লেখক: Rohit Hasan Kislu
"লালন ফকিরের নামে ২০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা হয়েছে। তার অপরাধ গুরুতর! তিনি নাকি বন্যপ্রাণীর অধিকার হরণ করে একটা গান লিখেছেন! এখন এই গান শুনে সাধারণ মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়ে বন্যপ্রাণীর অধিকার হরণ করতে পারে! তাই এই ক্ষতিপূরণ মামলা!
কর্তৃপক্ষ ধমকে উঠলেন, 'আমাদের কী বেকুব বলে মনে হয়? আমরা কী ঘাস খাই? অচিন পাখি বলতে আপনি বনের সব পাখিকে বুঝিয়েছেন, বণ্য প্রাণী! অনেক পাখি তো তাই আলাদা করে নাম বলতে পারেন নাই! আপনি গানে গানে বলেছেন, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়! তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি দিতাম পাখির পায়! হেয়াট ইস দিস লালন সাহেব! আপনার গান বলছে, আপনি বনের সব পাখিকে খাঁচায় বন্দী করবেন! দুই চাইরটা যাও পালাতে পারবে তাদেরও ধরে মন বেড়ি পরিয়ে রাখবেন'!
লালন ফকির কাচুমাচু হয়ে বললেন, 'জনাব, এই মন বেড়ি সেই মন বেড়ি নয়! এই মন বেড়ি হচ্ছে...'।
কর্তৃপক্ষের ধমকে লালন ফকির কথা শেষ করতে পারলেন না! কর্তৃপক্ষ এবার বললেন, 'আপনার কী মনে হয় আমার মাথা ঘিলু বলে কিছু নেই? জানেন প্রায় ৫০ লক্ষ এমসিকিউ প্রশ্ন উত্তর মুখস্থ করে আমি এই পদে বসেছি!
লালন ফকির চুপ করে রইলেন! কর্তৃপক্ষ ধমকের সুরে বলেই চললেন, 'মন বেড়ি খুব ভয়ংকর জিনিস! আপনি কোমল-কোমল এই ছোট-ছোট পাখির পায় মন আ মিন একমন ওজনের বেড়ি পরাতে চান! হোয়াট ইস দিস লালন সাহেব?
লালন ফকির বুঝে গেলেন, এই মহানের সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই! লালন নতমস্তকে বললেন, 'তাহলে এখন কী করবো, জনাব? গান তো লিখেই ফেলেছি! আর আমার কাছে ২০ কোটি টাকা দূরের কথা এই একতারা এই এক বস্ত্র ব্যতীত তো কিছুই নেই'!
কর্তৃপক্ষ নামের জিনিসটা আসলে এতটা খারাপ ছিল না! লালনের অসহায়ত্ব দেখে তার গলার স্বর খানিকটা নরম হলো! কর্তৃপক্ষ বললেন, 'গানটার অচিন পাখি এই শব্দটা ফেলে দিতে হবে! বন্যপ্রাণী নিয়ে এই ধরণের গান লেখা যাবে না'!
লালন বললেন, 'তাহলে কী নিয়ে গান লিখবো'?
কর্তৃপক্ষ বললেন, 'কাউয়া, না কাউয়া না। মুরগি নিয়ে লিখেন! মুরগি গৃহপালিত পাখি! মুরগী নিয়ে লিখলে কোনো সমস্যা নেই!
লালন ফকির গানটা নতুন করে লিখলেন:
খো-পে-র ভিতর মুর-গি আমারকে-ম-নে আসে যায়তারে ধরতে পারলে রোস্ট করেখেতাম নিরালায়... কেমনে আসে যায়...এ-এ-এ।
না। ভাগ্যিস, এমন জুলুম লালনের উপরে হয়নি। কারণ এই সমস্ত সার্কাস পার্টি লালনের সময় ছিলো না। আমরা আসলেই সৌভাগ্যবান। নয়তো আজ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায় গানটার বদলে শুনতে হতো, খোপের ভিতর মুরগী আমার কেমনে আসে যায়!"
লেখক-Rohit Hasan Kislu (লেখকের লিখিত অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)
*সদয় অবগতি: আগাম বলে রাখি। এই লেখাটির সঙ্গে বণ্য প্রাণির 'বণ্য অধিকার সংস্থার' ২০ কোটি টাকার মামলার কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। এবং ভুল বোঝাবুঝির অবকাশও নেই। হাওয়ার বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে এটা লেখা না এবং লেখা প্রকাশের দায়ে আমাদের বিরুদ্ধে 'বণ্য সংস্থার' বণ্য ২০ কোটি দূরের কথা বণ্য ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা করলেও লেখকের কথা জানি না কিন্তু আমি বেচারা দেব কোথা থেকে! মানে এই টাকা আমার কাছ থেকে আদায় হবে কেমন করে? অবশ্য বণ্য মার্কেটে আমার ফুসফুস, লিভার, কিডনি, চোখ, এই সমস্ত অর্গান পার্টস-বাই পার্টস বিক্রি করে অল্প-কিছু টাকা আদায়ের একটা চেষ্টা করা যেতে পারে। যতটা আদায় হল আর কী...!
No comments:
Post a Comment