ওয়ালিদ ইসলাম |
২. বিবিসির করা সংবাদের মন্তব্যে দেশে গেলে গণপিটুনি দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে সরাসরি। তবুও দেশে গিয়েছি, দেশে ফিরবো এ আশাও রাখি।
৩. অনেক অপরিচিত হাটুর বয়সী জুনিয়র নির্ভয়ে তুমি/তুই সম্বোধন করে বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করেছে এবং ফ্রড করার সহজ উপায় খুঁজেছে। এতোটা ব্যক্তিত্ত্বহীনঁএকজন মানুষকে কেন ভাবতে হবে?
৪. অনেক বন্ধু বা সম্মানিত সিনিয়র ফেসবুকে 'ক্লাসিফাইড ভিডিও' পাঠিয়েছেন যার কারণ আজও আমার বোধগম্য হয় না! এই বিকৃত রুচির মানুষেরা হয়তো ভেবেছেন পর্ণ দেখা আমার নেশা। আর তাদের পাঠানো পর্ণ দেখলেই হয়তো তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বো।
৫. কেউ কেউ তার ইজ্জত-আব্রু উপেক্ষা করে তার যক্ষের ধনের ছবি পাঠাতে শুরু করেছে। বাবা, এতে কী ধরনের আনন্দ পাওয়া যায় আমি বুঝি না!
৬. অনেক স্নেহাশিস জুনিয়র আমার পেছনে-পেছনে এমন কিছু নোংরা মন্তব্য করে যা প্রায়ই আমার কান পর্যন্ত পৌছে যায়। যাই হোক, আমার সম্ভবত এতেই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এরা আমার সামনে তো আর করে না।
৭. ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের রাস্তায় একটা অ্যাক্সিডেন্ট করি এবং ছোটভাই সুমন সেখানেই মারা যায়। আমরা বেঁচে থাকা তিন জন সেই ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছি। দেশে থাকলে সময় করে সুমনের কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকতাম আর চিন্তা করতাম কবে আমিও ওর পাশে গিয়ে শায়িত হবো। কিন্তু এখন কাউকে না-জানিয়ে খুব ভোরে লুকিয়ে-লুকিয়ে ওর কবরের ওখানে যেতে হয়।
৮. আমার কাছের বন্ধু/জুনিয়র ছেলেগুলো যাদের সাথে সবসময়ই ওঠাবসা তাদেরকে নিয়ে তাদের বন্ধু-বান্ধবীদের হাসি-ঠাট্টার অন্ত নেই। যার একমাত্র কারণ হলাম আমি আর আমার সাথে তাদের সম্পর্ক।
৯. একটা সমাজসেবামূলক কাজে কয়েকজন জুনিয়রকে যুক্ত করা হলো। সেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব একজন ম্যাডাম তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে যুক্ত করলেন। তাতে একজন জুনিয়র ম্যাডামকে উত্তর দিলেন যে, তৃতীয় লিঙ্গের ওই মানুষটাকে সাথে নিয়ে সে তার ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠা ইমেজটার বারোটা বাজাতে চান না। চিন্তা করি, তার গড়ে তোলা ইমেজের ফুটেজ আমি কতোখানি নষ্ট করেছি।
১১. পজিটিভ/নেগেটিভ যাই হোক, অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবনধারার উপর থিসিস করতে চান এবং আমি কিভাবে সহায়তা করতে পারিেএই বিষয়ে!
১২. বলতে ঘৃণা লাগে একটা ট্রেনিং অর্গানাইজেশনে পুরোদস্তুর একটা ক্লাস নেয়া হয়েছিলো আমার উপরে। ট্রেনিংরত অবস্থায় বিভিন্ন মেইল পার্টিসিপ্যান্টের উপর নাকি আমার কুদৃষ্টি ছিলো এটা তারা আগেই লক্ষ্য করেছিলেন। অথচ, সেখানকার প্রতিটা পার্টিসিপ্যান্ট মেইল/ফিমেইল প্রত্যেকের সাথেই আমার স্নেহ/সম্মান ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিলো যা এখনো টিকে আছে।
১৩. সবচেয়ে অবাক করা বিষয় যেটি 'হিজড়া' আমাদের সমাজে একটি গালি। কিন্তু, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করতে গিয়ে দেখলাম অন্যান্য সব দেশের ন্যাশনাল আইডি সিস্টেমে যেরকম উল্লেখ থাকে 'মেইল/ফিমেইল/আদার' আমাদের সিস্টেমে সেটা নেই। আমাদের সিস্টেমে উল্লেখ 'মেইল/ফিমেইল/হিজড়া' যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু বা শ্রুতিকটু। তাই আমার জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করলেও পাসপোর্ট পরিবর্তন করতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ, আমার ই-পাসপোর্টে তো এই গালিটারই উল্লেখ থাকবে!
আরও অনেক কিছুই ঘটে বা ঘটেছে যা উল্লেখ করতে রুচিতে বাধছে। আমি অত্যন্ত তুচ্ছ মানুষ। আমার সৌভাগ্য, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত আছি। এই আমাকে যদি এতো কিছুর সম্মুখীন হতে হয় তাহলে আপনি বা আপনারা একটু চিন্তা করে বলুন তো আপনারা তৃতীয় লিঙ্গের কমিউনিটিকে কোথায় পতিত করেছেন? এরপর যখন তারা বাচ্চা নাচিয়ে/রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাকা তুলে জীবিকার পথ খুঁজবে আপনারাই চেঁচামেচি-হইচই করেন যে তারা উৎপাত করে, চাঁদাবাজী করে।
জন্মই যেন আমাদের আজন্ম পাপ, ধর্মই যেনো না-জায়েজ হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে এই কমিউনিটির মানুষগুলোকে।"
-লেখক: ওয়ালিদ ইসলাম, First Secretary at Bangladesh Embassy Tehran (https://www.facebook.com/oalid.islam)
...
আমার এই ওয়েবসাইট- ব্লগস্পট, ওয়েবসাইট এটা একটু জাঁক করে বলা! ২০০৭ সাল থেকে শুরু করা এটা আসলে এখন একটা প্রগৈতিহাসিক জিনিস! এফবি-টেফবির যুগে এই জিনিস এখন অচল। ব্লগস্ফিয়ারে এখন কার কাছে এত 'ফিযুল' সময় যে কোন নির্দিষ্ট একটা ওয়েবসাইটে গিয়ে ঢুঁ মারবে! পূর্বে 'ব্লগ-চলের' কারণে হয়তো এখানে কেমন-কেমন করে যেন ১৮ লাখের মত পড়ুয়াদের পড়া হয়ে গেছে! এখন অবশ্য আমার এখানে খুব কমই লেখা হয়, কারণ...সে এক ইতিহাস। অল্প করে বলি, মাছের নাকি পচন শুরু হয় মাথা থেকে আর একজন লেখকের, লিখতে না পেরে! তো, আপাতত আমি এখন নিজেকে 'মৃতমানুষ' বলেই মনে করি!
যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। কারও লেখা খুব ভাল লাগলে বা দরকারি মনে হলে আমি খুবই বিনয়ের সঙ্গে অনুমতি প্রার্থনা করি। লেখাটা এখানে পাবলিশ করার অনুমতির জন্য। কখনও-কখনও আমার ভঙ্গিটা হয় অনেকটা ভিক্ষুকের মত। কেন আমার এই 'লালচি' আচরণ? এই সাইটের ভিউ বাড়াবার জন্য? আরে না, এখন পাঠক কোথায় যে ভিউ বাড়বে। লেখা চাইলে কেউ-কেউ সহৃদয়তার সঙ্গে অনুমতি দেন। অনেকে আবার দড়াম করে নাকের উপর দরোজা লাগিয়ে দেন। মানে না করে দেন। ভঙ্গিটা কর্কশ হলেও এতে আমার আহত হওয়ার কিছু নাই, ভিক্ষুক যে আমি। তো, ভাঙ্গা নাক খানিকটা সোজা হলে আমি আবারও কারও কাছে...! কেন রে বাবা, ভাঙ্গা নাক বা নেড়া আবারও বেলতলায়? কেন যায়!
আমার কাছে কেবলই মনে হয় আমরা তো আর 'পাইপমানুষ' না যে একজন মানুষের মুখে খাবার আর পেছনে ইয়ে নিয়ে একটা আস্ত পাইপ...। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা কী কিছুই রেখে যাব না! ধরুন, এফবি টাইপের কোন-এক সোশ্যাল মিডিয়ার 'তারতুরে' আগুন ধরে রাতারাতি সব লেখা উধাও বা আমার এই সাইটের তারগুলো সব উইপোকা খেয়ে ফেলল? হতে পারে না এমনটা, বেশ পারে। তো, আমার মতে দরকারি তথ্য-লেখা যতটা ছড়িয়ে রাখা যায়।
জনাব, ওয়ালিদ ইসলামের এই লেখাটা যখন পড়া শুরু করলাম আমার খুব কাছ থেকে ছুরি খাওয়ার অভিজ্ঞতা হলো। ক্রমশ মনে হলো গা থেকে একেক করে কাপড় খসে পড়ছে। হা ঈশ্বর, এক চিলতে কাপড়ের যে বড় প্রয়োজন!
এ এক বিচিত্র দেশ! কারও মধ্যে খানিকটা অসঙ্গতি বা কেউ খানিকটা অন্য রকম হলেই আমরা অবলীলায় পাগল বলি। বেদম হাসাহাসি করি। সাইকিয়াট্রিস্টকে বলি, পাগলের ডাক্তার! এমন নৃশংস আচরণ এই গ্রহের আর কোথাও পাবেন না। শিক্ষিত লোক, লেখক-কবি-শিল্পী এই দোষে দুষ্ট। আমি নিজেও!
পুতুপুতু কথা অনেক হলো এবার একটু কঠিন করে বলি। স্যার, আপনাকে বলছি, যারা ওয়ালিদ ইসলামের মত কাউকে নিয়ে ট্রল করেন, হাসাহাসি করেন। ওয়ালিদ ইসলামের মত কারও হলুদ পোশাক নিয়ে বা অন্য কারও টুথব্রাশ গোঁফ নিয়ে কথা বলেন এটা সমীচীন না তবুও... আমরা উদাসিন ভঙ্গিতে না-দেখার ভান করব।
কিন্তু, যেটাতে আমার হাত নাই তা নিয়ে আপনি বলার কে হে? আপনি, আপনার বাবা মিলে আজ পর্যন্ত একটা কোষ বানাতে পারলেন না! নিজের জন্মের সময় আপনি বা আপনার বাবা হাত দুইটার জায়গায় তিনটা বা ঠ্যাং দুইটার জায়গায় চারটা আনতে পারলেন না? আফসোস, আপনার নিজের জন্মটাই আটকাতে পারলেন না! মিয়া, আপনি রসের সাগর, তাহলে আপনার এত রস-রসিকতা আসে কোথা থেকে!
ডিয়ার রসিক স্যার, আপনি এই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ হলেও আপনার জন্য গুন্টার গ্রাসের কথা ধার করে বলি: 'আপনি এক বস্তা গু'! আর আমার এক পাঠকের কথাও এখানে যুক্ত করতে চাই, ইয়ে ফেটে না-গেলে আপনার জন্মটা আটকানো যেত! আহা, বেচারা এই গ্রহ আপনার ভার সয় কেমন করে...!
No comments:
Post a Comment