Search

Tuesday, August 23, 2022

একালের দাস!

লেখক: Muquit Mohammad

" ১.
রাষ্ট্রের উর্দি-পেটোয়াদের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে ধর্মঘট বন্ধ করে চা-বাগান শ্রমিকদের কাজে ফেরত যেতে বাধ্য করা হলো। এবং আর কখনো যেন এমন বেয়াদবি না-করে সেটার 'শিক্ষা' হিসেবে আগের দিন ঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ টাকার উপহার সম্বলিত পঁচিশ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণাও বাতিল করে দেয়া হলো।
গত দেড়যুগ ধরে খুব আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি দেখে আসার ফলে খুব সহজেই অনুমান করতে পারছি বেয়াদবির শাস্তি হিসেবে এই 'শিক্ষা' দেয়ার বুদ্ধিটি কোথা থেকে এসেছে।
 
ওদিকে চা-বাগান মালিক সমিতি এইচ-আরের টিপিকাল খরচগুলো (যেমন, সাধারণ ছুটি, সরকারি ছুটি, সিক লীভ, ওয়েলফেয়ার চাঁদা) আর হাবিজাবি সব জিনিসকে (যেমন, শ্রমিকরা বাসার পাশে বাগানে যেসব সবজি বা ফল ফলায়) ছোটলোকের মতো গায়ের জোরে টাকায় কনভার্ট করে খবর ছাপিয়েছে যে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি হলেও দৈনিক ২৮০ টাকার বেনিফিট শ্রমিকদের নাকি তারা দিচ্ছে। ওই ২৮০ টাকার মধ্যে রেশনের ৩০ টাকা বাদে বাকী সব হিসেব হচ্ছে স্রেফ নির্লজ্জ ভাওতাবাজি।
 
ওদিকে দোরা-কাউয়ার কবিতা লিখে দেশের সাহিত্যাঙ্গনে সাড়া ফেলে দেয়া এক বুদ্ধিজীবী [] ভেকধারী ভাঁড়, প্রস্তাব করেছে চা-বাগান শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকায় না-পোষালে তারা চা-বাগানের কাজ ছেড়ে শহরে এসে অন্য কাজ করলেই পারে!
ওহে রামছাগল, এদেরকে বর্তমান বাজারে ১২০ টাকার মতো প্রায় বিনা বেতনে দশকের-পর-দশক ধরে কাজ করানোর উদ্দেশ্যই তো হচ্ছে এদেরকে চা-বাগানের ভেতর কনফাইন করে রাখা। এত কম বেতন যাতে কোনোভাবেই বাইরের জগতের কাজে সুইচ করার মতো কোন শক্তি এই শ্রমিকেরা অর্জন করতে না পারে []। পুঁজিবাদী শোষনের এই খুব সাধারণ বিষয় না জানা থাকলে তুই বাপ দোরা-কাউয়া নিয়াই ব্যাস্ত থাক ভাই।
আহারে-আহারে! বাপ-ছেলে এক বাটিতেই দুপুরের খাবার সেরে ফেলে!
(ছবি ঋণ: Adnan Azad Asif)
 
পৃথিবীর সভ্য অসভ্য সবদেশে মিনিমাম ওয়েজ বলে একটা জিনিস থাকেই। অসভ্য দেশে কাগজে-কলমে, সভ্য দেশে বাস্তব প্রয়োগে। আর বাংলাদেশ নামক আমাদের এই মর্ত্যের বেহেশতখানায় সেই মিনিমাম ওয়েজ কনসেপ্টটাও নেই। ইন্ডাস্ট্রি ভেদে পুরাপুরি ভিন্ন ভিন্ন ন্যূনতম মাসিক বেতন নামে একটা জিনিস ডিফাইন করা আছে, যেমন চা-বাগান তিন হাজার টাকা, গার্মেন্টস পাঁচ হাজার, চিংড়ির ঘের সাড়ে ছয়, সাধারণ কারখানা দশ হাজারের কাছাকাছি। মানে পুরো ব্যাপারটা কোন মাত্রার হাস্যকর হতে পারে! চা শ্রমিক কি সাধারণ শ্রমিকের চেয়ে কম খাবে? নাকি, কম হাগবে? চা শ্রমিকরা কি অন্যদের তুলনায় সাইজে অর্ধেক? নাকি, তিন ভাগের এক ভাগ?
এই ‌অসভ্যতা চলে আসছে দেশের রাজনীতির হর্তাকর্তা, ধান্দাবাজ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, প্রশাসন আর সাংবাদিক/ বুদ্ধিজীবী টাইপের ছাগলের তৃতীয় সন্তানদের প্রত্যক্ষ নষ্টামিতে।
 
২. ইস্পাহানির মির্জা ইস্পাহানি, স্কয়ারের স্যামসন এইচ চৌধুরী, ট্রান্সকমের লতিফুর রহমান এবং ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদ, বাংলাদেশের শিল্প ও বানিজ্য পরিমন্ডলে এঁরা একেকজন প্রবাদপুরুষ। বাংলাদেশের 'এগিয়ে যাওয়া' নিয়ে এঁদের অবদান, এঁরা নিজেরাই যে একেকটা বিশাল প্রতিষ্ঠান, ব্যাক্তিপর্যায়েও যে এঁরা কত মহান ও বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই সব গুণগানসম্বলিত অসংখ্য লেখা এদেশের পত্র-পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া যাবে, অসংখ্য বক্তব্য এবং আলোচনাও দেশের টিভি অনুষ্ঠানের আর্কাইভ আর ইউটিউবে দেখা যাবে।
 
এই যে এতো ভুরিভুরি প্রসংশায় নন্দিত এই 'মহাপুরুষেরা', এঁদের এই চারটি প্রতিষ্ঠানই (ইস্পাহানী, স্কয়ার, ট্রান্সকম আর ব্র্যাক) নাকি বাংলাদেশের চা-বাগানগুলোর ব্যবসার মূল শেয়ারের অংশীদার। এই মহাপুরুষদের প্রতিষ্ঠানগুলোই দশকের-পর-দশক ধরে জীবনধারনের জন্য ন্যুনতম প্রয়োজন যে বেতন (মিনিমাম ওয়েজ), তার দশ ভাগের এক ভাগ বা তারও কম বেতন দিয়ে চা-শ্রমিকদের জুলুম করে আসছে, ক্রীতদাসের মতো ট্রিট করে আসছে (একটা উদাহরণ, দুপুরে মরিচডলা ভয়ংকর ঝাল ভাত খাওয়ায় যাতে অপরাহ্ন শিফটে শ্রমিকদের ঘুম না আসে)। বাংলাদেশে 'মহাপুরুষ' আখ্যা পেতে হলে আপনাকে কী করতে হবে, ক্লিয়ার তো?
 
৩. এই নষ্টচক্রকে সত্যি-সত্যি একটা শিক্ষা দেবার সময় এসেছে। আগামী দুসপ্তাহ চা খাওয়া বা চা-পাতা কেনা বন্ধ করে আমরা সাধারণ জনগণ কি এই নষ্টচক্রকে একটা অশনি সংকেত পাঠাতে পারি না?"
লেখক: Muquit Mohammad (https://www.facebook.com/muquit)
 
*আমি এমন অসাধারণ সাক্ষাৎকার আর দেখিনি:


 
সহায়ক লিংক:
১: কাল-নটেশ, কালবৈশাখী এক লেখক: https://www.ali-mahmed.com/2017/11/blog-post_30.html

No comments: