Search

Saturday, November 2, 2024

ডিয়ার, জামাতে আমির, সমীপেষু...!

লেখক: Farjana Mahbuba (https://www.facebook.com/Ms.SunshineInTheRain)
"আমীরে জামাত মেয়েদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে যমুনা টিভিকে বলেছেন:
'আফগানিস্তানে একচুয়ালি কী হচ্ছে, এটা আপনিও চোখে দেখছেন না, আমিও দেখছিনা, শুধু মিডিয়ার মাধ্যমে খন্ডচিত্র আমাদের কাছে যেটুকু আসে তাই নিয়ে আমাদের ধারণা।'
মিডিয়া যে একটা চরম হিপোক্র্যাট এবং সে যে সিলেক্টিভ পিকচার দেখায় মানুষকে, এখাতে আমীরে জামাতের কথায় আমি ১০০% একমত।
এমনকি এমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এ ব্যাপারে একমত।
ট্রাম্পের যা পছন্দ হয় না, সবকিছুতে সে নির্দ্বিধায় বলে দেয় 'মিডিয়া ফটোশপ করছে'।
ট্রাম্পের সমর্থকদেরকে আপনি ট্রাম্পের কোনো অপ্রীতিকর কাজ/ভিডিও/ অডিও যত সলিড এভিডেন্সই দেখান, ওরা দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আপনাকে নির্দ্বিধায় বলে দিবে, এগুলো মিডিয়ার বানানো।
কথা কিন্তু মিথ্যা না।
 
মিডিয়া যে কতটা ভয়ানক হিপোক্র্যাট হতে পারে, বিশেষ করে মুসলিমদের নিউজের ক্ষেত্রে তা আমরা দিব্যচোখে প্রতিদিন দেখি প্যালেস্টাইন ইস্যুতে। কিন্তু আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়।
মিডিয়া আপনাকে খন্ডচিত্র দেখাতে পারে, মিডিয়া আপনাকে মিথ্যাকে সত্য করে দেখাতে পারে; কিন্তু বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে যে আফগান কমিউনিটি, আফগানিস্তানের বাইরে এই যে আফগান এক্টিভিষ্টসরা, এরাও কী সবাই খন্ডচিত্র দেখাচ্ছে?
অথবা তালেবানরা যে ল' জারী করেছে, '৩১ জুলাই ২০২৪'- 'ক্বানুন আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার'।
 
যার আর্টিক্যাল ১৩-তে যে 'আহক্বামে হিজাব এ জান' [*]-এ মেয়েদেরকে কীভাবে তাদের একদম আগাগোড়া ঢেকে পর্দা করতে হবে। শুধু তাই-ই না, মাহরাম ছাড়া সে পাবলিক স্পেইসেই যেতে পারবে ন! এই ল'-এর কপি যদি আমীরে জামাত চান, আমি উনাকে পাঠাতে পারি।দুনিয়া জুড়ে মেয়েদের অবস্থা নিয়ে আগ্রহ থেকেই আমি আফগানিস্তানের সরকারী প্রজ্ঞাপন থেকেই এই আইনের কপি কালেকশান করেছি। ট্রাম্পও মিডিয়ার হিপোক্র্যাসিকে নিজের সুবিধার্থে খেলে।
আমীরে জামাতও মেয়েদের প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে সেইম খেলা খেললেন। এক বারের জন্যও ভুলেও তিনি বললেন না- যদি পাবলিক স্পেইস থেকে মেয়েদেরকে আসলেই (ধরে নিলাম উনি এই আইনের কপিকেও বিশ্বাস করেন না, তারপরও হাইপোথ্যাটিক্যালি) এমন কন্ডিশনাল করে দেয়া হয়, ঘর থেকে বের হতেই তার মাহরাম লাগে, তাহলে তা যে জামাত করবে না বা জামাত যে এতে নিন্দা জানায় এই কথাটা কিন্তু তিনি বলেন নাই!
 
কীভাবে বলবেন? জামাতের ভিতরে মেয়ে/ মহিলাদের মোবিলিটি লিমিট কতটুকু, তাতো আমরা খুব ভালো করেই জানি। সোশ্যাল মোবিলিটির অনুমতি মেয়েদেরকে ঠিক ততটুকুই জামাত দেয় যতটুকু দিলে সে মেয়েদের মধ্যে সংগঠনের মিটিঙে যেতে পারবে; মেয়েদের মধ্যে দাওয়াতী কাজ করতে পারবে, বায়তুলমাল তুলতে পারবে।
আর ক্যারিয়ার?!
জামাতের ভিতরে মেয়েদের ক্যারিয়ারকে কীভাবে 'দ্বীনের জন্য কুরবান' করে দেয়া হয়, তার কাহিনী যদি টান দেই তাহলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। নেত্রী থেকে কর্মী পর্যন্ত কত দেখলাম, বেহিসাবি। আমীরে জামাত নুসাইবা রাঃ এর উদাহরণ দিয়েছেন।
 
যুদ্ধে রাসুল (সা.)-কে নুসাইবা (রা.) রক্ষা করতে গিয়ে তীরের আঘাত শরীর পেতে নিয়েছিলেন। সেই তীরের আঘাত নেয়ার জন্য নুসাইবা (রা.) সেখানে রাসুল (সা.) এর ফিজিক্যাল প্রক্সিমিটিতে উপস্থিত ছিলেন।
হঠাৎ করে উড়তে-উড়তে ঠিক তীরের আঘাতের সময় এসে তীরের আঘাত তিনি শরীর পেতে নেননি, তা নেয়ার জন্য ওখানে উনার উপস্থিতি ছিলো, এ নিশ্চিত।
শুধু নুসাইবা (রা.) একলাই না, আরো মেয়ে সাহাবারা ছিলেন। রাসুল (সা.) অলমোষ্ট যত পাবলিক স্পেইসে ছিলেন, মেয়ে/ মহিলারাও একই পাবলিক স্পেইসে ছিলেন। তারা অদৃশ্য ছিলেন না।
 
জামাতের নেতাদের সঙ্গে কয়জনের ওয়াইফদেরকে নেতাদের সাথে মানুষ পাবলিক স্পেইসে দেখে?!
মিটিং-এর কথা নাহয় বাদ দিলাম। একদম সাধারণ যাপিত জীবনে, কোথাও, লাইক এনিহোয়ার এট অল, কোথাও দেখেছেন কেউ, জামাত লিডার মানুষের সাথে কথা বলছেন, বা কোথাও আছেন, উনার পাশে উনার ওয়াইফ আছেন? বা উনার মেয়ে আছেন? বা উনার আশেপাশে কোন মেয়ে আছেন কোথাও?
(একমাত্র হাসিনা খালেদার সাথে মিটিং এর ছবি ছাড়া!)
 
যুদ্ধে যেখানে মেয়েদের উপস্থিতি ছিলো রাসুল (সা.) এর সময়ে, যেখানে যুদ্ধে হারার সম্ভাবনা ছিলো, এবং হারলে তখনকার সেই সময়ে মেয়েদেরকে দাসী করে নিয়ে যাওয়া হত। নাকি জামাতের লোকজনের মনে হয় সেই দাসী হিসেবে বন্দী হওয়ার যে রিষ্ক, বাংলাদেশে জামাতে ইসলামীর নেতাদের সাথে তাদের ওয়াইফরা যদি পাবলিক স্পেইসে আসেন বা মহিলা জামাত/ ছাত্রী সংস্থার মেয়ে/মহিলারা পাবলিক স্পেইসে আসলে তার চেয়ে বেশী রিষ্ক?
 
ওহ, স্যরি, উনারা রিস্ক শব্দটা বলেন না, উনারা বলেন 'ফিতনার সম্ভাবনা'।
আমার প্রশ্ন, তারমানে আল্লাহ্‌র' রাসুল (সা.) এর সময়ে যে ফিতনার সম্ভাবনা ছিলো, যে ভয়ংকর অবস্থা ছিলো, জামাতের দৃষ্টিতে কি এখনকার অবস্থা তার চেয়েও ভয়ংকর?
আমি তাই আমীরে জামাতের সুরেই সুর মিলিয়ে বলতে চাই, মানব জীবনের সবচাইতে কঠিন কাজের নাম হচ্ছে যুদ্ধ, সেই ময়দানেও যখন মহিলারা অংশগ্রহণ করেছেন। তাহলে সম্মানিত আমীরে জামাত, কেনো আপনাদের মেয়ে-মহিলাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধের ময়দানে না দেখুক, অন্তত পাবলিক স্পেইসে কোন উপস্থিতিতেই কেনো দেখে না?
কই, আপনাদের এই যে লক্ষ-লক্ষ মেয়ে কর্মী, নেত্রী- তাদের পাবলিক মিটিং, পাবলিক উপস্থিতি এই সব কিছুই তো দেখি না আমরা। তারা কী ভূতের মত! অদৃশ্য? জ্বীন!
 
ঠিক আফগানিস্তানের এই যে নতুন আইন এসেছে 'আহক্বামে হিজাবে জান', এটাই কি আপনাদের দলের চর্চা না? পার্থক্য শুধু এখনো যেহেতু ক্ষমতা পাচ্ছেন না আপনারা, তাই নেক্বাব পরে মেয়েদের মধ্যে দাওয়াতী কাজ আর মেয়েদের মধ্যে মিটিং-এ যাওয়া এলাউ করেন।
যে মুহুর্তে আপনারা ক্ষমতা পেয়ে যাবেন, সেই মুহুর্তে যখন দেখবেন এখন তো 'দাওয়াতী কাজের'(!) প্রয়োজন শেষ, তখন আমরা কীভাবে বুঝবো যে আপনারাও তালেবানদের মতই একই স্টাইলে মেয়েদেরকে ঘরে ঠেলে দিবেন না?
 
রাসুল (সা.)-এর সময়ে মহিলারা ডাইরেক্ট পাবলিক স্পেইসে আল্লাহ'র রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করতে পারতেন যেখানে, বা আল্লাহ'র রাসুল (সা.)-কে প্রয়োজনে রাস্তায় থামিয়ে কথা বলতে পারতেন, মানুষের সামনে, পাবলিক স্পেইসে। আর আপনাদের দলের ভিতর?
জন্ম থেকেই তো দেখেছি! পর্দার আড়াল থেকেও মেয়ে/মহিলারা ভয়েস দিয়ে কথা বলতে পারেন না। কাগজে লিখে-লিখে পর্দার এই সাইড থেকে ছোট বাচ্চা দিয়ে ওই সাইডে পাঠায়! যেন ওরা বোবা! 
আপনাদের যে শূরার মিটিং হয়, আপনাদের মেইন পাওয়ার হাউজের মিটিং হলো পুরুষ রোকনদের শূরার মিটিং। যেখানে কোন মেয়ে বা মহিলার কোন ধরনের এক্সেস নাই।
তারপর আপনারা মহিলা জামাতের আলাদা দুধভাত শূরার মিটিং করেন। আলাদা-আলাদা!
সব আলাদা-আলাদা! যেনো মহিলাদের গলার আওয়াজটাও কেউ না শোনে। কই, আপনাদের যে এত হাজারে-হাজারে রুকন মহিলা জামাতের, অথবা ছাত্রী সংস্থার হাজারে-হাজারে নেত্রী, একজনও তো নেকাব পড়া ব্যতীত নাই! প্রত্যেকের চেহারা নেকাবে ঢাকা।
 
দলের ভেতর যা আপনারা এত কঠিনভাবে প্র্যাকটিস এবং মেইনটেইন করেন সেই আইডিয়লজিতেই তো দেশ চালাবেন ক্ষমতা পেলে, নাকি?
তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোন মেয়ে/ মহিলা যদি বাই-চান্স কোনোভাবে টপ ম্যানেজমেন্টে উঠেও যায়, আমি খুব সহজেই কল্পনা করতে পারছি:
বোর্ড মিটিং এর মাঝখানে একটা পর্দা ঝুলিয়ে দেবেন। পর্দার ওই সাইড থেকে ওই মহিলা কাগজে টুকরা-টুকরা করে নিজের মতামত লিখে দেবেন। হাত যেন দেখা না-যায়, তাই তিনি ওই কাগজের টুকরা একটা ঝুড়িতে বা কিছুতে দিয়ে সেই ঝুড়ি পর্দার নীচ দিয়ে ঠেলে দেবেন।
আপনি বলেছেন কাউকে কোনো কিছুতেই বাধ্য করা হবে না।আপনাদের দলের ভিতরেই কিন্তু নেকাব না-পরলে রোকন হতে পারে না বা নেকাব না-পরলে ছাত্রী সংস্থার সদস্যা হতে পারে না। এটা কোথাও কিন্তু আপনারা লিখে রাখেন নাই যে, 'নেকাব পড়া বাধ্যতামূলক'; কিন্তু ঠিকই নেকাব না-পরলে দলে সার্ভাইভ-ই করতে পারে না কেউ।
আপনার কথা যদি আমি বিশ্বাস করি; আপনি সত্য বলেছেন। কাউকে বাধ্য করা হবে না। কিন্তু সরকারী চাকরীতে, বেসরকারি পাওয়ার বেঞ্চে, উচ্চতর প্রশাসনিক পদ থেকে শুরু করে মেয়েদের মাদ্রাসার গেটের মেয়ে দারোয়ানের পদ পর্যন্ত- সব জায়গায় যখন অঘোষিতভাবে মানা হবে, নেকাব না-পরলে চাকরির এপ্লিকেশানই কনসিডার করা হবে না, তখন আসলেই কাউকে বাধ্য করার কী দরকার?
আপনাদের নিয়মগুলো 'ম্যাজিক ল্যাম্পের' মত। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। আপনারা বলবেন 'কুন্‌', সাথে সাথে 'ফায়াকুন্‌' হয়ে যাবে!
ম্যাজিক!"
 
*
এটা ১১৪ পৃষ্ঠার! সমস্যা মনে করলে ইংরাজিতে আর্টিকেল ১৩
  


-Farjana Mahbuba

Monday, October 28, 2024

প্রকৃতির প্রতিশোধ, ফিরে আসে বার বার!


এই খবরটা আপাতত দৃষ্টিতে খুবই সাধারণ মনে হবে। কারণ এটা তো এখন হরহামেশা হচ্ছে। আওয়ামীলীগের লোকজনকে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হচ্ছে। এমনিতে অনেক মামলা বা মামলার মেরিট নিয়ে আমরা বিরক্ত []!

কিন্তু, এই যে ডা. আবু সাইদকে আজ আমরা এই অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি অনেকে বলেন আন্দোলনের সময় ডা. সাঈদ আহতদের চিকিৎসা দেননি! কেবল এমন না, তিনি আপ্রাণ চেষ্টাও করেছেন আহতরা যেন অন্যত্রও চিকিৎসা নিতে না-পারে। এ সত্য।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডা. সাঈদের নিজের মেডিকেল কলেজ আছে বিধায় তিনি এখানকার মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কঠিন ভাষায় নিবৃতও করেছেন যে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে কেউ কোন প্রকার সম্পৃক্ত হলে তাকে এই মেডিকেল কলেজে পড়তে দেওয়া হবে না।

যাই হোক, এটা হালের কথা। এই সবই ডা. সাঈদের বর্তমান কর্মকান্ড। কালে-কালে তিনি মহিরুহ হয়ে উঠেছেন। একজন আবাসিক চিকিৎসক থেকে হয়েছিলেন সিভিল সার্জন। এরপর একটা মেডিকেল কলেজে গড়ে তুলেছেন। হাজার-হাজার ভাবী চিকিৎসকের মা-বাপ। চিকিৎসক সমিতির নেতা, ভূতপূর্ব রাজনৈতিক দলের পান্ডা। কিন্তু আমি ২০২৪ সালের কথা বলছি না, বলছি ২০০৪ সালের  কথা। তখন ডা. সাঈদ এই ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই একজন চিকিৎসক ছিলেন, আরএমও বা আবাসিক চিকিৎসক।

বাচ্চাটার নাম হাইড করে দেওয়া হলো।
২০০৪ সালের ছোট্ট, ৬ বছরের একটা ধর্ষিতা বাচ্চার রিপোর্ট এটা। এই ডা. আবু সাঈদ নোংরা কিছু কাগজের (যেটাকে আমরা টাকা হিসাবে চিনি) বিনিময়ে  অবলীলায় লিখে দেন, 'হাইমেন ইনট্যাক্ট', 'ইনজুরি এবসেন্ট', ব্লা-ব্লা। কেবল এই একটা ভূয়া রিপোর্টের কারণে কোর্টে বাচ্চাটার বাবার মামলা ডিসমিস হয়ে যায়!

ওই ছোট্ট বাচ্চাটার বাবার চোখের জল মিশে গেল নর্দমায়-তিতাস নদীতে। এই কান্না চোখে দেখা যায় না, অসহ্য একটা দৃশ্য ছিল []। কিন্তু অক্ষমতা ব্যতীত তখন করার কিছুই ছিল না। আদালত কাগজ -ডকুমেন্ট খোঁজে। সেই কাগজই হয়ে গিয়েছিল কলাপাতা- আদালতে মামলা খারিজ!

ওই বাবাটা একটা বাচ্চার মত কাঁদতে-কাঁদতে বলছিলেন, 'আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম-আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম'। তখন যে কী অসহায়ই না লাগছিল। আমি যেন এক নগ্ন মানুষ! ২০ বছর পূর্বে এখনকার মত এতটা পচে যাইনি বলেই হয়তো তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছিল!

এই ডা. সাইদদের মত কিছু পশুর কারণে আইন চলে এঁকেবেঁকে। তো, এই করে করে ডা. সাঈদ তার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। কী ক্ষমতার দবদবা! কিন্তু একটু চোখ বন্ধ করলে আমার কেবল মনে হতো যেন একটা বাচ্চার সতীত্বের উপর দাঁড়িয়ে আছে গোটা মেডিকেল কলেজটা!

অনেকে বলবেন আজ এটা লেখার কী মানে? আহা, প্রকৃতির শোধ বলে কথা, ফিরে আসে বারবার। চোখ ভরে দেখি কেবল! প্রকৃতি, সে তো আর আমাদের মত অধৈর্য না! এরিমধ্যে চলে গেছে ২০ বছর কিন্তু তাতে তার কী আসে যায়। তার অপেক্ষা করতে কোন ক্লান্তি নেই। ডা. সাঈদ নামের মানুষ-গাছটাকে বড় হয়ে একটা মহিরুহ হতে দিয়েছে, তারপর ...। 
    

সহায়ক সূত্র:

১. কফিনে পেরেক...: https://www.ali-mahmed.com/2024/10/blog-post.html
২. আমার ছায়া...: https://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_24.html

 

Tuesday, October 22, 2024

কফিনে পেরেক ঠোকা!

আইনজীবী জেড আই খান পান্না সফল হননি, হলে সর্বনাশ হয়ে যেত! তিনি খুন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ভিকটিম বেঁচে গেছে! নইলে আবারও সর্বনাশ হয়ে যেত।

আইনজীবী পান্নার বিরুদ্ধে 'হত্যাচেষ্টার মামলা' হয়েছে। ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামের একজনকে গুলি এবং মারধর শুরু করেন ১৮০ জন দুষ্কৃতিকারী। অবশ্য এরমধ্যে কে গুলি করেছেন আর কে মারধরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা এখনও জানা যায়নি! ক্রমশ জানা যাবে। তদন্তসাপেক্ষে পরে এটাও হয়তো প্রমাণিত হবে যে ১৮০ জন একসঙ্গে গুলি করেননি! করলে তো আর আহাদুল বেঁচে থাকতেন না। ১৮০টা গুলি খাওয়ার পর এই জগতে কে বেঁচেছে!

তো এই ১৮০ জন আসামীর মধ্যে  জেড আই খান পান্না আছেন ৯৪ নম্বরে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কারণ এই ভদ্রলোকের আছে অকল্পনীয় সংগ্রামী এক জীবন। তিনি যে ৭১ সালে লড়েছেন কেবল তাই না তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করে জেলও খেটেছেন। কর্নেল তাহেরের সঙ্গে জেলে ছিলেন []। এমন একজন মানুষ কোন-একটা হত্যা চেষ্টায় সরাসরি গুলি করেননি এটা আমি মানতে পারছি না।  তাঁকে ১ নং আসামী দেওয়াটাই সমীচীন ছিল।

মামলাটি করেছেন আহাদুল ইসলামের বাবা মো. বাকের। এই বিষয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাউদ হায়দার বলেন:

"আহতের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন, আমরা মামলা নিয়েছি। মামলাটি তদন্ত করে দেখা হবে যে এর সত্যতা রয়েছে কি না।" (ডেইলি স্টার, অক্টোবর ২০, ২০২৪)
ওসি সাহেব ভাল বলেছেন। আগে, অতীতকালে  ওসিরা যেমন করে বলতেন তিনি ঠিক তেমনই বলেছেন! তবে ওসি স্যারের কাছে ছোট্ট একটা বিষয় জানার ছিল। আমাদের পুলিশ স্যাররা কবে থেকে এমন দয়ালু হয়ে গেলেন! কেউ গেলেই দুম করে যে-কোনও মামলা নিয়ে নেন! এখন আমি যদি এই ওসি সাহেবের বিরুদ্ধে একটা মামলা দিতে যাই তাহলেও কী তিনি চট করে মামলাটা নিয়ে নেবেন?

আরেকটা কথা। মামলা বাদীও কিন্তু মারাত্মক চৌকশ একজন মানুষ! এই মামলায় এক দুই জন না, ১৮০ জনকে আসামি করেছেন! এবং জেড আই খান পান্না, বিজিবির বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এই সমস্ত নাম ঠিক-ঠিক মনে করে মামলাটা করেছেন। এ এক বিস্ময়, মহা বিস্ময়!

হাসিনাতন্ত্রের সামনে দেশের ক্রান্তিলগ্নে জেড আই খান পান্না নামের এই মানুষটা দাঁড়িয়ে ছিলেন সিনা টান করে।

যাই হোক, এখন জানলাম বাদী পান্না সাহেবের নাম 'ভুলে-ভালে' দিয়েছেন বলে প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তাতে এখন আর কিছু যায় আসে না! আমাদের মত আমজনতার লাউ-কদুর পার্থক্য না-জানার কারণ নেই, নিয়মিত বাজারে যেতে হয় যে।

এভাবে আসলে কফিনে পেরেক ঠোকা হয়েই যায়। এই সব করে-করে পুলিশকে আবারও শেখানো হচ্ছে কেমন করে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে কায়দা মত নাম ঢুকিয়ে দিতে হয়। বিচারক মহোদয়দেরও ভাল করে শেখানো হচ্ছে কাকে জামিন দেওয়া যাবে, কাকে দেওয়া যাবে না। কোন মামলার মেরিট আছে কোন মামলার নাই!

ভাল, ভাল তো! 'পরিবর্তনের হাওয়া' উড়িয় যায় দমকা হাওয়ায়। বিচারক মানিককে দেওয়া হয় ৫৪ ধারার মামলা [], সাকিবকে দেওয়া হয় হত্যা মামলা। কী আজব!

ধরে নিলাম, মানিক, সাকিবদের মত পাজিদেরকে শায়েস্তা করা প্রয়োজন, তাই বলে এই সমস্ত মামলা! মানিকের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, ১৪ লাখ টাকা সরকারী বাড়ি ভাড়া না-দেওয়া, মানি লন্ডারিং, টক-শোতে রাজাকারের বাচ্চা বলা এমন কত মামলাই তো দেওয়া সম্ভব। আর কিছু না-পেলে বিনা অনুমতিতে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছেন যেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তেমনি সাকিবকে ধরার আর কী কোন উপায় নেই? জুয়ার সঙ্গে জড়িত থাকা। শুনেছিলাম কুমিরের খামার চালাতো। তা কুমিরকে ঠিক মত খেতে দেয় কিনা, নাকি কুমিরকে মুড়ি খাইয়ে দিন পার করাচ্ছে। বা সাকিব আমেরিকায় বাড়ি কিনেছে। ভাল কথা, অতি উত্তম! তা বাংলাদেশ ব্যাংক কী টাকা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে? এই অনুমতিপত্র আমরা দেখতে চাই।

আফসোস, বড়ই আফসোস! শত বছরে এমন একটা সুযোগ আসে। শেখ হাসিনা যেভাবে জাঁকিয়ে বসেছিল আমার তো মনে হয় না কেউ এই কথাটা বিশ্বাস করত স্বাভাবিক মৃত্যু ব্যতীত তাকে এভাবে হটিয়ে দেওয়া সম্ভব। অন্তত আগস্টের ৫ তারিখের পূর্বে। অথচ আমরা কী অবলীলায়ই না এই অসাধারণ সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য মুখিয়ে আছি।

আমরা আসলে ঠিক কী যে চাচ্ছি উপরওয়ালাও জানেন কিনা কে জানে! আওয়ামীলীগ ওরফে হাসিনা দীর্ঘ  সময় ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। কোথাও-না-কোথাও, কেউ-না-কেউ, কোন-না-কোন প্রকারে ক্ষমতার বলয়ের স্পর্শে এসেছে। এখন সবাইকে হরেদরে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করলে তো ভারী মুশকিল! হাসিনার সময়ে যে-সমস্ত গাছ জন্ম নিয়েছে সব কেটে ফেলার পূর্বে এত কুড়ালের ব্যবস্থা করা যেমন প্রয়োজন তেমনি কেটে ফেলা গাছ রাখার জায়গাও...। 

আহারে-আহারে, এই সমস্ত বাচ্চাদের বলিদান কী অবলীলায়ই না উবে যাচ্ছে! এই বাচ্চাটার একটা হাত নেই:

চিকিৎসাধীন থাকার সময় এই বাচ্চাটার কথা শুনছিলাম। চোখের পলক না-ফেলে এ কী অবলীলায়ই না বলছিল:
এক হাত গেছে তো তো কী হয়েছে দেশ চাইলে আরেক হাত দিবো।

এমন কতশত গল্প! এই ছেলেটার কথা একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো। সেই সময়টার কথা। যখন ডাক্তার তাকে অবচেতন করার ওষুধ না-দিয়ে পায়ের হাড়ে ড্রিল করছিল: 


* অন্তবর্তীকালীন সরকার এখন জানাচ্ছেন এই মামলার পেছনে তাঁদের কারও হাত নেই। জেনে ভাল লাগছে। ভাল লাগার শেষ থাকবে না এই মামলায় যাদের হাত আছে তাদের খুঁজে বের করলে। যে ওসি সাহেব মামলাটা নিয়েছেন তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান, এখুনি...।

সহায়ক সূত্র:

১. কর্ণেল তাহেরের নিধনপর্ব: https://www.ali-mahmed.com/2013/05/blog-post_15.html
২. দেখা, ফিরে দেখা, ছাত্র আন্দোলন...: https://www.ali-mahmed.com/2024/07/blog-post_17.html
 

Sunday, September 15, 2024

আহারে প্রাণ!

লেখক: আসিফ বিন আনওয়ার (https://www.facebook.com/asif.anwar.7)
 
"একটা একতলা বন্ধ ঘর। সামনে লেখা ‘মরচুয়ারি’। তার পাশেই আরেকটা বিচ্ছিন্ন একতলা ছোট ঘরের সামনে মানুষ ঠেলাঠেলি করছে। মরচুয়ারি’র অফিস। তিন-চারজন আনসার সদস্য ভিড় সামলাচ্ছে। কোনরকমে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখি একটা সরু টেবিল সামনে নিয়ে একটা বেঞ্চে দু’-তিনজন কর্মচারী বসে আছেন।

Wednesday, September 4, 2024

গণভবন হোক গণমানুষের!

লেখক: Ridwan Anam (https://www.facebook.com/ridwan.anam)
 
"জুলাই-অগাস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের স্মৃতি চির অম্লান রাখতে একটা আন্তর্জাতিক মানের জাদুঘর গড়ে তোলা অবশ্যই প্রয়োজন। এবং সে জাদুঘর যদি শেখ হাসিনার ১৬ বছরের ভয়াবহ অপশাসনের কেন্দ্রবিন্দু, দুর্ভেদ্য গণভবনে হয়, তার চেয়ে সুন্দর পোয়েটিক জাস্টিস আর হয় না।

Wednesday, July 17, 2024

দেখা, ফিরে দেখা: ছাত্র আন্দোলন- এ এক অভূতপূর্ব বিস্ময়!

আবু সাঈদের শহীদ হওয়ার ভিডিও ক্লিপটা আমি এখানে দিতে চাই না। কেবল কৌশিক সরকারের এই স্কেচ এখানে শেয়ার করছি। তাঁর মৃত্যু নিয়ে আমার মত মানুষের বলাটা খানিকটা জটিলতায় ফেলে দেয়। কারণ, আমি যা দেখেছি, লক্ষ-লক্ষ মানুষ লাইভে যা দেখেছে এর পরও এ নিয়ে বিতর্ক থাকলে আমার এই চোখ আমার না...!

Friday, July 12, 2024

এক কাপ চায়ে দু-কাপ চিনি!

সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ধামড়া-ধামড়া বুদ্ধিমান মানুষদেরকে স্রেফ হাফ-প্যান্টপরা খোকা বানিয়ে দিচ্ছে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি কোন খোকা না-আবার 'ইয়েখানা' থেকে পকেটে করে খানিকটা ইয়ে নিয়ে এসে আমাদেরকে বলে বসে: দেখবা, এক খাবলা নিয়া আসলাম।

Wednesday, July 3, 2024

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

লেখক: Najmul Albab Opu
"চল্লিশ পেরুলে বয়েস পরস্পরের আলাপের বিষয় হয় ওষুধের তালিকা। কোন কবি বলেছিলেন এই কথা? কোন কবিতায় আছে এই কথা? নাকি কোন গদ্যে?
কথাটা মিথ্যে নয়। নির্দিষ্ট বয়েস পেরুলে পরে বন্ধুদের আলাপেও ঢুকে পড়ে সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যবার্তা। আমরা সিনেমা নিয়া কথা বলি। তত্ত্ব বা তথ্য থাকে না সেখানে। নিজেদের মধ্যে কার হৃদয়ে ছুরি চিকিৎসা হলো তার গল্প করতে করতে মান্নাদা বলে, সিনেমাটা খারাপ না। দেখতে পারিস।

Saturday, June 1, 2024

দেবরাজ ইন্দ্র, সতী অহল্যা এবং একজন মাতুব্বর!

আরজ আলী মাতুব্বরের এই বইটি অনেক আগে পড়েছিলাম। ওখানে দেবরাজ ইন্দ্রকে নিয়ে একটা প্রসঙ্গ আছে। এটা এখানেই আমি প্রথম জানতে পাই! কোন-এক কারণে যখন বইটা আবারও পড়ছি তখন একটা ছোট্ট খটকা লেগেছে তিনি যে এটার উল্লেখ করলেন এর সূত্র কি? অন্য প্রসঙ্গে দিলেও তিনি এটায় কোন প্রকার রেফারেন্স দেননি! দেয়াটা অবশ্য প্রয়োজন ছিল।

Wednesday, May 15, 2024

অমানুষ এবং এক বস্তা...!

লেখক: ওয়ালিদ ইসলাম, Oalid Islam (লেখকের লিখিত অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)
ওয়ালিদ ইসলাম
"
আমি যেহেতু খুব আশাবাদী একজন মানুষ তাই নিজেকে কখনো ভিক্টিম ভাবি না বা ভিক্টিম সাজতে নিতান্তই অপছন্দ করি। কিন্তু গত ১০ জানুয়ারি আমার লৈঙ্গিক পরিচয় প্রকাশ করার পর থেকে যে বিষয়গুলোর মুখোমুখি হয়েছি তার সামান্য চিত্র একটু তুলে ধরি: 

Saturday, April 27, 2024

HENRIK IBSEN-এর ROSMERSHOLM!

হেনরিক ইবসেনের 'রোজমারশোম'-এ অতি অল্প চরিত্র:

1. JOHANNES ROSMER, owner of Rosmersholm, a retired minister.

2. REBECCA WEST, companion of the late Mrs. Rosmer and still living at Rosmersholm.

3. RECTOR KROLL, ROSMER's brother-in-law.

4. ULRIC BRENDEL.

5. PETER MORTENSGÅRD.

6. MRS. HELSETH, housekeeper at Rosmersholm.

Thursday, April 25, 2024

ফেরা...

লেখক: Badsha Khaled Apu https://www.facebook.com/khaled.h.apu (লেখকের লিখিত অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)

"'ইউ-এস বাংলার' চেয়ে বিমানের টিকেট ছয় হাজার টাকা বেশী দিয়ে কেনার পর যখন ফ্লাইট পাঁচ ঘন্টা ডিলে হয় এবং চোখের সামনে দিয়ে 'ইউ-এস বাংলার' যাত্রীরা ঢং-ঢাং করতে করতে চলে যায় (তারা স্বাভাবিক ভাবেই যাচ্ছিল, আমার কাছে ঢং ঢাং লাগছিল আর কি!) তখন মেজাজ যতটুকু খারাপ হবার কথা, আমার মেজাজ ঠিক ততটুকুই খারাপ হয়েছে।

Wednesday, April 3, 2024

ডিয়ার মামুনুর রশীদ, আপনার 'মননের দুর্ভিক্ষ'!

মামুনুর রশীদ 'রুচির দুর্ভিক্ষ' নিয়ে যে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা চালু ভাষায় 'ভাইরাল' হয়ে গেছে। এই যে ভাইরাল জিনিসটা বাজারে চালু হলো এটাও এক প্রকারের রুচির দুর্ভিক্ষ!

Sunday, March 24, 2024

একজন 'মহা-লেখক' এবং আমার শপথ!

এ সত্য, আমার সমস্ত জীবনে অন-লাইন মিডিয়ার মিলিয়ন-মিলিয়ন শব্দের মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়ায় লক্ষ-লক্ষ শব্দ ছাপা হয়েছে কিন্তু এখনও আমি নিজেকে লেখক বলে দাবী করি না। কারণ যে জিনিস আমার না তা আমি দাবী করব কেমন করে! কে লেখক কে লেখক না এটা ঠিক করেন পাঠক। পাঠককে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নাই কারণ একজন পরিণত পাঠক তাঁর গ্রে-মেটার ফ্লাওয়ার ভাসে রেখে কোন লেখকের লেখা পাঠ করতে বসেন না। এরা একেকটা ক্ষুরধার ব্রেন...!