আরজ আলী মাতুব্বরের এই বইটি অনেক আগে পড়েছিলাম। ওখানে দেবরাজ ইন্দ্রকে নিয়ে একটা প্রসঙ্গ আছে। এটা এখানেই আমি প্রথম জানতে পাই! কোন-এক কারণে যখন বইটা আবারও পড়ছি তখন একটা ছোট্ট খটকা লেগেছে তিনি যে এটার উল্লেখ করলেন এর সূত্র কি? অন্য প্রসঙ্গে দিলেও তিনি এটায় কোন প্রকার রেফারেন্স দেননি! দেয়াটা অবশ্য প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু ওই সময় সীমাহীন সীমাবদ্ধতার মধ্যে এই লেখক মানুষটা যা করে দেখিয়েছেন তা প্রায় অসাধ্য এক কাজ! কাউকে আহত করার জন্য না কেবল তিনি একের-পর-এক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। পারলে আপনি উত্তর দিন, সমস্যা তো নেই।
কিন্তু আরজ আলীর সেই সময় এখন আর নাই। এখনকার এই প্রজন্মের অনেকে প্রচুর পড়াশোনা করেন। ব্লগস্ফিয়ারে বা অনলাইনে ভুলভাল বলে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। এখানে লিখে আমি ভয়ে কাঠ হয়ে থাকি এইরে, কেউ-একজন ক্যাঁক করে ধরে ফেলল! অবশ্য কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে লজ্জিত হই এবং কৃতজ্ঞও হই। তো, রেফারেন্স আমার খুব প্রয়োজন বিধায় তালাশের শুরু...।
আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্র-১, পৃ:১৫৬ প্রকাশক: পাঠক সমাবেশ |
এমনিতে আরজ আলী মানুষটাকে আমি যতটা পড়েছি বা জেনেছি আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে তিনি স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন এ সত্য কিন্তু ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না। আমাদের অনেকের কাছেই এটা পরিষ্কার না যে নাস্তিকতা আর ধর্মবিদ্বেষ এই দুইটা বিষয় এক না। আমি অনেককেই দেখেছি এরা বিশেষ কোন একটা ধর্মকে টার্গেট করেন এবং অনবরত সেই ধর্মের বিশ্বাসীকে অহেতুক খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করেন। কাজটা অনেকটা ইচ্ছাকৃত এবং এতে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এ অন্যায়। আপনি যেমন একজনের মাকে নিয়ে কুৎসিত কথা বলতে পারেন না তেমনি মনগড়া কথা বলে কারও ধর্মবিশ্বাসকে আহত করতে পারেন না! আরজ আলী মাতুব্বরকে আমি যতটুকু পড়েছি বানোয়াট কোন প্রসঙ্গের অবতারণা করতে দেখিনি! বা বিশেষ কোন ধর্মকে খাটো করার চেষ্টাও ছিল না। কিন্তু ওই যে বললাম সূত্রটা জরুরি।
আমার এক উপন্যাসে কাহিনীর প্রয়োজনে মহাপাতকের উল্লেখ ছিল। কী কী করলে একজন মহাপাতক হয়? এক, ব্রহ্মহত্যা। দুই ব্রহ্মস্বাপহরণ। তিন, সুরাপান। চার, গুরুপত্মীহরণ। পাঁচ, মহাপাতকী সংসর্গ। উপন্যাসের ওই চরিত্রের কাছে 'গুরুপত্মীহরণ' গুরুতর মনে হয়েছিল।
আলোচ্য বিষয়ে ইন্দ্র গুরুপত্মী অহল্যার সতীত্ব নষ্ট করেন এবং গুরু ঋষি গৌতমের শাপগ্রস্ত হন। হিন্দু ধর্মে অহল্যাকে খুবই সম্মানের চোখে দেখা হয় কারণ পঞ্চকন্যার (পাঁচ আদর্শ সতী) অহল্যাকে প্রথমা মনে করা হয়। হিন্দু ধর্মমতে, এই 'পঞ্চকন্যার' নাম আবৃত্তি করলে পাপস্খালন ঘটে।
যাই হোক, রামায়নে দেবরাজ ইন্দ্রের এই প্রসঙ্গ পাওয়া গেল অন্য প্রকারে। অবশেষে সোমদেব ভট্ট রচিত 'কথাসরিৎসাগর'-এ এর রেফারেন্স মিলল। এই কথাসরিৎসাগর অনুবাদ করেছিলেন শ্রীহিরেন্দ্রলাল বিশ্বাস। অনুবাদটির প্রথম সংস্করণ ছাপা হয়েছিল ১৯৫৭ সালে এবং প্রকাশিত হয়েছিল অ্যাকাডেমিক পাবলিশার্স ৫এ ভবানী দত্ত লেন, কলিকাতা ৭ থেকে।
কথাসরিৎসাগর, প্রথম খন্ড। পৃ: ১৪৮ |
এখানে উল্লেখ আছে, ঋষি গৌতম অহল্যাকেও শাপ দিয়েছিলেন সেটা ভিন্ন প্রসংগ কিন্তু ইন্দ্রকে যেটা বলেছিলেন:
"...সঙ্গে সঙ্গে গৌতম ইন্দ্রদেবকেও এই শাপ দিলেন, তুই যে স্ত্রী অঙ্গ অভিলাষ করিয়াছিলি তোর সমস্ত দেহ তাহার আকৃতিতে পূর্ণ হইবে... ইন্দ্রের দেহ তৎক্ষণাৎ হীন চিহ্নে আবৃত হইল কারণ দুশ্চরিত্রের অবমাননাকর অবস্থা কেন না হইবে (১৩৩-১৪৭)..."।
No comments:
Post a Comment