Search

Wednesday, July 6, 2022

Ray Ban এবং একজন টম ক্রুজ!

লেখক: Syed Nazmus Sakib (লেখকের লিখিত অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)
"সূর্যের রশ্মি বা Ray কে যেন বিমানের পাইলটদের চোখে যাওয়ার আগেই আটকে ফেলা যায়, বা Ban করা যায়- সেই ধারণা থেকেই একটি সানগ্লাস কোম্পানি চালু হয় ১৯৩৭ সালে। নামটা ছিল কাজের মতই, শর্ট এন্ড সিম্পল, Ray Ban. কোম্পানির দুজন মালিক ছিলেন Bausch and Lomb. প্রথমে প্লাস্টিকের তৈরি আর সবুজ লেন্স থাকলেও, পরের বছরেই মেটালের সানগ্লাস তৈরি হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রেবেনের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গেল। আর্মির অনেক সিনিয়র সদস্য এই সানগ্লাস পরতেন দেখে বাকিরাও সেটা অনুসরণ করতেন। ধীরে ধীরে রেবেনের সানগ্লাস আমেরিকান ফ্যাশনের অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে ওঠে।
 
৫০ ও ৬০ এর দশকে এর জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে গেলো। জন লেনন, জেমস ডিনের মত তারকারা এই ব্রান্ডের সানগ্লাস পরতেন, সুতরাং আন্দাজ করাই যায় জনপ্রিয়তার পরিমাণ।
সমস্যা শুরু হল ৭০ এর দশক থেকে। রেবেনের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করলো। রেবেন একের পর এক নতুন ডিজাইনের সানগ্লাস কাস্টোমারদের সামনে হাজির করতে থাকলো। কিন্তু ফলাফল শূন্য!
১৯৮০ সালে মুক্তি পেলো The Blues Brothers নামের সিনেমা। কেন্দ্রীয় চরিত্রের দুই অভিনেতাদের রেবেনের সানগ্লাস দেয়া হল, পুরো সিনেমার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই তাদের চোখে সানগ্লাস। সিনেমা প্রশংসিত হলেও সানগ্লাসের ব্যবসার অবস্থা ভয়াবহ। পুরো বছরে রেবেনের সানগ্লাস বিক্রি হল মাত্র ১৮০০০ পিস!
অবস্থা বেগতিক দেখে পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮১ সালে রেবেন ১৫ হাজার ডলারের একটি চুক্তি সই করলো। চুক্তি মোতাবেক ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া বেশিরভাগ সিনেমা আর সিরিজে রেবেনের সানগ্লাস ব্যবহৃত হবে। চুক্তি অনুযায়ী সেটা শুরুও হল। তবে শুধুমাত্র একজন যুবকের মাধ্যমে রেবেনের ব্যবসার উন্নতি হয়েছিল।
 
১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া রিস্কি বিজনেস সিনেমায় সেই যুবক রেবেনের সানগ্লাস পরার পর সেই বছর সানগ্লাস বিক্রি হল ৩ লাখ ১৬ হাজার পিস। রেবেনের সানগ্লাস পরাটা আরেকবার 'কুল' ব্যাপার হিসেবে ফিরে এলো। তবে গল্প এখনও বাকি ছিল।
সেই একই যুবক ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া টপ গান সিনেমায় আবারও রেবেনের সানগ্লাস পরলেন। ফলাফল হল অবিশ্বাস্য। রেবেনের সেল বেড়ে গেলো ৪০%! সেই বছর সানগ্লাস বিক্রি হল ১.৫ মিলিয়ন পিস!
একা হাতে একটি সানগ্লাস প্রতিষ্ঠানকে রাতারাতি আবারও বিখ্যাত করে তোলা সেই যুবকের নাম টম ক্রুজ। আজকে তাঁর জন্মদিন।
 
একজন অভিনেতা আসলেই কত ভালো অভিনেতা সেটাকে আমি মাপি সে কোন কোন ডিরেক্টরদের সাথে কাজ করেছে, তা দিয়ে। সে ভিন্ন কিছু চেষ্টা করেছে কিনা, সেটা দিয়ে। এই জায়গায় টম ক্রুজের ভেরিয়েশনের সীমা নাই। ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা থেকে শুরু করে মাইকেল চ্যাপম্যান, টনি স্কট, রিডলি স্কট, মার্টিন স্করসেজি, অলিভার স্টোন, মাইকেল ম্যান, জন উ, ব্রায়ান ডি পালমা, রন হাওয়ার্ড, সিডনি পোলাক, পল থমাস এন্ডারসন, জে জে আব্রামস, স্টিভেন স্পিলবার্গ - কে নাই এই লিস্টে! জাস্ট রেঞ্জ চিন্তা করেন টম ক্রুজের।
লাস্ট বাট নট লিস্ট, টম ক্রুজ সিনেমার ঈশ্বর স্ট্যানলি কুবরিকের সাথে কাজ করেছেন। এই কপাল তার সমসাময়িক আর কোন অভিনেতার হয়নি। কুবরিক নিজের জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বানানো সিনেমাটা টম ক্রুজকে নিয়েই বানিয়েছেন। ১৫ মাস শুটিং হয়েছিল Eyes wide shut সিনেমার।
সাড়ে ১৩ মিনিটের একটা সিকুয়েন্সের জন্য এই সিনেমায় টম ক্রুজকে ২০০ বার টেক দিতে হয়েছে। এরপরেও তিনি 'উফ' পর্যন্ত বলেন নাই। এই ধৈর্যের নাম টম ক্রুজ, এই অধ্যাবসায়ের নাম টম ক্রুজ।
সুপারহিরোদের যুগে যখন আর কোন সিনেমা সেভাবে হলে ব্যবসাসফল হচ্ছে না, তখন টম ক্রুজের টপ গান ম্যাভেরিক নামের নন-সুপারহিরো সিনেমা, নন-হলিডেতে রিলিজ পেয়ে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে।
এই স্টারডমের নাম টম ক্রুজ। বালাই ষাট, 'যুবক' টম ক্রুজ। আপনি প্রিয় ছিলেন, আছেন আর থাকবেন।"

No comments: