'আফগানিস্তানে একচুয়ালি কী হচ্ছে, এটা আপনিও চোখে দেখছেন না, আমিও দেখছিনা, শুধু মিডিয়ার মাধ্যমে খন্ডচিত্র আমাদের কাছে যেটুকু আসে তাই নিয়ে আমাদের ধারণা।'
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
'আফগানিস্তানে একচুয়ালি কী হচ্ছে, এটা আপনিও চোখে দেখছেন না, আমিও দেখছিনা, শুধু মিডিয়ার মাধ্যমে খন্ডচিত্র আমাদের কাছে যেটুকু আসে তাই নিয়ে আমাদের ধারণা।'
এই খবরটা আপাতত দৃষ্টিতে খুবই সাধারণ মনে হবে। কারণ এটা তো এখন হরহামেশা হচ্ছে। আওয়ামীলীগের লোকজনকে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হচ্ছে। এমনিতে অনেক মামলা বা মামলার মেরিট নিয়ে আমরা বিরক্ত [১]!
কিন্তু, এই যে ডা. আবু সাইদকে আজ আমরা এই অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি অনেকে বলেন আন্দোলনের সময় ডা. সাঈদ আহতদের চিকিৎসা দেননি! কেবল এমন না, তিনি আপ্রাণ চেষ্টাও করেছেন আহতরা যেন অন্যত্রও চিকিৎসা নিতে না-পারে। এ সত্য।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডা. সাঈদের নিজের মেডিকেল কলেজ আছে বিধায় তিনি এখানকার মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কঠিন ভাষায় নিবৃতও করেছেন যে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে কেউ কোন প্রকার সম্পৃক্ত হলে তাকে এই মেডিকেল কলেজে পড়তে দেওয়া হবে না।
যাই হোক, এটা হালের কথা। এই সবই ডা. সাঈদের বর্তমান কর্মকান্ড। কালে-কালে তিনি মহিরুহ হয়ে উঠেছেন। একজন আবাসিক চিকিৎসক থেকে হয়েছিলেন সিভিল সার্জন। এরপর একটা মেডিকেল কলেজে গড়ে তুলেছেন। হাজার-হাজার ভাবী চিকিৎসকের মা-বাপ। চিকিৎসক সমিতির নেতা, ভূতপূর্ব রাজনৈতিক দলের পান্ডা। কিন্তু আমি ২০২৪ সালের কথা বলছি না, বলছি ২০০৪ সালের কথা। তখন ডা. সাঈদ এই ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই একজন চিকিৎসক ছিলেন, আরএমও বা আবাসিক চিকিৎসক।
বাচ্চাটার নাম হাইড করে দেওয়া হলো। |
ওই ছোট্ট বাচ্চাটার বাবার চোখের জল মিশে গেল নর্দমায়-তিতাস নদীতে। এই কান্না চোখে দেখা যায় না, অসহ্য একটা দৃশ্য ছিল [২]। কিন্তু অক্ষমতা ব্যতীত তখন করার কিছুই ছিল না। আদালত কাগজ -ডকুমেন্ট খোঁজে। সেই কাগজই হয়ে গিয়েছিল কলাপাতা- আদালতে মামলা খারিজ!
ওই বাবাটা একটা বাচ্চার মত কাঁদতে-কাঁদতে বলছিলেন, 'আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম-আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম'। তখন যে কী অসহায়ই না লাগছিল। আমি যেন এক নগ্ন মানুষ! ২০ বছর পূর্বে এখনকার মত এতটা পচে যাইনি বলেই হয়তো তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছিল!
এই ডা. সাইদদের মত কিছু পশুর কারণে আইন চলে এঁকেবেঁকে। তো, এই করে করে ডা. সাঈদ তার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। কী ক্ষমতার দবদবা! কিন্তু একটু চোখ বন্ধ করলে আমার কেবল মনে হতো যেন একটা বাচ্চার সতীত্বের উপর দাঁড়িয়ে আছে গোটা মেডিকেল কলেজটা!
অনেকে বলবেন আজ এটা লেখার কী মানে? আহা, প্রকৃতির শোধ বলে কথা, ফিরে আসে বারবার। চোখ ভরে দেখি কেবল! প্রকৃতি, সে তো আর আমাদের মত অধৈর্য না! এরিমধ্যে চলে গেছে ২০ বছর কিন্তু তাতে তার কী আসে যায়। তার অপেক্ষা করতে কোন ক্লান্তি নেই। ডা. সাঈদ নামের মানুষ-গাছটাকে বড় হয়ে একটা মহিরুহ হতে দিয়েছে, তারপর ...।
সহায়ক সূত্র:
আইনজীবী জেড আই খান পান্না সফল হননি, হলে সর্বনাশ হয়ে যেত! তিনি খুন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ভিকটিম বেঁচে গেছে! নইলে আবারও সর্বনাশ হয়ে যেত।
আইনজীবী পান্নার বিরুদ্ধে 'হত্যাচেষ্টার মামলা' হয়েছে। ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামের একজনকে গুলি এবং মারধর শুরু করেন ১৮০ জন দুষ্কৃতিকারী। অবশ্য এরমধ্যে কে গুলি করেছেন আর কে মারধরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা এখনও জানা যায়নি! ক্রমশ জানা যাবে। তদন্তসাপেক্ষে পরে এটাও হয়তো প্রমাণিত হবে যে ১৮০ জন একসঙ্গে গুলি করেননি! করলে তো আর আহাদুল বেঁচে থাকতেন না। ১৮০টা গুলি খাওয়ার পর এই জগতে কে বেঁচেছে!
তো এই ১৮০ জন আসামীর মধ্যে জেড আই খান পান্না আছেন ৯৪ নম্বরে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কারণ এই ভদ্রলোকের আছে অকল্পনীয় সংগ্রামী এক জীবন। তিনি যে ৭১ সালে লড়েছেন কেবল তাই না তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করে জেলও খেটেছেন। কর্নেল তাহেরের সঙ্গে জেলে ছিলেন [১]। এমন একজন মানুষ কোন-একটা হত্যা চেষ্টায় সরাসরি গুলি করেননি এটা আমি মানতে পারছি না। তাঁকে ১ নং আসামী দেওয়াটাই সমীচীন ছিল।
মামলাটি করেছেন আহাদুল ইসলামের বাবা মো. বাকের। এই বিষয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাউদ হায়দার বলেন:
"আহতের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন, আমরা মামলা নিয়েছি। মামলাটি তদন্ত করে দেখা হবে যে এর সত্যতা রয়েছে কি না।" (ডেইলি স্টার, অক্টোবর ২০, ২০২৪)
আরেকটা কথা। মামলা বাদীও কিন্তু মারাত্মক চৌকশ একজন মানুষ! এই মামলায় এক দুই জন না, ১৮০ জনকে আসামি করেছেন! এবং জেড আই খান পান্না, বিজিবির বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এই সমস্ত নাম ঠিক-ঠিক মনে করে মামলাটা করেছেন। এ এক বিস্ময়, মহা বিস্ময়!
যাই হোক, এখন জানলাম বাদী পান্না সাহেবের নাম 'ভুলে-ভালে' দিয়েছেন বলে প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তাতে এখন আর কিছু যায় আসে না! আমাদের মত আমজনতার লাউ-কদুর পার্থক্য না-জানার কারণ নেই, নিয়মিত বাজারে যেতে হয় যে।
এভাবে আসলে কফিনে পেরেক ঠোকা হয়েই যায়। এই সব করে-করে পুলিশকে আবারও শেখানো হচ্ছে কেমন করে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে কায়দা মত নাম ঢুকিয়ে দিতে হয়। বিচারক মহোদয়দেরও ভাল করে শেখানো হচ্ছে কাকে জামিন দেওয়া যাবে, কাকে দেওয়া যাবে না। কোন মামলার মেরিট আছে কোন মামলার নাই!
ভাল, ভাল তো! 'পরিবর্তনের হাওয়া' উড়িয় যায় দমকা হাওয়ায়। বিচারক মানিককে দেওয়া হয় ৫৪ ধারার মামলা [২], সাকিবকে দেওয়া হয় হত্যা মামলা। কী আজব!
ধরে নিলাম, মানিক, সাকিবদের মত পাজিদেরকে শায়েস্তা করা প্রয়োজন, তাই বলে এই সমস্ত মামলা! মানিকের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, ১৪ লাখ টাকা সরকারী বাড়ি ভাড়া না-দেওয়া, মানি লন্ডারিং, টক-শোতে রাজাকারের বাচ্চা বলা এমন কত মামলাই তো দেওয়া সম্ভব। আর কিছু না-পেলে বিনা অনুমতিতে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছেন যেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তেমনি সাকিবকে ধরার আর কী কোন উপায় নেই? জুয়ার সঙ্গে জড়িত থাকা। শুনেছিলাম কুমিরের খামার চালাতো। তা কুমিরকে ঠিক মত খেতে দেয় কিনা, নাকি কুমিরকে মুড়ি খাইয়ে দিন পার করাচ্ছে। বা সাকিব আমেরিকায় বাড়ি কিনেছে। ভাল কথা, অতি উত্তম! তা বাংলাদেশ ব্যাংক কী টাকা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে? এই অনুমতিপত্র আমরা দেখতে চাই।
আফসোস, বড়ই আফসোস! শত বছরে এমন একটা সুযোগ আসে। শেখ হাসিনা যেভাবে জাঁকিয়ে বসেছিল আমার তো মনে হয় না কেউ এই কথাটা বিশ্বাস করত স্বাভাবিক মৃত্যু ব্যতীত তাকে এভাবে হটিয়ে দেওয়া সম্ভব। অন্তত আগস্টের ৫ তারিখের পূর্বে। অথচ আমরা কী অবলীলায়ই না এই অসাধারণ সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য মুখিয়ে আছি।
আমরা আসলে ঠিক কী যে চাচ্ছি উপরওয়ালাও জানেন কিনা কে জানে! আওয়ামীলীগ ওরফে হাসিনা দীর্ঘ সময় ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। কোথাও-না-কোথাও, কেউ-না-কেউ, কোন-না-কোন প্রকারে ক্ষমতার বলয়ের স্পর্শে এসেছে। এখন সবাইকে হরেদরে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করলে তো ভারী মুশকিল! হাসিনার সময়ে যে-সমস্ত গাছ জন্ম নিয়েছে সব কেটে ফেলার পূর্বে এত কুড়ালের ব্যবস্থা করা যেমন প্রয়োজন তেমনি কেটে ফেলা গাছ রাখার জায়গাও...।
আহারে-আহারে, এই সমস্ত বাচ্চাদের বলিদান কী অবলীলায়ই না উবে যাচ্ছে! এই বাচ্চাটার একটা হাত নেই:
এক হাত গেছে তো তো কী হয়েছে দেশ চাইলে আরেক হাত দিবো।
এমন কতশত গল্প! এই ছেলেটার কথা একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো। সেই সময়টার কথা। যখন ডাক্তার তাকে অবচেতন করার ওষুধ না-দিয়ে পায়ের হাড়ে ড্রিল করছিল:
* অন্তবর্তীকালীন সরকার এখন জানাচ্ছেন এই মামলার পেছনে তাঁদের কারও হাত নেই। জেনে ভাল লাগছে। ভাল লাগার শেষ থাকবে না এই মামলায় যাদের হাত আছে তাদের খুঁজে বের করলে। যে ওসি সাহেব মামলাটা নিয়েছেন তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান, এখুনি...।
সহায়ক সূত্র:
সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ধামড়া-ধামড়া বুদ্ধিমান মানুষদেরকে স্রেফ হাফ-প্যান্টপরা খোকা বানিয়ে দিচ্ছে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি কোন খোকা না-আবার 'ইয়েখানা' থেকে পকেটে করে খানিকটা ইয়ে নিয়ে এসে আমাদেরকে বলে বসে: দেখবা, এক খাবলা নিয়া আসলাম।
আরজ আলী মাতুব্বরের এই বইটি অনেক আগে পড়েছিলাম। ওখানে দেবরাজ ইন্দ্রকে নিয়ে একটা প্রসঙ্গ আছে। এটা এখানেই আমি প্রথম জানতে পাই! কোন-এক কারণে যখন বইটা আবারও পড়ছি তখন একটা ছোট্ট খটকা লেগেছে তিনি যে এটার উল্লেখ করলেন এর সূত্র কি? অন্য প্রসঙ্গে দিলেও তিনি এটায় কোন প্রকার রেফারেন্স দেননি! দেয়াটা অবশ্য প্রয়োজন ছিল।
ওয়ালিদ ইসলাম |
হেনরিক ইবসেনের 'রোজমারশোম'-এ অতি অল্প চরিত্র:
1. JOHANNES ROSMER, owner of Rosmersholm, a retired minister.
2. REBECCA WEST, companion of the late Mrs. Rosmer and still living at Rosmersholm.
3. RECTOR KROLL, ROSMER's brother-in-law.
4. ULRIC BRENDEL.
5. PETER MORTENSGÅRD.
6. MRS. HELSETH, housekeeper at Rosmersholm.
লেখক: Badsha Khaled Apu https://www.facebook.com/khaled.h.apu (লেখকের লিখিত অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)
"'ইউ-এস বাংলার' চেয়ে বিমানের টিকেট ছয় হাজার টাকা বেশী দিয়ে কেনার পর যখন ফ্লাইট পাঁচ ঘন্টা ডিলে হয় এবং চোখের সামনে দিয়ে 'ইউ-এস বাংলার' যাত্রীরা ঢং-ঢাং করতে করতে চলে যায় (তারা স্বাভাবিক ভাবেই যাচ্ছিল, আমার কাছে ঢং ঢাং লাগছিল আর কি!) তখন মেজাজ যতটুকু খারাপ হবার কথা, আমার মেজাজ ঠিক ততটুকুই খারাপ হয়েছে।
মামুনুর রশীদ 'রুচির দুর্ভিক্ষ' নিয়ে যে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা চালু ভাষায় 'ভাইরাল' হয়ে গেছে। এই যে ভাইরাল জিনিসটা বাজারে চালু হলো এটাও এক প্রকারের রুচির দুর্ভিক্ষ!
এ সত্য, আমার সমস্ত জীবনে অন-লাইন মিডিয়ার মিলিয়ন-মিলিয়ন শব্দের মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়ায় লক্ষ-লক্ষ শব্দ ছাপা হয়েছে কিন্তু এখনও আমি নিজেকে লেখক বলে দাবী করি না। কারণ যে জিনিস আমার না তা আমি দাবী করব কেমন করে! কে লেখক কে লেখক না এটা ঠিক করেন পাঠক। পাঠককে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নাই কারণ একজন পরিণত পাঠক তাঁর গ্রে-মেটার ফ্লাওয়ার ভাসে রেখে কোন লেখকের লেখা পাঠ করতে বসেন না। এরা একেকটা ক্ষুরধার ব্রেন...!