Search

Friday, July 12, 2024

এক কাপ চায়ে দু-কাপ চিনি!

সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ধামড়া-ধামড়া বুদ্ধিমান মানুষদেরকে স্রেফ হাফ-প্যান্টপরা খোকা বানিয়ে দিচ্ছে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি কোন খোকা না-আবার 'ইয়েখানা' থেকে পকেটে করে খানিকটা ইয়ে নিয়ে এসে আমাদেরকে বলে বসে: দেখবা, এক খাবলা নিয়া আসলাম।

এদিকে আবার কালে-কালে কিছু খোকা নিজেদেরকে স্টার আদলে একেকটা তালগাছ মনে করছে। এই গ্রহের এমন কোন জ্ঞান নাই যা এদের হাঁটু তলে নাই!

কে বোঝাবে এদেরকে যে সোশ্যাল মিডিয়া একটা বাজারের মত। বাজারের নিজস্ব কিছু ভাষা আছে। বাজারে দাঁড়িয়ে সব বলা যায় না, করা যায় না। 'ধুম মাচা দে', গানটা গাইতে কোন দোষ নাই কিন্তু কোনও অফিসের টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে গানটা গাইলে ধরে নিতে হবে মস্তিষ্কের ভেতরের জিনিসপত্র নীচের দিকে নেমে এসেছে। আহা, গ্রে-মেটার আর ইয়েলো মেটার জড়াজড়ি হয়ে থাকাটা ভাল দেখায় না।

এদের এমন নমুনার সংখ্যা লক্ষ-লক্ষ! নমুনা হিসাবে একটা উদাহরণ দেই:

'এই নিন', বলে তিনি আমাদের হাতে যে লেখাটা ধরিয়ে দিয়েছেন ওখানে আবার ঘটা করে বলেছেন: 

'আমি ইংল্যান্ডে পড়েছি, সুইডেনে পড়েছি। অক্সফোর্ড, হার্ভার্ডে পড়েছি...'।

বেশ-বেশ! এটা আমরা আপনার লেখায় অনেকবার পড়ে ফেলেছি। কারণ সুযোগ পেলেই এটা ঘটা করে জানিয়ে দেন। এতে অবশ্য সমস্যা নেই। আমাদের জেনে ভাল লাগে, লাগতেই থাকে...!

তো, ড. আমিনুল ইসলাম নামের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এই ভদ্রলোক এস্তোনিয়ানের কোন-এক ইউনিভার্সিটিতে পড়ান। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই গর্বের। সত্যি-সত্যি, শপথ আমার লেখালেখির।

এই মানুষটাকে নিয়ে লিখছি ভয়ে-ভয়ে কারণ একে তো ওঁর আছে বিরাট ফ্যান-ফলোয়ার বাহিনী তার উপর আরেক কাহিনী! ভদ্রলোকের হাতের মুঠোয় দেশের সমস্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। আপাতত আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কোন কাজ নাই! এদের একটাই কাজ ল্যাপটপ-ট্যাব-সেল ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকা আর আমিনুল স্যারের লেখার অপেক্ষা করা ।

আমিনুল ইসলাম স্যার 'মাসুক নানা'-কুয়াশা-কিরিটির কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর-পরই এফবি ওরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা প্রসব করা মাত্রই আইনের লোকজনেরা দুষ্টদেরকে পাকড়াও করে ফেলেন। যার চালু নাম গ্রেফতার! নমুনা:

'এই নিন',
বলে তিনি আরেকটা ভেরি-ভেরি গোপন তথ্য সফটওয়ারের 'নরোমতারের' ঢেলে 'ছৌছাল মিডিয়ায়' জানাচ্ছেন। তিনি জানাবার আগ-পর্যন্ত কিন্তু এই গ্রহের কেউ কিসসু জানে না! সাংবাদিকরা তখন কুহুতুর পর্বতে ব্লাডার খালি করতে গিয়েছিল। ফিরে এসে দেখে স্যার আমিনুল কাজ সেরে ফেলেছেন! সাংবাদিক বেচারারা কেঁদে-কেঁদে অন্তর্বাস ভিজিয়ে ফেলল, দুঃখে! তো, এখানে আমিনুল স্যার জানাচ্ছেন:
সকালে আমি পোস্ট দেয়ার পর বিসিএস প্রশ্ন ফাঁসের আলোচিত ড্রাইভার এবং তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ... 
অ আল্লা, কী সর্বনাশ-কী সর্বনাশ! স্যার পোস্ট দিলেই লোকজন গ্রেফতার হয়ে যায়! আমিনুল স্যারের ক্ষমতা দেখে ভয়ে আমার এক চোখে অনল অন্য চোখে জল চলে আসল।
 
ইয়ে, সোশ্যাল মিডিয়া লোকজনকে কেমন নির্বোধ বানায় এর আরেকটা উদাহরণ:
স্যার বলছেন, 'আমাদের এই ছবিটা বেশ ভাইরাল হয়েছে। তাই ভাবলাম আবার দেই...'! ভাল, এই
রকম পারিবারিক ছবি বেশি-বেশি করে দেন। 'বেশ ভাইরাল' থেকে ফুল ভাইরাল হওয়ার পর আবারও দেবেন চরম ভাইরাল হওয়ার জন্য। কাজটা করে যাবেন, প্লিজ, বারংবার...!
 
 
এখানে স্যার উষ্মা প্রকাশ করছেন, 'সে কবে তো লেখক হলো? তার কি কোন লেখা প্রকাশিত হয়েছে? ...এতে আমাদের মত লেখকদের অপমান করা হয়'। 
স্যার, আপনাদের মত লেখক? কারা এরা? যাদের হাতে ছ-টা আঙ্গুল থাকে! 
 
নাকি আপনার মত লেখক কাম গায়ক যারা! যখন-তখন একটা গিটার বা ইউকুলেলে নিয়ে 'হান্ড্রেড মাইলস' গেয়ে আরেক ডক্টর মাহফুজুর রহমানকে ছাড়িয়ে যান!
থ্যাংক ইউ, স্যার। আপনার মত লোকজনের জন্য বাংলা ভাষায় চালু বাক্যগুলো হলো, 'বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি', সূর্যের চেয়ে বালির উত্তাপ বেশি বা 'অল্প জলে সফরী ফরফরায়তে'।  ওহো, গ্রামে আবার চালু আছে, 'দারোগার নাইয়ের মাঝির শালা', গাধার পিঠে হাতি ...।
আমি আমারটা বলি, এক কাপ চায়ে...! 
 
ঋণ: স্ক্রিণশটগুলো নেওয়া হয়েছে ড. আমিনুল ইসলামের ফেসবুক পেজ থেকে। স্যারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

No comments: