লেখক: Arifuzzaman Tuhin (লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)
"গত ২৫ জুলাই সমকাল রিপোর্টটিতে বলেছে, বিদ্যুৎ না কিনেই সরকারের খরচ ৯০ হাজার কোটি টাকা। গত নয় বছরে রেন্টাল ও আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ৯০ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। সমকালের বক্তব্য, এই ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে সরকার কোনো বিদ্যুৎ কেনেনি।
সমকালের এই দাবি ঠিক নয়। গত নয় বছরে বেসরকারিখাত থেকে সরকার বিদ্যুৎ বেশি কিনেছে। বরং আমরা (আমি সহ অনেকে) বরাবর অভিযোগ করেছি, সরকার সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে বেসরকারি কেন্দ্র থেকে বেশি বিদ্যুৎ কিনছে।
শুধু গত অর্থ বছরের হিসাব হলো, গত অর্থ বছরে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে ৮ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার ৫৪০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে ১০.০৭%, সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত হয়েছে মোট বিদ্যুতের ৩৯.৩৮% আর বেসরকারিখাত (রেন্টাল, সিআইপিপি ও আইপিপি) থেকে এসেছে মোট বিদ্যুতের ৫০.৫৪৪১ শতাংশ বিদ্যুৎ। তার আগের বছর বেসরকারিখাত থেকে প্রায় একই পরিমান বিদ্যুৎ এসেছে।
শুধু সমকাল না, আমি কয়েকটি মিডিয়া চেক করে দেখলাম তারা এরকম রিপোর্ট করছে। ডেইলি স্টার তেলের রিজার্ভ নিয়ে একটা রিপোর্ট করে পরে তুলে নিয়েছে, কারণ রিপোর্টটি ভুল। ডেইলি স্টার লিখেছিল, অকটেন ও পেট্রোলের রিজার্ভ ১৩ দিন ও ১৭ দিন আছে। আমদানি করতে পারছে না বিপিসি।
প্রথমত জানা দরকার, অকেটন ও পেট্রোল আমদানি করা হয় না। এটা দেশের গ্যাসক্ষেত্রের কনডেন সেট থেকে (গ্যাসের উপজাত) থেকে রিফাইন করে পেট্রল ও অকটেন তৈরি করা হয়। সামান্য পরিমাণ অকটেন আমদানি করা হয় এটা বুস্টার হিসেবে। দেশে পেট্রোল পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ। বরং ভোলা গ্যাসক্ষেত্রের কনডেনসেট আনা যাচ্ছে না। সেটা নষ্ট হবার উপক্রম। এক সময় দেশ থেকে পেট্রল রপ্তানিরও চেষ্টা করা হয়েছে, তবে তা পারা যায়নি।
কোনো কোনো টিভি বলছে দেশে তেল মজুত আছে ৩৭ দিনের। এটি বলে তারা প্যানিক তৈরি করছে। অথচ দেশে তেল মজুতের ক্ষমতাই আছে ৪০দিনের। তাহলে কী বুঝলেন বলেন? ডেইলি স্টারের এই রিপোর্টটা দেখে অনেকে প্যানিক হতেন, তারপর প্যানিক বাইয়িং হতো, আর তার ফলে যার দরকার নেই, বেশি বেশি অকটেন পেট্রল কিনে সংকট সত্যি সত্যি তৈরি হতো। করোনাকালে এরকম প্যানিক বাইয়িং সংকট তৈরি হয়।
১.
ভারতের আদানি গ্রুপ এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায়নি। ২০১৭ সালে পিডিবি তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করে। ওই চুক্তির কারণে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে তাদের পাওনা হয়েছে এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা। (প্রকাশিত হয়েছে ডয়েচেভেলে ২০ জুলাই ২০২২)
আসল সত্য: বাণিজ্যক উৎপাদন বা সিওডি (কমার্শিল অপারেশন ডেট) হবার আগ পর্যন্ত আদানি বাংলাদেশের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে না। অর্থ পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এমনকী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা এলাকায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রর সঞ্চালন লাইন নির্মাণ নিয়ে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। বিষয়টি পলিটিক্যালি গড়িয়েছে। ফলে সেই সঞ্চালন লাইন নির্মাণও পেছাবে। আর সিওডি কিভাবে হয় সেটা পিডিবির সাথে কথা বলে নিলেই হয়।
২.
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদন না হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে শুধু সক্ষমতার জন্য নির্দিষ্ট হারে অর্থ (ক্যাপাসিটি চার্জ) পরিশোধ করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। শুধু বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে গিয়েই প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি)। বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে সামিট, ইউনিক ও রিলায়েন্সের ১ হাজার ৯০০ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার এলএনজিভিত্তিক আরো তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। (বণিকবার্তা, ২৩ জুলাই ২০২২)
আসল সত্য: বাণিজ্যক উৎপাদন বা সিওডি (কমার্শিল অপারেশন ডেট) হবার আগ পর্যন্ত কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সিওডি ঠিক করা হয়নি, নির্মাণ কাজও শেষ হয়নি। এসব তথ্য একদমই অনুমান নির্ভর। বরং কেন্দ্র তিনটি উৎপাদনে এলে সাশ্রয়ীমূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় কমে যাবে।
৩.
‘বিদ্যুৎ আসেনি, তবুও ভারতের আদানি গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে ১২১৯ কোটি টাকা’(৮ জুন ২০২২, ডেইলি স্টার)।
আসল সত্য: বাণিজ্যক উৎপাদন বা সিওডি (কমার্শিল অপারেশন ডেট) হবার আগ পর্যন্ত আদানি বাংলাদেশের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে না। অর্থ পাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
৪.
সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হয়নি, বিদ্যুৎ আসবে না। তবে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেবে পিডিবি (বিসনেস স্টান্ডার্ড, ৮ জুন ২০২২)।
আসল সত্য: বাণিজ্যক উৎপাদন বা সিওডি (কমার্শিল অপারেশন ডেট) হবার আগ পর্যন্ত আদানি বাংলাদেশের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে না। অর্থ পাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে সরকারের সমালোচনা আছে। সেটা করা দরকার। কিন্তু সমালোচনার জন্য ভুল তথ্য কেন সরবরাহ করা হবে সেটা আমার মাথায় আসছে না।
চাহিদা নেই তবুও সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র দিচ্ছে- এতে গোটা খাত অস্থির হয়ে যাচ্ছে। দরপত্র ছাড়া এভাবে জরুরী আইনে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে, অথচ সেটা আদৌ চালানো যাবে কিনা সেটা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।" Arifuzzaman Tuhin
No comments:
Post a Comment