড় বদমাইশ দেখেন। মানে বদমাইশের তো একটা লিমিট থাকে, ভাই। এরা লিমিটলেস...।
৫. ...তো যাই হোক, নিন্দা কাকে করবে? কেন এই টিচারকে জুতার মালা পরানো হয়েছে সেটার নিন্দা।
৬. ...নিন্দার চেয়ে যেটা জরুরি আসেন সেটা নিয়ে কথা বলি...।
বহু পূর্বেই আমাকে বিভিন্ন জনে বলে আসছিলেন পিনাকী নামের এই লোকটা একটা বিপদজনক লোক। বিভিন্ন সময়ে এই মানুষটার উগ্রতা, উস্কানি দেয়ার প্রবণতা ছিল অত্যন্ত প্রবল। তদুপরি পিনাকীকে একজন লেখক হিসাবে আমরা খানিকটা উদাসীন চোখে দেখার চেষ্টা করেছি। যাই হোক, পিনাকীর এই পয়েন্টগুলো নিয়ে খানিকটা হালকা চালের আলোচনা করি।
পয়েন্ট ১: 'প্রিন্সিপাল কেন পুলিশ ডাকল?
এখানে প্রমাণিত হয় পিনাকীর অনেক বুদ্ধি- জটিল করে বললে 'রেকটাম-মেটার' এবং গ্রে-মেটার জড়াজড়ি হলে যা প্রসব হয় আর কী! আর খানিকটা সহজ করে বললে পিনাকীর বুদ্ধি একটা গাধার চেয়েও বেশি। এখানে মনিটরে আঁক কষার সুবিধা নাই নইলে এটা আমি কাটাকুটি করে বুঝিয়ে দিতাম, স্যার পিনাকী গর্দভকে ছাড়িয়ে যান। ওরে, যে বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত উত্তাল সেখানে প্রিন্সিপালের পুলিশের সহায়তা চাওয়াটা বিরাট একটা অপরাধ বটে।
পয়েন্ট ২: 'তো এই শিক্ষকের শিক্ষা হওয়ার দরকার আছে না'?
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম পুলিশকে খবর দিয়ে শিক্ষক অন্যায় করেছেন তো, জুতার মালা পরিয়ে তাঁকে বরণ করতে হবে, রে পিনাকী! বটে! বেচারা পিনাকী সম্ভবত কোন শিক্ষক পায়নি! পিনাকীর শিক্ষক কেউ ছিল বলে তো মনে হয় না!
নাহ, পিনাকীর মত দানবের জন্য এত শব্দ, এ যে শব্দের অপচয়! চলে যাই সরাসরি পয়েন্ট ৫-এ: 'নিন্দা কাকে করবে? টিচারকে জুতার মালা পরানো হয়েছে তার নিন্দা'?
আরে না! তবে পিনাকীর মত আমিও নিন্দা জানাই। আমি নিন্দা জানাই পিনাকীর মত একটা কুলাঙ্গারের জন্ম আটকাতে না-পারার কারণে। এই প্রসঙ্গ ধরে এখানে আমি পিনাকীর পিতাকে নিয়ে আলোচনা করতে পারতাম। কিন্তু আমি পিনাকী নই বলেই সেটা সম্ভব না। পিনাকী একটা বিষয়ে ভারী সফল! সে টেনে লোকজনকে তার পর্যায়ে নিয়ে আসে। মোদ্দা কথা, তার মত দানব বানাবার অপচেষ্টা।
পয়েন্ট ৬: 'নিন্দার চেয়ে যেটা জরুরি আসেন সেটা নিয়ে কথা বলি'।
না, কথা বলব না কারণ পিনাকী একটা দানব, চলমান দানব! দানব নাকি তার মাকে খেয়ে ফেলে, দানব পিতাসম শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরাবে এ আর বিচিত্র কী! বাই এনি চান্স সেই শিক্ষক আত্মহত্যা করে বসলে এই 'কৃমিমানব' হলুদ দাঁত বের করে খিক-খিক করে হাসবে। 'দানব-পিনাকীকে' নিয়ে আর কথা বলব না কারণ তাহলে চুতিয়া শব্দটা আমাকে বলতে হবে। এটা আমি বলতে চাই না আবারও, কারণ পোলাপানরা এখন চুতিয়া লেখে এবং সঙ্গে এটাও লিখে দেয় কপিরাইট আলী মাহমেদ... [২]।
সহায়ক সূত্র:
২. এমন দেশটি...: https://www.ali-mahmed.com/2017/12/blog-post.html
No comments:
Post a Comment