Search

Wednesday, July 17, 2024

দেখা, ফিরে দেখা: ছাত্র আন্দোলন- এ এক অভূতপূর্ব বিস্ময়!

আবু সাঈদের শহীদ হওয়ার ভিডিও ক্লিপটা আমি এখানে দিতে চাই না। কেবল কৌশিক সরকারের এই স্কেচ এখানে শেয়ার করছি। তাঁর মৃত্যু নিয়ে আমার মত মানুষের বলাটা খানিকটা জটিলতায় ফেলে দেয়। কারণ, আমি যা দেখেছি, লক্ষ-লক্ষ মানুষ লাইভে যা দেখেছে এর পরও এ নিয়ে বিতর্ক থাকলে আমার এই চোখ আমার না...!

এদিকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। কিন্তু পুলিশ এজাহারে বলেছে, সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা যাননি! পুলিশকে এজাহার নিয়ে জিজ্ঞেস করার পর এরা আবার বলছে, এজাহারই শেষ কথা না। ত-দ-ন্ত, ব্লা-ব্লা-ব্লা!

কী যে সাহস আবু সাইদ নামের এই মানুষটার:

 

এদিকে দেখুন, ইতর-দানবরা, এরা কী বলার চেষ্টা করছে! আহারে-আহারে, এই ইতরগুলো আর মানুষ হইল না...! এই গবেষকরাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গালগল্প জুড়ে দেয় []।

আবার আমাদের সাবেক জাজ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলছেন, তিনি ভিডিওতে দেখেছেন সাঈদের হাতে অস্ত্র ছিল। এই নিয়ে তিনি যে ভঙ্গিতে হইচই করলেন, মহা উত্তেজিত হলেন তার বিচারকার্য এমন উত্তেজনা নিয়ে করতেন না বলেই আশা করি।

ওহ-হ, ভাল কথা, তিনি এই অনুষ্ঠানেই একটা নতুন তথ্য দিলেন দেশে এখনও রাজাকারের বংশধরের সংখ্যা নাকি ৪ কোটির মত! আমার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে পড়াশোনা বা বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়ও কেউ এমন সংশয় প্রকাশ করেননি! তাতে কী আসে যায়- এদের কথাই শেষ কথা!
জাজ মানিক কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় বিলেতে। এরপর ২০১৮ সালে এসে তিনি বি-রা-ট মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন! আর জাফর ইকবাল ছিলেন গর্তে! আমি জোর দাবী জানাই জাফর ইকবাল স্যারকে ২০২৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা উপাধি দেওয়ার জন্য। নইলে আমি কিন্তু কেঁদে ফেলব!

অথচ একজন আস্ত ট্যাংক নিয়ে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন- ভাবা যায়! এম, এ জব্বার [], তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকার স্বীকারই করতে চায়নি! তিনি এখনও বেঁচে।

একজন উক্য চিং [], দুলা মিয়া [৭], মশিহুর রহমান [], যেসব অসমসাহসী মানুষদের নিয়ে হলিউড-বলিউডে রগরগে মুভি হওয়ার কথা! এরা ভারতীয় হলে অন্তত ভারত যে একটা মুভি বানিয়ে ফেলত এতে অন্তত আমার কোন সন্দেহ নেই!

এই প্রজন্মের কয়জন জানে ভাগিরথী [], প্রিনছা খেঁর [১০] কথা? যারা যুদ্ধ করেছেন তাঁর শরীরকে অস্ত্র করে। একজন কৃষক সুরুয মিয়া, ঠিক ১৬ ডিসেম্বর ভোরে এই মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করেন [১১]। খাবার-ওষুধ কেনার পয়সা ছিল না! ৮ ঘন্টা গাছে তাঁর লাশ ঝুলছিল...!

প্রধানমন্ত্রীর স্বজন হারানোর বেদনা কাকে বলে সেটা আজ আর সাদি মহাম্মদকে [১২] জিজ্ঞেস করার উপায় নেই যার ২৫ জন স্বজনকে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭১ সালে! সাধারণ মানুষের স্বজন হারাবার বেদনায় কাতর হওয়ার নিয়ম নেই!

মরহুম ফজলুল হক ভূঁইয়ার এই ছবিটি তুলেছেন হান্নান খাদেম। কৃতজ্ঞতা।
ময়লা কাঁথায় নিথর যে দেহটা এটা দেখে কেউ কী বিশ্বাস করবে এই মানুষটা দুর্ধর্ষ এক নৌ কমান্ডো [১৩]! যে মানুষটা বুকে লিমপেট মাইন বেধে মাইলের-পর-মাইল সাঁতরে অতিকায়-সব পানির জাহাজ উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানিদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন! যেটা 'অপারেশন জ্যাকপট' নামে পরিচিত ছিল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফজলুল হক ভূইয়া নামের এই 'আগুনমানুষটা' ঠেলাগাড়ি চালাতেন, শ্রমিকের কাজ করতেন।

জনাব, মানিক-জাফরের মত 'বহুত বাড়া' মুক্তিযোদ্ধারা কী খোঁজ রেখেছেন হাজারি লাল নামের শুয়োর-চড়ানো এক বীর প্রতীকের? যিনি মার্কেজের কর্ণেলের চিঠির অপেক্ষার মত ভাতার অপেক্ষায় ছিলেন [১৪]?  

লেখাটা যখন শুরু করেছিলাম তখন দুম করে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ২০২৪ সালে এটা ভাবা যায়! যোগাযোগ বন্ধ, পত্রিকা আসারও উপায় নেই! টিভি রিচার্জের অভাবে অকেজো। সেল-ফোন রিচার্জ করা যাচ্ছে না কারণ ইন্টারনেট নেই। হঠাৎ মাথায় এলো তখন তো রেডিওই ভরসা ছিল।  মনে হচ্ছিল, ১৯৭১ সালের শৈশবে ফিরে গেছি!
... ... ...
এখন শুনছি, এই শিশুটি নাকি আবু সাইদকে হত্যা করেছে! এই শিশুটিকে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড দিলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। 
এর অপার সৌভাগ্য যে বিষয়টা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।  অবশেষে রিমান্ড বাতিল হয়! জেনে ভাল লাগে কিন্তু আদালতে তার বয়সের প্রমাণ দেওয়ার পরও তাকে রিমান্ড দিলেন যে বিচারক, তিনি কী সব জবাবদিহিতার উপরে!
 
দেশটা কী পাগল হয়ে গেছে নাকি আমি নিজে! পূর্বের লেখায় খানিকটা হালকা চালে বলেছিলাম আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনাটা আমরা লক্ষ-লক্ষ মানুষ ভিডিওতে যেটা দেখেছি তা কী সত্য না?
আহারে, আ-দা-ল-ত! আপনারা কী উপস্থাপিত মানুষটার দিকে একটু তাকিয়েও দেখেন না যে এ কি বাচ্চা, না ধামড়া একজন মানুষ? আপনারা কী এটাও দেখেন না আপনার ডকে যে মানুষটা উঠেছে তাকে সীমাহীন নির্যাতন করা হয়েছে?
ছেলেটির জামিন হয়েছে কিন্তু একটু ভিডিওটা দেখুন। গুলিবিদ্ধ একটা বাচ্চার সঙ্গে কী করা হয়েছে! একটা রাষ্ট্র কেমন করে পারে এটা করতে? এরপরও এই রাষ্ট্রে রোদ উঠে, বৃষ্টি হয়!
 
আর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা? রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার? তারা কি যে-কোনও জবাবদিহিতার বাইরে? আচ্ছা, আরেকটা বিষয় পুলিশ কমিশনার বলছেন, তিনি গতকাল বিকেলে 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে' জানতে পেরেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম! এদিকে আমাদের প্রধান বিচারপতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে বলছেন, 'সোশ্যাল মিডিয়া এখন বিপদের কারবার'। কই যে যাই...!...: 
 
প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাংচুর হয়েছে। ভাংচুরের অন্য উদাহরণের মতই এটার জন্যও নিন্দা জানাই। কেন...? 
এটা পুরনো খবর, হাইকোর্ট বাচ্চাদের উপর গুলি চালাবার বিষয়ে রিট খারিজ করে দিয়েছেন:

রিটের সিদ্ধান্ত এটা একেবারেই আদালতের এখতিয়ার কিন্তু পুলিশ যে মাথায়-বুকে সরাসরি
গুলি করছে এমন অসংখ্য ফুটেজ  আমি এখানে দিতে পারি কিন্তু এই প্রসঙ্গে সত্য-মিথ্যা তর্কে গেলাম না কিন্তু যেখানে এমন একটা অভিযোগ এসেছে বাচ্চাদের প্রাণঘাতি বুলেটে গুলি করা হচ্ছে। একটা উদাহরণ:
মর্গে ১৭ বছরের নাফিজের বাবাকে যখন মর্গ-সহকারী মৃতদেহটা দেখাচ্ছিল। তখন তার বাবা দেখতে পান বুকে গুলির ছোট্ট ছিদ্র কিন্তু পিঠ ছিন্নভিন্ন করে বেরিয়েছে!
সেখানে আমরা দেখছি, সরকারী ছুটি বাদেও বুধ এবং বৃহস্পতিবার একজন বিচারপতি অসুস্থ থাকায় এই রিটের শুনানি হয়নি!
সবিনয়ে বলি, আইনের মারপ্যাচ আমি বুঝি না আমার মত মোটা বুদ্ধির মানুষ বুঝি, আমার বাড়িতে আগুন লেগেছে আর আপনি বলছেন বাজার থেকে এসে আগুন নেভাবেন, অনেকটা এমন! এমন তো না যে বিচারক, প্রধান বিচারপতিরা এই দেশে থাকেন না- এই দেশে কী হচ্ছে তা বিন্দুমাত্র জানেন না!
 
আর সরকারের এই আইন কর্মকর্তা যেভাবে ব্যাখ্যা দিলেন এই রিটের উদ্দেশ্য যে এটা নাকি রাজনৈতিক। ভাল-ভাল! এই সমস্ত আইনের লোকদের মনে হয় বাচ্চাকাচ্চা হয় না! বে-চা-রা, ন-পুং-স-ক!

বিচারপতিদের আমাদের সঙ্গে অনেকটা দূরত্ব বজায় রাখতে হয় এটা আমরা জানি। এই বিচারপতির মত সোশ্যাল মিডিয়ার আসার জন্যও আমরা বলি তা কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এটাকে স্বাগত জানাই:
 
ময়নাল নামের পুলিশের এক ভদ্রলোক তাঁর ছেলে তাঈমের লাশ মর্গে খুঁজে পান।
ডেইলি স্টার ২৪ জুলাই ২০২৪
তাঁর সন্তানের বুক একেবারে ঝাজরা হয়ে গিয়েছিল।
তিনি, ময়নাল (পুলিশ), ফোনে তার ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে বলছিলেন: "একজনকে মারতে কতগুলো গুলি লাগে, স্যার"?
এই পুলিশের সন্তানকেই কিন্তু পুলিশই মেরেছে। যেন এরা ভিডিও গেম খেলছে:
 
পুলিশ নামের এই দানবদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনাটা জরুরি। কারণ আমরা এদের কাছে নিরাপদ না।
আশার কথা হচ্ছে, অনেক চেষ্টার পর তাঈমের পরিবার ওই দানব-পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেন:
তাঈমের এই খুনের জন্য দায়ী ওসি জাকির। অনতিবিলম্বে এই দানবকে আইনের আওতায় আনতে হবে:

 
এদিকে এই সব ইতরামি চলে, সবিরাম:
এই প্রজন্ম হয়তো জানে না কিন্তু বুড়া ধামড়াগুলোর তো জানার কথা ২০১০ সালে হরতাল হয়েছিল মাত্র ১৭৩ দিন! সব বন্ধ ছিল কেবল খোলা ছিল আকাশ পথ!
 
দুই দল মিলে আমাদেরকে হরতালের উপরই রেখেছিল। টানা ২২ দিনও অবরোধ হয়েছিল, সব বন্ধ- কারখানায় এক হাত সুতাও ব্যবহার হয়নি! তখন কেবল এইসব ইতর না এই দেশের কেউই এই নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন ছিলেন না কারণ গণতন্ত্রের জন্য হরতাল নামের দানবটার নাকি খুব প্রয়োজন ছিল। তখন পেট্রল ঢেলে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, একটা মানুষকে মেরে ফেলা ছিল ডাল-ভাত!
 
দেশের এই ডামাডোলে 'জাতীয় মৎস সপ্তাহ-২০২৩' পালিত হলো। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মৎস-পোনা ছাড়ছেন!
এমনিতে পূর্বেও আমরা দেখেছি আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি পাবনায় ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়েও কী নির্ভয়! তিনি বলছিলেন আমিই তো ঝড় উঠাই....:
 
এখানে আবার আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলছেন, শেখ হাসিনার চরণের ধুলো তিনি নাকি পান না...। বুক ভেঙ্গে আসে আমাদের:
 
শফিক রেহমানের আজ একটা ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। এই মানুষটা যদিও স্যুট-ট্যুট পরে ছিলেন কিন্ত আমার কাছে তাকে স্রেফ একটা মনস্টার মনে হচ্ছিল। সঙ্গত কারণে আমি এখানে তার বক্তব্য কোট করতে চাচ্ছি না বা ভিডিওটা যুক্ত করতে। কারণ তিনি আমাদের বাচ্চাদেরকে স্রেফ একটা উস্কানি দিচ্ছেন এবং যথারীতি দানবীয় উস্কানি! আমার স্পষ্ট কথা, আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে দানব হিসাবে দেখতে চাই না।
শফিক রেহমান যায়যায়দিনের পর অন্য একটা প্রিন্ট মিডিয়া চালু করলেন। এবং তখনকার সময়ে এর অকল্পনীয় বিক্রি ছিল। অতীতে আমাদের প্রধান দুই দলই আওয়ামীলীগ-বিএনপি সেই সময় এন্তার হরতাল-নাশকতা করেছে। জামাতও করেছে সেটা বিএনপির কাছা ধরে।
তো, সে সময় বিএনপি হরতাল করছিল। আমাদের দেশে প্রায় সবারই 'দল' করার একটা কলচর আছে! এবং দলের জন্য এরা পারেন না এমন কোন কাজ নেই পারলে নিজের মাকেও বেচে দেবেন। নমুনা, একজন ব্লাডি শফিক রেহমান:
স্রেফ নাশকতা, ব্লাডি নাশকতা! যে পাবলিক ট্রেনে হাজার মানুষ থাকে সেই ট্রেনের জন্য ফিসপ্লেট খুলে রাখা হয়েছিল। ইচ্ছা করে, ঠান্ডা মাথায়! যথারীতি ট্রেন উল্টে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে! অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল, অনেকে পঙ্গু! আর এই শফিক রেহমান নামের 
স্যুটপরা দানব প্রচ্ছদে লিখছে:
"অভূতপূর্ব স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে অচল দেশ"।
আচ্ছা, এই সব অমানুষদের কাছে আমার খুব ছোট্ট এবং নিরীহ একটা প্রশ্ন, ওহে রেহমান, এই কর্মকান্ডে আপনার  কোন স্বজন আহত-নিহত হলে শিরোনাম কী ঠিক থাকত নাকি খানিকটা বদলে যেত, স্যার?
রেহমান স্যার, এই যে আপনি আলতাফ আলী পার্কে ইস্তারি সাহেবা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যে বাক্সটায় চকরাবকরা শার্ট পরে আপনি বসে আছেন, যেটায় চারটা চাকা লাগানো আছে ওইটার ব্রেকের নাট-বল্টু যদি পোলাপানরা খুলে ফেলে তাহলে আপনি কেমন বোধ করিবেন? 
 
কী ভয়ংকর একটা সময়ে আমরা! স্রেফ একেকটা অমানুষে পরিণত হয়েছি! একটা প্রাণ মানে একটা সংখ্যা আমাদের কাছে:
হা ঈশ্বর, 'সময় টিভি' নামের এই ইলেকট্রনিক মিডিয়া পুলিশকে উস্কানি দিচ্ছে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালাবার জন্য যেন সে ভাল একটা ফুটেজ নিতে পারে!
 
আমি পূর্বে লিখেছিলাম, শহীদ আবু সাঈদের ভিডিও ফুটেজটা এখানে দিতে চাই না- এমন তীব্র কষ্ট সহ্য হয় না কিন্তু মত পাল্টালাম। কেন?
এই লেখার প্রয়োজনে কিছু চরিত্রের পুনরাবৃত্তি হয়েছে-হবে! যেন জাজ মানিকের।
জাজ মানিকের মত লোকগুলো মতের অমিল হলেই কেমন দুম করে একটা মানুষকে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে দেন। পারলে রাজাকারে বাচ্চা বা আরেকটু বেশি পারলে রাজাকারের নাতিপুতি বলে দেন! তিনি আইনের লোক হয়েও কী এটা জানেন না যে ইচ্ছা হলেই দুম করে কাউকে রাজাকার বলা যায় না। 
ভাল কথা, জাজ মানিক নামের এই মানুষটা যে কারণে ক্ষেপে অপ্রকৃতস্থ হয়ে গেলেন, কেন? শহীদ আবু সাঈদের যে ভিডিও ফুটেজটা আমরা লক্ষ-লক্ষ মানুষ দেখেছি আমাদের সঙ্গে নাকি এই মানুষটাও দেখেছেন। এখানে আলোচনার সময় তিনি দাবী করেন, শহীদ আবু সাঈদের হাতে অস্ত্র ছিল। উপস্থাপিকা কেবল বলেছিলেন, 'অস্ত্র কোথায়, সামান্য একটা লাঠি ছিল! তাহলে আপনি দেখেননি'। 
 
ব্যস, জাজ মানিক ক্ষেপে লাল হয়ে গেলেন। জাজ মানিকের কথার উপর তো আর আমাদের কথা চলে না। কারণ কত বড় একজন মুক্তিযোদ্ধা- যুদ্ধের সময় তিনি বিলাতে। ওখান থেকে কি অস্ত্র চালিয়েছেন আল্লা জানেন!
তো, তাহলে এখানে এখন শহীদ আবু সাঈদের ভিডিও ক্লিপ না-দেওয়াটা অন্যায় হয়।

লম্বা-লম্বা কথা বলা এই জাজ মানিক সরকারের টাকা স্রেফ মেরে দিয়েছেন। সরকারী বাড়ির ভাড়া আজও পরিশোধ করেননি!:
 
মুক্তিযুদ্ধের উপর আমার একটা বই আছে। না, আমি এখানে আমার বইয়ের বিজ্ঞাপন করতে আসিনি। সেই কারণে বইয়ের নামটা এখানে জরুরি না। ওখানে এক প্রসঙ্গে একটা নিরীহ প্রশ্ন ছিল:
'আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে একজনও সিভিলিয়ান নাই, কেন'?
আজ আবারও এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খায় কতটা ত্যাগ, কতটা সাহস দেখালে একজন বেসামরিক মানুষকে বীরশ্রেষ্ঠ বলা যায়!
...
-আগাম সতর্কতা: এরপর কিছু অডিও-ভিজ্যুয়েল যুক্ত হবে যা দুর্বলচিত্তের অনেকের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। এড়িয়ে যেতে অনুরোধ করি। 
 
নীচে এই লেখাটা অসমাপ্ত এটা বলার কারণ হচ্ছে গত ১ মাসে যা ঘটে গেছে তা নিয়ে একটা মহাকাব্য লেখা যায়। মহাকাব্য লেখার যোগ্যতা আমার নাই কিন্তু আমি একের-পর-এক ঘটনা-সূত্র এই লেখায় যুক্ত করব, ক্রমশ।
আমাদের এখন বয়স হয়েছে। পরের প্রজন্মের জন্য আমাদের যে অল্প জ্ঞান রেখে যাব তা ধারণ করার ক্ষমতা কী আছে ওদের? আমি ব্যক্তিগতভাবে শঙ্কিত ছিলাম এই প্রজন্মকে নিয়ে। যাদের আমরা ফার্মের মুরগি বলে তচ্ছিল্য করতাম আজ  এরা দেখিয়ে দিয়েছে কেমন করে সব বদলে দিতে হয়। কী অমিত সাহস এদের! একেকটা কর্মকান্ড দেখেছি আর চোখ ভিজে এসেছে- কান্না থামে শ্না! কখনও-কখনও মনে হচ্ছিল শ্বাস নিতে পারছি না।
 
বাচ্চা-শিক্ষার্থীদের উপর এক দিকে সরকারী পোশাকধারী গুন্ডাদের গুলি অন্য দিকে সাদা পোশাকের সরকারী গুন্ডাদের গুলি।
ছবি ঋণ: দ্য ডেইলি স্টার

 
এই বাচ্চা মেয়েটা কিসে পড়ে, সিক্স-সেভেন-এইটে?  এ তার মাকে নিয়ে এসেছে। এর হাতের অস্ত্র দেখতে পাচ্ছেন?
 
এবারের আন্দোলনের অন্য একটা মাত্রা ছিল। প্রাইভেট ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছিল। যার যা আছে তাই নিয়ে:
 
অথচ আন্দোলনকারী ছাত্রদের ভরসা ইটের টুকরা, হাস্যকর গুলতি। গুলতি বিক্রেতার কাছ থেকে গুলতি নামের অস্ত্র কিনছে ছাত্ররা!

 
আর কারও-কারও হাতে ছিল বোতলে মরিচের পানি।
 
এই স্কুল ড্রেসটা দেখলে চোখ ভিজে আসে না?
 
কেমন করে বুক-পিঠ ঝাঁজরা করেছে:
 
আহারে-আহারে! কত প্রাণ হল বলিদান:
 এই নাফিজের বাবা গোলাম রহমান বলছিলেন:
"ওই যে দেখেন, ছেলেটা রিকশার রডটা ধইরা রাখছিল। কত খুঁজলাম। তখন যদি ছেলেটাকে পাইতাম, বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করতে পারতাম। ...পরে তো শুনি আমার চাঁদের মত ছেলেটা মর্গে আছে।"

এই বাচ্চাদের কী সাহস! মৃত্যুর চোখে চোখ রেখে মা'র সঙ্গে কথা বলছে হেসে-হেসে। হয়তো এটাই তার শেষ কথা:
সংশয় প্রকাশ করেছিলাম, এটাই হয়তো তার শেষ কথা...না, 
বাকী বিল্লাহ নামের এই ছেলেটি বেঁচে আছে।
  
আহারে-আহারে, যার যায় তার যায়! একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো এই উচ্ছল ছেলেটা তো আপনার-আমারও হতে হতে পারত!
এর বাবা-মা হয়তো একে এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে দেননি। সামান্য চামড়া ছড়ে গেলে মার চোখ ছাপিয়ে জল। বাবা হয়তো কাঁদেন না কিন্তু ঠিক সময় করে মুখটা ঘুরিয়ে নেন।
তার বাবা-মা কখনও কল্পনা করতে পেরেছেন তাদের আদরের বাবুটাকে এমন করে ফেলে দেবে! আমরা তো একটা কুকুরকেও এভাবে ফেলে দেই না।
ইয়ামিন নামের এমআইএসটি-এর মেধাবী এই ছেলেটিকে যখন সাঁজোয়া যান থেকে এভাবে ফেলে দেওয়া হয় তখনও কিন্তু এ বেঁচে ছিল। আহারে, এমন বলিদান...!
 
জুতা পড়ে থাকে কিন্তু জুতা পরার মানুষটাই নেই:
 
এরা যেমন হাসতে-হাসতে মরতে জানে তেমনি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঢং-ও করতে জানে:
 
অথচ দুই দিন আগেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ একটা গুলিও চালায়নি:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি একট মিথ্যুক! আমাদের কথা বাদ দিন, আপনার বাহিনীর লোকজনের কথাটাই নাহয় শোনেন:
"এখন তো মাইরা ফালাইছি, কী করবা...।"
 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কী করেছেন আপনারা! এতো রক্ত, এতো কান্না কিছুই চোখে পড়ে না আপনাদের? আমরা নাহয় আপনাদের প্রজা কিন্তু পুলিশ তো আপনাদের লাঠিয়াল বাহিনী ছিল। এদেরকে আমাদের বাচ্চাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিলেন! আচ্ছা, আসাদুজ্জামান, আপনাদের কথায় এরা আমাদের বাচ্চাদেরকে মেরেছে তা পুলিশও তো একই ভাবে কাঁদে, নাকি?
 রাজারবাগ:
 
আহা, কেন আপনি এমনটা করবেন না- আপনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চাঁদাবাজি থেকে দৈনিক আয় দেড় কোটি টাকা! আপনি রক্তের গঙ্গা বইয়ে দেবেন না তো কী ছলিমুল্লা, কলিমুল্লা?
 
আচ্ছা, আমাদের 'মাদার অভ হিউমিনিটি' শেখ হাসিনা, এই দেশের মানুষের ক্ষোভ কী একেবারেই বুঝতে পারেননি! আসলে বুঝতে পারার কথা না। এই দেশের মানুষকে সম্ভবত প্রজা মনে করতেন। কী দম্ভ! সব নাকি বন্ধ করে দেবেন! আফসোস, এরা উন্নত দেশগুলোর খোঁজ সম্ভবত রাখেন না। ওখানে কেউ এই ভাষায় কথা বলার স্পর্ধাও দেখাবে না [২১]!
আমাদের দেশের এটা একটা কলচর! যিনি ক্ষমতায় আসেন তিনি ভুলে যান তিনি প্রজাতন্ত্রের বেতনভুক্ত, স্রেফ বেতনভুক্ত। সোজা কথায় যারা বেতন নেন, সবাই।
ভাবা যায়, তিনি নাকি ইচ্ছা করে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। অথচ আমরা জনগণরা ট্যাক্স-ভ্যাটের নামে কী বিপুল টাকাই না দিচ্ছি, মায় ওনার বেতনটাও। এটা আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগাম দিয়ে দেই। আপনি একটা বিড়ি কিনলেন বা সেল-ফোনের টাকা বা ট্রেনের টিকেট... এখনও বিড়ি ধরাননি, এখনও ফোনে কথা বলেননি, ট্রেনে চেপে বসেননি তাতে কী, সরকারকে আগাম ট্যাক্স দিয়ে দিচ্ছেন।
 
পূর্বের শাসকরাও এটা করেছেন [২২]। ওই যে বললাম এটাই আমাদের দেশের চল- রাস্তা-ঘাট-ব্রিজ-স্থাপনা সব মন্ত্রীরা তাদের বাপ-দাদার তালুক বিক্রির টাকায় করে দেন। আমাদের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা আমাদের বলেন তিনি নাকি আমাদেরকে ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়ান! বরং সত্যটা হচ্ছে, আমরা আপনাকে খাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ টাকা দেই:
 
ইনি আবার আরেক কাঠি সরেস! 
কী রসিয়ে রসিয়েই না বলেন তার বাড়ির পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, হেলিকপ্টার ছাড়া সে নাকি চলে না। এখন এসে হাতেনাতে পাকড়াও করেছেন। আজব, ৪০০ কোটি টাকা একটা মানুষ কী এক দিনে বানায়! এইসব দেখার জন্য আমাদের ট্যাক্সের টাকায় এত বাহিনী-গোয়ান্দা পোষার প্রয়োজন কী! এর উপর এই 'পিয়ন চোরা' কী অনায়াসেই না এই দেশের ঝানু গোয়েন্দাদের চোখে চোখ রেখে আমেরিকা চলে গেছে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে!
 
ভাবা যায়, কুমিল্লায় খন্দকার মোশতাকের জন্ম এই কারণে তিনি সমস্ত কুমিল্লাবাসীকে শাস্তি দিতে চান। পারলে কুমিল্লার নাম বদলে দিতে চান:
 
শত-শত প্রাণ ঝরিয়ে অবশেষে দেশ ছাড়লেন তিন বারের বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! সব কিছু পেছনে ফেলে, লক্ষ অনুসারীকে বিপদে ফেলে:
 
আমরা এখন জানি, শেষ সময়েও তিনি আরও রক্তের স্রোতের দিকে হাঁটছিলেন। একটা প্রাণ যেন তার কাছে কেবল একটা সংখ্যা:
 
অবশেষে ছাত্রদের চাপের মুখে মহামান্য রাষ্ট্রপতি (দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই দেশের অধিকাংশ মানুষ রাষ্ট্রপতিকে চেনে না!) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেন।  

 
এদিকে আন্দোলনকারীরা 'সন্দেহজনক দেরি' হচ্ছিল বলে বঙ্গভবন ঘেরাওয়ের হুশিয়ারিও দিয়েছিল!

শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পরই শুরু হয় বিভিন্ন অঘটন, নৃশংসতা, হিংস্রতা। মানুষের দীর্ঘ বহু বছরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। অনেক জায়গায় শেখ হাসিনার ছবি নামানো হয়েছে। 
তার বাবার প্রতিকৃতি বিনষ্ট করা হয়েছে। অবশ্য এটা নিন্দনীয়। দেশ স্বাধীনের পেছনে শেখ মুজিবর রহমানের অবদান এই প্রজন্ম বিস্মৃত হওয়াটা অবশ্যই সমীচীন না। তাঁর আত্মত্যাগ ভুলে যাওয়াটা স্রেফ আত্মঘাতি এক ভাবনা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পেছনে আরও অনেক মানুষের পাশাপাশি এই মানুষটার অবদানও অপরিসীম। এই প্রজন্মকে চেনানো হয়নি একজন মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দিন আহমেদের মত মানুষদের কথা! আমাদের সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানি। এই সব মানুষদের কথা আমরা বিস্মৃত হয়েছি:
 
তবে কেউই ফেরেশতা না! কারও কর্মকান্ড নিয়ে আপত্তি থাকতেই পারে, সে ভিন্ন আলোচনার বিষয়। আর ভাবা যায়, হাজারের উপর একটা মানুষের ভাষ্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে, যথারীতি আমাদের টাকায়...!
 
চিন্তারও অতীত এটা, একটা স্বাধীন দেশে বাম হাতে ফুল দেওয়ার কারণে একজন শিক্ষককে জেল খাটতে হয়। যেমন দেশ তেমন এর বিচারক:
 
একটা কিশোরকে জেলে যেতে হয়:
 
তন্ময় মল্লিক নামের একজনের ৭ বছর জেল হয়ে যায়:
 
বাবু নামের আরেকজনের ৭ বছর জেল!
 
আজব একটা দেশ। এ তো দেখি আরেক নর্থ কোরিয়া!
 
এমন অসংখ্য উদাহরণ! আমাদের অপার সৌভাগ্য যে, নর্থ কোরিয়ার মত কেবল নির্ধারিত ছাঁটে চুল কাটাতে হয় না।
 
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের সময় ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত পত্রিকা পড়ার এক্সেস ছিল না:
 
একটা প্রশ্ন অনেককে করতে দেখেছি। কত শত কর্ণার বানানো হলো, এই প্রজন্মকে এত্তো-এত্তো মুক্তিযুদ্ধ পড়ানো হলো, ফল কী দাঁড়াল?আহা, আপনি তো কেবল একটা বই-ই পড়িয়েছেন। এক বইয়ে যারা সব সমস্যার সমাধান খোঁজে তাদের সঙ্গে অন্তত জ্ঞানের আলোচনা চলে না। একটা মানুষকে আপনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বানিয়ে দিচ্ছেন! ভাইরে, একটু নীচে নেমে শত বছরে আসেন না।
এই প্রজন্মকে কেন পড়ানো হলো না 'একজন শুয়োর-চড়ানো বীর প্রতীক হাজারি লাল'-এর  কথা। একজন দুলা মিয়া, একজন উক্য চিংয়ের কথা। যাদের ভয়ে পাকিস্তান আর্মি কাঁপত থর থর করে! এমন কত শত বীরের কথা!
 
যাই হোক, কিছু ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে এসেছে। এরমধ্যে দুইটা নমুনা নিয়ে আমি এখন আলোচনা করব। আক্ষরিক অর্থে যেটা আমাকে চমকে দিয়েছে:
এখানে ক্যামেরার পেছন থেকে শ্লোগান দিচ্ছে, 'নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর'। কেন? ভাঙ্গাভাঙ্গির সঙ্গে এই শ্লোগানের মানে কী!
অন্য একটা ভিডিও ক্লিপ আমি এখানে দিতে চাচ্ছি না। এটা এমন বিভৎস, অমানবিক যেটা সহ্য করা যায় না। আওয়ামীগ এক নেতার শরীর বিকৃত করা হয়েছে। নগ্ন করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে...! সহ্য করার মত না। এটা শাস্তিযোগ্য  অপরাধ।
ওখানেও এই একই শ্লোগান। কেন? বেছে-বেছে এই শ্লোগান কেন?আমার ধারণা, এই কাজটা কারা করেছে? যারা-যারা লুজার তারা। এই শ্লোগান শুনলে সাধারণের মধ্যে একটা ধারণা কাজ করবে, নির্ঘাত এটা জামাতের কাজ। এই শ্লোগানের সঙ্গে এদেরকে ট্যাগ করে দেওয়াটা সহজ।
এই ধারণা দেওয়াটা সহজ হবে যে দেখো জঙ্গিরা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এবং তাদের কাজের ধরণটা এমন! যথারীতি জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামলীগ ব্যতীত উপায় নাই।
আচ্ছা, ধরুন আমি একটা ব্যাংক লুট করলাম। আমি যদি একটা ব্যাংক লুট করার বুদ্ধি রাখি তাহলে এটুকু বুদ্ধি তো আমার ঘটে থাকার কথা যে ওখানে কোন ফুটপ্রিন্ট বা সিগনেচার ফেলে আসা যাবে না।  নাকি আমি ম্যানেজারের টেবিলে গোটা-গোটা অক্ষরে আমার ফোন নাম্বার লিখে রেখে আসব যে 'মুঝে পাকড়ো'- আমার বাড়ি ওমুক জায়গায়!   
 
যেটা বলেছিলাম, অক্ষরে-অক্ষরে মিলে গেছে। শুরু হয়ে গেছে! বলেছিলাম না, লুজার কারা? ভারত। কিভাবে সেটা নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করব। শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারতন্ত্রের ক্ষমতা পতনের পর থেকে ঘটনা এতো দ্রুত ঘটেছে যে ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেশে সামাল দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব ছিল না। তার পরও এই প্রজন্ম ছোট-ছোট হাত দিয়ে অনেক কিছুই সামলিয়েছে। সেটা পরের আলোচনা।
এখন ভারতের একটা মিডিয়ার খবর প্রচারের নমুনা দেখুন। এই মিডিয়ার প্রত্যেকটা কথা ব্যাখ্যা সময় করে দিতে হবে। এখন সময়ের বড় অভাব। সঞ্চালক ভদ্রলোক যে ভঙ্গিতে উপস্থাপন করছেন গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। যে ভঙ্গিতে লাফালাফি করছিলেন আমি তো ভয়ে-ভয়ে ছিলাম ছাদে না মাথা ঠুকে যায়:

পরে সময় করে এই সমস্ত বক্তব্য লাইন-বাই-লাইন ব্যাখ্যা করব। প্রথমেই আমি হাঁটু গেড়ে বলি, এই আন্দোলনে হিন্দুদের উপর অন্যায় হয়ে থাকলে এর জন্য আমরা দেশবাসি ক্ষমা প্রার্থনা করি। এই দেশের একটা হিন্দু যেন অনিরাপদ বোধ না করেন। এই দেশটা যতটা আমার ততটাই তাঁদের।
শিক্ষার্থী, এই প্রজন্ম যেটা করেছে এটা একটা বিপ্লব। ইতিহাস সাক্ষি, প্রত্যেকটা বিপ্লবের পরই অসংখ্য পশু তার সমস্ত পশুত্ব নিয়ে নেমে পড়ে। এবারও তাই হয়েছে। অনেক নৃশংসতা হয়েছে, লুটপাট হয়েছে। সবগুলোই নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
 
এই নৃশংসতা যাদের উপর হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলমান, হিন্দু এক শতাংশ হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। কিন্তু তাই বলে ভারত আমাদের বিষয়ে এভাবে বলার অধিকার রাখে না। আমরা কি ভারতকে জিজ্ঞেস করেছি, কাশ্মিরের মুসলমানদেরকে আপনারা কী করেছেন?
উপস্থাপক অনির্বান সিনহা, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রতি দেখি আপনাদের খুব দরদ! তিনি না বলেছিলেন, 'ভারতকে আমি যা দিয়েছি তা আজীবন মনে রাখবে'। কই, আপনারা তো দেখি এখন তাকে আশ্রয় দিতে চাচ্ছেন না! এ তো স্রেফ আপনাদের নেমকহারামি! আপনারা কেমন নিমকহারাম এটা শেখ হাসিনার মুখ থেকেই নাহয় শুনুন:
 
ভারতকে দিতে গিয়ে আর কিছু বাকী রাখেনি। আমার ধারণা ভারতের কাছে আমরা জনগণের আন্ডার গার্মেন্টসের মাপও আছে। আমাদের দেশের ডাটাও ভারত যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করত:

 
তা, আপনার দেশের লোকজনরা কি বলছে একটু শুনুন তো:
 
আর অনির্বাণ শুনুন, শেখ মুজিবর রহমানের অসংখ্য ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয়েছে, এ সত্য। বিশেষ করে যে '৩২ নম্বর বাড়ি' পোড়ানো হয়েছে! আমার ব্যক্তিগত মত, এটা নিন্দনীয়। এটা ইতিহাসের একটা অংশ। আপনি সন্তানের অপরাধের দায় তো আর পিতাকে দিতে পারেন না (যেমনটা গোলাম আজমের দায় তার সন্তানকে)। কিন্তু আপনার সন্তান যখন তার পিতাকে পুজনীয় করে ফেলবে হাজার ভাস্কর্য বানিয়ে ফেলবে তখন মানুষের ক্ষোভ থাকাটা বিচিত্র কিছু না। জাতির পিতা সবার কাছে পিতা হবে এমনটা আশা করাটা বোকামী! যেমন আহমদ ছফার ভাষায় [২০]:
"আমি তোমার বাবাকে বাবা ডাকতে যাব কোন দুঃখে? তোমার বাবাকে পৃথিবীর সমস্ত লোক বাবা ডাকলেও আমি ডাকবো না, তাঁকে অনেকে জাতির পিতা বলে থাকেন, আমি বলি না...।" (আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী /মোহাম্মদ আমীন)
তো, এই ভিডিওতে এই কারণে তিনি (উপস্থাপক) আমাদেরকে জারজ সন্তান বললেন! ওহে চুতিয়া, আপনি কী উপস্থাপক নাকি 'র'-এর এজেন্ট! আপনি কার পারপাস সার্ভ করছেন!
এখানে অন্য প্রসঙ্গ বলি, কেউ-ই মহাপুরুষ না। আপনাদের মহাত্মা গান্ধি নিয়ে আপনাদেরই দেশের অসংখ্য লেখকের লেখা আমি এখানে দিতে পারি: 
"দিনের পর দিন গান্ধি উলঙ্গ অবস্থায় থেকে যুবতিদের সঙ্গে রাত্রিযাপন করতেন এটা নাকি ব্রক্ষাচারের নমুনা! গান্ধির শিষ্য বল্লভ  ভাই প্যাটেল স্পষ্ট করে বলেন, 'আপনি ব্রক্ষচারি নন, অধর্মচারী'।" (গান্ধিজীর অপকর্ম, অলোককৃষ্ণ চক্রবর্তী, পৃ;১৬)
"১৯৩১ সালের ৫ই মার্চ গান্ধি-আরউইন প্যাক্ট স্বাক্ষরিত হলো। গান্ধির কথা  অনুযায়ী সমস্ত কংগ্রেস কর্মী মুক্তি পেল। দেশবাসীর প্রবল দাবীর মুখেও গান্ধি বীর ভগৎ সিং, রাজগুরু, শুকদেবের প্রাণদন্ড রোধের জন্য মুখ খোলেননি! ১৯৩১ সালের ২৩ মার্চ তাদের ফাঁসি হয়ে যায়।" (অগ্নিযুগের একটি অধ্যায়: সাপ্তাহিক বাসুমতি, ১৮.৪.১৯৬৮)
এখন গডসে মহাত্মা গান্ধিকে মেরে ফেলল! বা কেউ গান্ধির ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলল তাহলে আমরা কী পারি ঠিক এই কথাটাই ভারতবাসীকে বলতে? না, আমরা পারি না। আমরা আপনাদের পর্যায়ে নেমে আসতে চাই না। কারণ এটা আপনাদের জয় আমাদের পরাজয়।

সবাই মিলে মন্দিরগুলো সেভাবেই রক্ষা করবে যেভাবে মসজিদ রক্ষা করা হয়:
 


মসজিদে-মসজিদে মাইকিং করা হচ্ছে:
 
কোথাও-কোথাও পালা করে লোকজনেরা পাহারা দিচ্ছেন:
 
ভাল কথা, বাংলাদেশের এই হিন্দু ভদ্রলোক অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক কি বলছেন একটু শুনুন তো:
 
ওহে, অনির্বান সিনহা, আচ্ছা এই সব বাদ দিলাম- আপনাদের দেশের মন্ত্রীরা বা গুরুত্বপূর্ণ লোকজনেরা কি বলছেন একটু শুনি:
 
পূর্বেই বলেছি কোন প্রার্থনাস্থল ভাঙ্গা চরম অপরাধ সেটা যদি কোন উপজাতির একটা পাথরের টুকরা হয়, তাও। আপনি এর অসম্মান করতে পারেন না। কিন্তু কিছু অপপ্রচারের নমুনা দেখুন:
 
লিটন দাসের ভেরিফাইড ফেসবুক স্ট্যাটাস: 
লিটন দাস এটা তার নিজের ভেরিফাইড একাউন্টে পোস্ট করেছেন।

এদিকে এই দাদাকে দেখুন! তিনি বলছেন, উত্তরায় ৫০০ হিন্দু আক্রান্ত। এটা সবৈব মিথ্যাচার! এটাও সত্য, উত্তরাসহ ঢাকার অনেক জায়গার লোকজন ডাকাত দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, প্রতিহতও করেছে। এদের প্রায় সবাই মুসলমান।
এবং ঠিক শপথ গ্রহণের পূর্বে একট্টা হয়ে ডাকাতির চেষ্টা কেন করা হয়েছিল এটা অনুমান করা কঠিন না।
 
শুনুন, দাদা ওরফে সিং সাহেব, দয়া করে আমাদের দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবেন না। আমাদের মুখপাত্র আপনাদের মিডিয়ায় কী বলেছেন, শোনেননি? লাউড এন্ড ক্লিয়ার:
 
দেশ অস্থিতিশীল করার নমুনা আমরা দেখতেই পারছি:
 
ভারতের দাদারা এটা চিৎকার করে বলেছেন, নোয়াখালিতে হিন্দুদের উপর অন্যায় হচ্ছে তাকে তুলনা করেছেন গান্ধীর সময়ের সঙ্গে।  অথচ হিন্দু ধর্মের লোকজনেরা নিজেরাই নিজেদের মন্দিরে আগুন দিয়েছে। ভারতের মিডিয়া:
প্রত্যক্ষদর্শীও আছে:
 
পশু পশুই! দয়া করে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। হিন্দু-মুসলমান বলে বিভাজন করার চেষ্টা করবেন না। এখানে দেখুন, এই মানুষটা কিন্তু হিন্দু না। এর সঙ্গে পশুত্বের সর্বোচ্চ আচরণটাই করা হয়েছে। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না:
এরচেয়ে লজ্জার এরচেয়ে অমানবিক আচরণ আর কিছু হতে পারে না! এখানে এসে সময় থমকে যায়। একটা মানুষ মৃত, এখন সে সব কিছুর উপর চলে গেছে। একটা মৃতদেহকে এভাবে অপমান করার পর আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই রায়পুরের লক্ষ মানুষ আজ নগ্ন, স্রেফ নগ্ন!
 
ও দাদারা, এই হিন্দু ভদ্রলোকের নাম হচ্ছে রতন কুমার রায়:
এই কাজটা তিনি করেছেন মহিলাদেরও সামনে। এই (অ)মানুষটাকে কেউ ধোলাই দিলে আপনারা কি বলবেন, এদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে?
 
ওয়েল, এই ভদ্দরনোকের নাম হচ্ছে মৃনাল কান্তি। আইনপ্রণেতা মানে সংসদ সদস্যও ছিলেন। ইনি আবার কামেল একজন মানুষও! সেটা বলতে গেলে আমাকে হারপিক দিয়ে কুলি করতে হবে। সে প্রসঙ্গ থাকুক। তিনি মিছিল নিয়ে যাচ্ছির হই-হই করে। তো, একজন আস্তে করে বললেন যে, মসজিদে নামাজ হচ্ছে। এই মৃণাল কান্তি নামাজ নিয়ে যে মন্তব্য করেছে সেটা এতো অশ্রাব্য, এতোই কুৎসিত যে এখানে আর লিখলাম না!
এখন এই মানুষটার কেউ কেশ স্পর্শ করলে দাদারা কী বলবেন হিন্দুদের উপর অত্যাচার হয়েছে!
আর আমাদের মোল্লা সাহেবরা, আপনারা কোথায় ছিলেন? 'কুহুতুর পর্বতে' ওয়াজ করছিলেন! কই, আপনাদের কারও প্রতিবাদ তো চোখে পড়ল না! আপনারাই তো, যারা বাংলাদেশে ইসরাইলী দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেন!
হাসিনার সময় তো মুখে রা ছিল না এখন গর্ত থেকে বের হয়ে বড়-বড় কথা বলছেন, আবু সাঈদ আত্মহত্যা করেছেন:
এমনিতে এরা জিহাদের কথা, শহীদের কথা খুব বলেন। তা অন্যায়-অবিচার, অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা, হাসতে-হাসতে মৃত্যুকে বেছে নেওয়া কী জিহাদ না? এমনিতে ওয়াজ করা [৪১] ব্যতীত এদের কোন কাজ করতে দেখি না।         
 
হ্যাঁ, লুটপাট হয়েছে, এ সত্য। শুরু হয়েছিল 'গণভবন' থেকে। এরা পারলে গণভবন উঠিয়ে নিয়ে যায়:
 পারলে গণভবনের ঘাসও উঠিয়ে নিয়ে যায়:
বিভিন্ন লোকজন মিশে গেছে। অনেকেই জাত লুটেরা। আবার কারও-কারও মাথায় আসেনি যে এগুলো সব রাষ্ট্রীয় সম্পদ। কেউ-কেউ স্মারক চিহ্ন হিসাবে কিছু একটা নিতে চেয়েছে। তারপরও এ বড় লজ্জার!
 
ভাবা যায়, এই ভদ্রমহিলা গণিমতের মাল মনে করে গুচির আস্ত  ট্রলি-ব্যাগ উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভুল না-হয়ে থাকলে ইনি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার! বর্হিবিশ্বে আমাদের মুখ দেখাবার আর জায়গা রইল না। এই ভদ্রমহিলার ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল করা হোক। এই লোভী মহিলার কাছে রোগী নিরাপদ না। এদের কাছে একটা  প্রাণ স্রেফ টাকার একটা বান্ডিল!

এখানে যে দেখা যাচ্ছে জামাই-বউ মিলে লুট করে নিয়ে বাসায় আবার ছড়িয়ে বাজার জমিয়ে বসেছে। এ নাকি আবার বি-রা-ট বড় উদ্যোক্তা। নৈতিকতা নিয়ে অনেক বড়-বড় কথা বলার অভ্যাস :
পরে অবশ্য ফেরতও দিয়েছে। তাতে কী আসে যায়
:
তারপরও আমি বলব লুট করাটা, এটা শাস্তিযোগ্য এবং মানবিক অপরাধ! আমি আমার সঙ্গে লেখালেখির অনেক সহযোদ্ধাদেরকে বলতে, লিখতে দেখেছি এই সমস্ত কারণে আমাদের সন্তানদের পুরো অর্জনটাকে বিলীন করে দিতে। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলি, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কী লুটপাট হয়নি?
অবাঙ্গালীদের কলকারখানা, টাকা-পয়সা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কী লুট হয়নি? কারা লুট করেছিল? কিন্তু এই দেশের লোকজনদের সবাই কী লুটেরা ছিল? না, ছিল না। তাই বলে কি আপনি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে খাটো করতে পারেন?
ওহ, ভাল কথা, অন্য সব বাদ দিলাম- ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের প্রায় ১ লক্ষ সৈন্য যে আত্মসমর্পণ করেছিল, এদের কাছ থেকে জব্দ করা গোলা-বারুদ-ট্যাংক, এই সব কোথায়? কারা নিয়ে গেল? ভারত কি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিল? এটা কি লুট না?
আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, গণভবন জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হোক এবং এই বিপ্লব নিয়ে যতসব তথ্য-উপাত্ত আছে তা দিয়ে গণভবন ছেয়ে ফেলা হোক। এই প্রজন্ম জানুক তাদের সঙ্গে কী করা হয়ে ছিল! গণভবন গণমানুষের হোক [৪০]। 
 
সংসদ ভবনে-গণভবনে ঢুকে যা করা হয়েছে তা ন্যাক্কারজনক এক ঘটনা:
কিন্তু আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। সময়ের অসম্ভব স্বল্পতা। ১৯৭১ সালে তো নয় মাস সময় পাওয়া গিয়েছিল এখানে তো নয় ঘন্টা সময়ও পাওয়া যায়নি! আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল অনেক পেশার মানুষ। 
আবার এই ছাত্ররাই সংসদ ভবন সাফ-সুতরো করেছে, নিজ হাতে ঝাড়ু দিয়েছে:
 
ভূতপূর্ব সরকার ক্রমাগত অস্বীকার করে এসেছে। গুম করে হত্যা, বিচারবর্হিভূত আটক! যেটা আমরা দেখেছি 'ফাইভ হান্ড্রেড ডেইজ' লেখায় [১৭]! বাস্তবে ফাইভ হাড্রেড ডেইজ সময়টা ৭০০ দিন ছাড়িয়ে গিয়েছিল! একটা পরিবারের জন্য কী ভয়ংকর একটা অধ্যায়। একটা সন্তানের জন্য কী ভারী একটা ওজন!
পরিবার-স্বজন জানতেই পারেন না যে মানুষটা কি জীবিত, না মৃত! কী দুঃসহ একেকটা রাত! যেটা 'আয়নাঘর' নামে পরিচিত! গুম হওয়া লোকজনেরা এসে ভিড় করেন ডিজিএফআই অফিসের সামনে:
 
* 'আয়নাঘর' অনুসন্ধানী-একটা প্রতিবেদনের পর একটা রূপক হয়ে গেছে এখন! আমরা সেফ-হাউজ বা গুমঘর অথবা ইন্টারগেশন সেল ব মতান্তরে টর্চার সেল বলতে পারি। দেশে কিন্তু এর অভাব নাই! এই জিনিসটা একটা থানাতেও থকে। তবে ওই সমস্ত জায়গায় দিনের-পর-দিন, মাসের-পর-মাস, বছরের-পর-বছর কাউকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব না। এর জন্য বিরাট প্রস্তুতির প্রয়োজন। যাই হোক, আমরা আয়নাঘর বলেই আলাপ চালিয়ে যাব।
 
অবশেষে এর সত্যতা মেলে:
 
আহারে-আহারে, ব্যারিস্টার আরমানের মা মৃত্যুর আগে বুক ভরে নিতে পেরেছেন বিস্মৃত হয়ে যাওয়া তাঁর সন্তানের গায়ের গন্ধ:
 
ব্রি. জেনারেল আজমী যার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ৮ বছর! কী অমানবিক একটা শাস্তি! পিতার অপরাধের কারণে তার সন্তানকে কী শাস্তি দেওয়া যায়? তাও 'আয়নাঘর'-এর মত এক অজানা ভয়ংকর স্থানে:
 
কত-কত অন্য ভুবনের গল্প আয়নাঘরের:


'আয়নাঘর' নিয়ে ভারতের মিডিয়ার প্রতিবেদন।
আয়নাঘর নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিবেদন করছেন কিন্তু এর পেছনে যাদের অবদানের শেষ নেই তাঁদের কথা বলছেন না, এ অন্যায়! তাঁরা হচ্ছেন, 'নেত্র নিউজ'-এর তাসনিম খলিল এবং জুলকারনাইন সায়ের খান। তাঁদেরকে স্যালুট।
 
নর্থ কোরিয়াতেও এমন আয়নাঘরের অস্তিত্ব আছে কিনা কে জানে:

আইনজীবী থেকে শুরু করে কোন পেশার মানুষ বাকী নাই যে গুম করে আয়নাঘরে নিয়ে না-যাওয়া হয়েছে:
 
সাংবাদিক কাজলকে [৩৯] উধাও করে দেওয়া হয়েছিল:
 
৩টা রাষ্ট্রীয় খেতাব পাওয়া বীরপ্রতীক এই মানুষকেও ছাড় দেওয়া হয়নি! হাসিনা পারলে বীরশ্রেষ্ঠদেরও আয়নাঘরে নিয়ে যেত।
 
আহারে-আহারে! কত প্রাণ হারিয়ে গেছে আয়নাঘরে:
 
এই বাচ্চাটার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্র ব্যতীত আর কার আছে:
 
এখন তো আরও চাঞ্চল্য তথ্য বের হয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টাকা হাতিয়ে নেওয়া:

কেবল কী আয়নাঘর? বিএনপির নেতা জনাব সালাউদ্দিনের সঙ্গে কী করা হয়েছে! একটা জলজ্যান্ত মানুষকে ভারতে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর একেক করে ৯ বছর হয়ে গেছে! সরকারের উচিত দ্রুত এই মানুষটাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা:
 
বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী? এখন শোনা যাচ্ছে এই মানুষটা আর বেঁচে নেই! অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর পরিবার দেখা করেছিলেন। শেখ হাসিনা এই ছোট্ট বাচ্চাটিকে কথাও দিয়েছিলেন। সরকারী প্রেস নোটের মতই ছিল সে মিথ্যাচার!
 
আয়নাঘরের মত কিছু ঘটনা আছে যার সদুত্তর আমাদের জানা নেই। সাগর রুনির হত্যাকান্ড [১৯]। একটা রাষ্ট্রের জন্য এরচেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই যে এই সব হত্যাকান্ডের এখনও সুরাহা হয়নি!
ভাবা যায়, এই হত্যাকান্ডের তদন্ত রিপোর্ট আদালতে এখনও জমা হয়নি! এক যুগ পেরিয়ে গেছে, ১১০ বার পেছানো হয়েছে। কল্পনার অতীত! এবং আমাদের আদালত এই কারণে কাউকে কঠিন জবাবদিহিতার মুখে ফেলেছেন বলে জানি না!
সাবেক আইনমন্ত্রী যেটা বলেছিলেন এটাকে সম্ভব মশকরা বলা চলে। তিনি বলেছিলেন: "এর বিচার করতে ৫০ বছরও লাগলে..."। তিনি হয়তো অমর বা কচ্ছপের আয়ু নিয়ে এসেছেন কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ বাঁচবই আর ক-দিন! বা সাগর-রুনির সন্তান মেঘ:
 
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীরের সেই নোংরা কথা:
  
অথচ আমরা জানি এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের কাছে সমস্ত তথ্যই আছে। এটা তিনি বহু পূর্বেই সদর্পে বলে গেছেন:
মাহফুজুর রহমানকে ধরলেই তো সমস্ত তথ্য পাওয়া যায়।
 
যেমনটা আমরা এখনও পরিষ্কার জানি না পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ [১৮], যেটা 'পিলখানা হত্যাকান্ড' [২৩] নামেই আমরা জানি।  আসলে তখন কী ঘটেছিল:
 
মেজর সুমন সেনাবাহিনীর এই ভদ্রলোক যে কঠিন অভিযোগ করলেন এর সদুত্তর কে দেবে:
 
ক্যাপ্টেন শাহনাজ পিলখানা খুন নিয়ে যা বলছেন:
 
আরেক ক্যাপ্টেন রফিক:
 
এই প্যারা-কমান্ডোকে ফাঁসানো হয়েছিল তাপসের গাড়ি বোমা হামলায়। একজন প্যারা-কমান্ডো তাপসের মত পুচকে ছ্যাচ্ছোড়কে মারতে ব্যর্থ হবে এটাই তো হাস্যকর! :
 
সোহেল তাজের বক্তব্য আমরা শুনে রাখলাম।
 
আমরা এটাও শুনলাম, তৎকালীন সেনাপ্রধানের বক্তব্য:
তদন্তে জানা যাবে মঈন ইউ আহমেদের ভূমিকা কি ছিল?
তবে আমার স্পষ্ট অভিমত হচ্ছে এটা নিরাপত্তা সমস্যা, এটা রাজনৈতিক সমস্যা না। এটা দমন করার দায়িত্ব ছিল সেনাবাহিনীর, প্রধানমন্ত্রীর না। এই ক্ষেত্রে তিনি একজন অযোগ্য, ব্যর্থ জেনারেল। এতগুলো আর্মি অফিসারের মৃত্যুর জন্য তাকে অনায়াসে দায়ী করা চলে।
এখানে মেজর জেনারেল  মতিন কিছু প্রশ্ন সাংবাদিক সম্মেলনে করেছেন:
 
আর নারায়নগন্জের ত্বকী হত্যা?
চিন্তা করা যায় ৭০ বার সময় বাড়ানো হয়েছে! আমাদের আদালত এমন হৃদয়বান কেন? চাইলেই সময় বাড়িয়ে দেন! ১১ বছর হয়ে গেছে এই খুনের বিচার দূরের কথা আমরা জানিই না আদৌ কী হয়েছিল! এই বাচ্চাটার চোখে চোখ রাখার ক্ষমা এক মাত্র রাষ্ট্র ব্যতীত আর কার আছে? কারা এমন বুকের পাটা!
 
কাউন্সিলর একরামুলের মৃত্যুর কারণটাও আমরা জানি না। মুগ্ধ-র 'পানি লাগবে, পানি'- এই বাক্য যেমন আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায় তেমনি একরামের কন্যার, 'আব্বু তুমি কান্না করতাছো যে...'।
কেন তাঁকে খুন করা হয়েছিল? যার সঙ্গে জড়িত ছিল র‌্যাব। র‌্যাবের কে জড়িত ছিল? তার কি শাস্তি হয়েছিল? জনাব একরামের স্ত্রী এখনও বিচার পাননি! সাবেক দুইজন প্রভাবশালী মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েও কিছুই করেননি!

কল্পনা চাকমার মৃত্যু রহস্যও আমরা জানি না। কি হয়েছিল তাঁর সঙ্গে তিনি কী বেঁচে আছেন? কারা দায়ী [৩৮]:
কোথায় আছে এই ফেরদৌস কায়সার?:
 
মেজর সিনহার [৩৬] খুনের বিষয়েও আমরা জানতে চাই:
 
এটা কি কেবল ওসি প্রদীপের গরম মস্তিষ্কের ফল ছিল? এতে অন্তত আমার ঘোর সন্দেহ আছে। কারণ ওসি প্রদীপের সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের একটা যোগসূত্র ছিল!
 
আহারে আইন, আহারে আইনমন্ত্রী! এই সব খুন নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় তার ছিল না। অথচ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা যে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কথা বলে এলেন এই নিয়ে আইনমন্ত্রী দেরি না-করে জানিয়ে দিলেন, 'প্রিয়া সাহার নালিশ রাষ্ট্রদ্রোহ নয়'।  
এমন কত অজস্র খুনের বিচার। ওয়েল, পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এই আন্দোলনে পুলিশ একটা গুলিও চালায়নি আর পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে শেখ হাসিনা আইজিপিকে বলেছিলেন, আপনি চমৎকার কাজ দেখিয়েছেন! তাহলে এখন অজ্ঞাত স্থান থেকে আপনি, 'আইজিপি অভ পুলিশ' যে একটা ভিডিওবার্তা দিলেন? বাহ, এত দিন জানতাম জঙ্গিরা অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও ক্লিপ চালাচালি করে এমন দেখছি এই ধারণা ঠিক না:
 
এরা কী প্রকারের ঠান্ডা মাথার খুনি এই ভিডিও ক্লিপটা দেখলে খানিকটা বোঝা যাবে। আমাদের বাচ্চাদেরকে যে পাখির মত গুলি কেবল মেরেছে এমনই না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার এবং অন্যরা নির্বিকার ভঙ্গিতে এক প্রকার উল্লাস করেছে। এর খানিকটা নমুনা:
গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে, স্যার। গুলি করি। মরে একটা। আহত হয় একটা। একটাই যায়, স্যার। বাকিডি যায় না। এইটা হইল স্যার সবচেয়ে আতংকের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়। 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, স্বরাষ্ট্র সচিব এরা একেকটা কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার! এদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। আর এই মৃত্যু প্রকারান্তরে কল্পনা করা যায়?!
 
ওই স্বরাষ্ট্র সচিবকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। এটাই যথেষ্ট না, তার বিরুদ্ধে তদন্ত হোক:
 
বাই দ্য ওয়ে, জাহিদ উর রহমান নামের এই ছোটখাটো মানুষটা আমাকে হতভম্ব করে দিয়েছেন। এই মানুষটার ছোট-ছোট ভিডিও ক্লিপ যেন একেকটা আগুনের গোলা! পিনাকি টাইপের নির্বোধ রক্ত চাই-রক্ত চাই টাইপের না। আমার ধারণা ছিল, এই মানুষটা দেশের বাইরে। কারণ দেশের বাইরে থেকে লম্বা-লম্বা কথা বলা খুব সহজ। না, মানুষটা দেশেই থাকেন। দুমদাম করে কখনও-বা কোঁচকানো (মনে হবে পাতিলের ভেতর থেকে সদ্য বের করা হয়েছে!) পান্জাবি নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হয়ে যান এই সাদামাটা মানুষটা:
 
এ খবর এখন পুরনো হয়ে গেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যিনি প্রফেসর ইউনূস নামেই অধিক পরিচিত তিনি বাংলাদেশের অন্তরবর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন। আমি ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, এই মুহূর্তে প্রফেসর ইউনূস ব্যতীত এমন গ্রহণযোগ্য আর কেউ নাই। যারা আমার লেখালেখির সঙ্গে যারা পরিচিত তারা জানেন, প্রফেসর ইউনূসকে নিয়ে  পূর্বে কিছু কঠিন লেখা আমি লিখেছি। আজ আমার লুকাবার কিছু নেই কারণ ওই সমস্ত লেখা প্রিন্ট মিডিয়াতেও আছে।
 
অবশ্য আমার মত অতি সামান্য একজন মানুষ তাঁকে নিয়ে লেখালেখি করলে তাঁর কিছুই যায় আসে না। তবে তাঁর মতের সঙ্গে আমার অমিল থাকতেই পারে কিন্তু তবুও এখন আমি মনে করি তিনি দেশকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবেন।
কেন? একটু বলি আমার চোখ দিয়ে।
সম্ভবত এটা প্যারিস এয়ারপোর্ট। প্রফেসর ইউনূস দেশে ফিরছেন। কড়া নিরাপত্তা প্রদান করে তাকে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টা খুব সামান্য কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখবেন তিনি নিজের লাগেজ নিজেই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের উঁচু মাপের লোকজনের মধ্যে এই চলটই নাই। এরা সামান্য একটা গাড়ির দরোজা নিজে খোলেন না।
 
শপথ নেওয়ার পর তিনি যে ছোট্ট ভাষণ দেন ওখানে আমি-আমি-আমি এই জিনিসটা নাই। তিনি কি, কয়টা ডিগ্রি আছে, বর্হিবিশ্বে কি করেছেন এই বিষয়ে একটা বাক্যও নাই। এটাই উঁচু মাপের মানুষের করণীয়।
 
৮৪ বছর বয়সী এই মানুষটা প্যারিস থেকে দেশে ফিরে শপথ নিয়ে আহতদের দেখতে গেছেন। কোথায় জেট ল্যাগ, কোথায় ক্লান্তি!
 
আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বৃষ্টির মধ্যে এই মানুষটার অটল দাঁড়িয়ে থাকাটা অন্তত আমাকে চমকে দেয়!
 
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়া নরেন্দ্র মোদিজি [২৫] শুভেচ্ছা না-জানিয়ে কী আর পারেন:

কল্পনা করা যায়, কী একটা দেশে আমরা বাস করতাম যেখানে একটা নিরাপদ সড়কের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তায় নেমে আসতে হয়। আর সরকার বাহাদুর লজ্জিত হওয়ার বদলে ছোট-ছোট বাচ্চাদের রক্ত ঝরিয়ে দমন করেছিলেন।
আজ ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে অনেকে ট্রল করছেন:
অথচ একটা নিরাপদ সড়কের জন্য এই মানুষটাও লড়ে গেছেন। কারণ তিনি বিলক্ষণ জানেন প্রিয় মানুষ হারাবার বেদনা।
 
এই দেশেই সম্ভব সড়ককে নিরাপদ করা। শিক্ষার্থীরা এটা হাতেনাতে করে দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা কেউ কী কল্পনা করতে পেরেছি ইমারজেন্সি ট্রান্সপোর্ট চলার জন্য আলাদা একটা লেন থাকবে আবার আমরা সেটা মেনেও চলব!

বা লোকাল বাসগুলো সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে!
 
লম্বা-লম্বা বাতচিত করা খুব সোজা। আমরা নিজেরা যেটা করতে পারিনি এখন বাচ্চারা করে দেখিয়ে দিয়েছে, ক্ষণে-ক্ষণে এদের প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আমরা ভুলে গেছি 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন'-এর কথা? একজন শহীদুল আলমের মত মানুষকে- তাঁর খ্যাতির কথা বাদ দিলেও যিনি ফিলিস্তানের অবিচারের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে ফেরত দেন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি:
এমন একটা মানুষকে পুলিশ নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেছে চোর-ছ্যাচ্চোরের মত! আবার জাজ জানতে চাইছেন শহীদুল আলমের মোবাইলের পাসওয়ার্ড পুলিশ নিয়েছে কিনা! ভাগ্যিস, বিজ্ঞ আদালত এটা জানতে চাননি শহীদুল আলম কী রঙের আন্ডার গার্মেন্টস পরেছেন [২৪]।
"...এ এক বিস্ময়! একজন ফেসবুকে তার পোস্ট পাবলিশ করবেন, যেটা প্রকাশ্য এবং এর উপরই তার অপরাধ বিবেচ্য হবে কিন্তু তার ফোনের পাসওয়ার্ড লাগবে কেন! একটা মানুষের ফোন তার একান্ত বিষয়, অনেকটা অর্ন্তবাসের মত...।" 
এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গে কত অনাচারই না হয়েছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মত মানুষকে মাসুদা ভাট্টি নামের 'বিজ্ঞআনি'[৩৩] অপদার্থ এক-মহিলা জেলে নিয়ে গিয়েছিল, মানহানি মামলায়। সেই ভাট্টিকে সরকার পুরস্কিত করেছিল:
 

বাংলাদেশের মত একটা দেশে যে মানুষটা, মুশতাক আহমেদ, কুমির চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সেই অসম্ভব প্রতিভাবান মানুষটাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সামান্য লেখালেখির অপরাধে পিটিয়ে মেরে ফেলল! 
আর কার্টুন আঁকার অপরাধে কার্টুনিস্ট কিশোরকে প্রায় বছরখানেক আটকে রাখল। পৃথিবীতে এমন দেশ বিরল যেখানে নিরীহ কার্টুন আঁকার জন্য জেলে ভরে রাখা হয়!
কী অমানবিকতা, কী অন্যায়! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন' নামের এই অমানবিক, অসভ্য আইন রদ করা হোক।
 
অথচ এরশাদের সময়ে অনেকেই তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছে। স্কেচ করেছে, কার্টুন এঁকেছে। খালেদা জিয়ার সময়ও। একা শিশির ভট্টাচার্যই সবাইকে শুইয়ে দিতেন। সেই শিশির আজ কোথায়!

শিশিরের মত মানুষ উবে গেছেন, স্রেফ দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেছেন। অথচ কী অসাধারণ ছিল তাঁর আঁকার হাত। মনে হত সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখি। 

স্কেচ: আলী মাহমেদ
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় আমি নিজেই যে সব কার্টুন এঁকেছি শেখ হাসিনার সময় এমন ভাবনা অকল্পনীয় ছিল।
নির্ঘাত আমার স্থান হতো আয়নাঘরে। আপনি আবার গা দুলিয়ে বলেন দেশে বাক-স্বাধীনতা ছিল।

এদিকে বাচ্চাদের রক্ত শুকাবার আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর অস্থিরতার শেষ নেই- একেবারে মহাসমাবেশ করে বসেছে। এটা আমাদের জন্য অস্বস্তিকর!

অন্যত্র এর কিছু প্রতিবাদ দেখে ভাল লাগছে:
 
আরেক ন্যাক্কারজনক কাজ হয়েছে শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্যের পাশাপাশি প্রচুর অন্য ভাস্কর্যও ভাঙ্গা হয়েছে। কিছু ভাস্কর্য যেমন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের! অবশ্য পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ভাঙ্গা হয়েছে শশীলজের ভাস্কর্য- এই সবও এক অপূরণীয় ক্ষতি:
 
ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি! এমন অজস্র ঘটনা:

ভেতরে মানুষজন রেখে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়ি। কেমনতরো অমানুষ আমরা! কী অবাক কান্ড, এত্তো-এত্তো পশু কোরবানি দেওয়ার পরও কত পশু বয়ে বেড়াই আমরা!:
 
এর সঙ্গে আরও অনেক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। এই সমস্ত কেবল যে প্রথম এখানেই হয়েছে এমন না। কোনও দেশের আমূল একটা পরিবর্তন হওয়ার পর এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা অপ্রত্যাশিত। অনেক সময় মানুষকে অতি নিষ্ঠুরে রূপান্তরিত করে। এর একটা চমৎকার উদাহরণ আমরা পেতে পারি চার্লস ডিকেন্সের লেখায়। গিলোটিনে একের-পর-এক শিরোচ্ছেদ করা হচ্ছে আর জনতা দেখছে সরল চোখে, গুনছে মাথা:
"She goes next before him-is gone; the knitting-women count Twenty-Two.  ...The murmuring of many voices, the upturning of many faces..like one great heave of water, all flashes away. Twenty- Three." (A Tale of Two Cities, p: 401)
প্রধান বিচারপতিকে স্বর্ণের তরবারি দিচ্ছেন ডিবির কুখ্যাত ডিআইজি হারুন। আমাদের প্রধান বিচারপতি হাসিমুখেই তা গ্রহণ করেন। আমিন:
আজ প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করলেন। আন্দোলনকারীদের আন্দোলনের মুখে। এর পূর্বে তিনি বন্ধের দিন শনিবারে  'ফুল কোর্ট' সভা ডাকেন! কেন ডেকেছেন এটার সদুত্তর সম্ভবত তিনি আমাদেরকে দিতে পারবেন না।  একটা ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া বলেই অনুমিত হওয়া অস্বাভাবিক না।
 
বিচার বিভাগ ঢেলে সাজাবার খুব প্রয়োজন এখন। বিচারকদেরও জবাবদিহিতা থাকা উচিত। আবুৃ সাইদের মৃত্যু আমরা লক্ষ-লক্ষ মানুষ দেখেছি। হত্যা করেছে পুলিশ অথচ সেই শহীদ আবু সাইদের মৃত্যু মামলায় একটা শিশু বা কিশোরকে একজন বিচারক ৭ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন! এই বিচারককে কেন জবাবদিহিতা করতে হবে না? অবশ্যই করতে হবে। আইনজীবীর মুখে নথি ছুড়ে মারলেন যে বিচারক, তাঁকেও।
 
একজন বিচারকের কী এতোটা পর্যবেক্ষণ নাই যে একজন সম্মানি মানুষ খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে হাঁটছেন, কেন হাঁটছেন? পুলিশ চুম্বন করেছে বলে! একজন বিচারক শহিদুল আলমের মোবাইলের পাসওয়ার্ড নেয়া হয়েছে কিনা এটা পুলিশের কাছে জানতে চাইছেন। তাও সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখার কারণে যেটার প্রিন্ট-আউট নিয়েই মামলা হয়েছে। এটা ওই বিচারককে কেউ জিজ্ঞেস করেছে? তাঁকে কী জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে?
এই সব অনাচার চলে আসছে বছরের-পর-বছর ধরে। 
"হাইকোর্ট। ২৮ আগষ্ট। ২০০৮
১ দিনে বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ প্রায় ৩১৯ মিনিটে ২৯৮ মামলার রায় দিয়েছেন। প্রতি মামলার জন্য লেগেছে গড়ে ৬৩ সেকেন্ড বা প্রায় ১ মিনিট।" (০৯.১১.০৮, মিজানুর রহমান খান/ প্রথম আলো)
চোখ বন্ধ করে ভাবতে গিয়ে আমি শিউরে উঠি ১ মিনিটে একটা করে মামলার রায়! এ-ও কী সম্ভব! একটা রায়ে যে কেবল একটা প্রাণ নির্ভর করে এমন না, নির্ভর করে গোটা একটা পরিবার! আর কেমন করে সম্ভব ১ মিনিটে একটা করে রায় দেওয়া! কেমন করে সম্ভব!! একটা পরিবারকে অন্যায্য রায়ে ভাসিয়ে দেওয়া আর সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। তারচেয়ে গোটা পরিবারকে গুলি করে মেরে ফেলুন...।
 
শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের এই বক্তব্য খুবই গোলমেলে। অন্তবর্তীকালীন সরকার নিয়ে যে রায় বা বক্তব্যটা আমরা প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে আশা করেছিলাম। আফসোস, তিনি, প্রধান বিচারপতি 'পদ ত্যাগ' করে বসলেন। এখন প্রধান বিচারপতির ঠিক এই কথাটাই আগ বাড়িয়ে জয় বলে ফেললেন:  
 
 
শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের কড়া বার্তা দেওয়া শেষ হলে তিনি আবার নতুন বার্তা দিয়েছেন:
এটা ভারত নিশ্চিত করবে! ভারত? ডিয়ার জয়, আপনি-আপনারা নাহয় ভারতের হাত দিয়ে ভাত খান আমরা খেতে যাব কোন দুঃখে!
ভারত নিয়ে আপনি, জয় যেমন আত্মবিশ্বাসী তেমনি হিন্দি ভাষা নিয়েও। ভাল-ভাল! জয়ের মা-ও ভাল হিন্দি বলতেন:
 
জয় নামের এমন বিরাট মাপের আইটির মা-বাপ:

তো, যেহেতু চারদিকে পরিবর্তনের হাওয়া। আমরা ট্যাক্সপেয়ি এখন অবলীলায় চাইতে পারি উপদেষ্টাদের সম্পদের হিসাব জনগণের কাছে দিতে।
তেমনি আমরা এটাও চাই, সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। আদৌ কি তিনি বিনা বেতনে ছিলেন নাকি বেতনভুক্ত। বেতনভুক্ত হলে প্রতি মাসে কত টাকা নিতেন?  
 
অন্তবর্তীকালীন সরকার নিয়ে কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য যথার্থ মনে হয়েছে যে, প্রফেসর ইউনূসের ক্ষমতা থাকার লোভ নেই:
আমিও এই ভয় করি না। কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে একমত। মোটা দাগে এটা অনেকটা এমন, একজন এসপি ওসি পদে যেতে চাচ্ছেন। প্রফেসর ইউনূসের বিশ্বব্যাপি যে সম্মান ছিল তা বাংলাদেশের সরকার প্রধানের চেয়েও অনেক উপরে।
 
প্রধান উপদেষ্টা প্রথমেই আহতদের দেখতে গেছেন। চমৎকার একটা উদ্যোগ। বড় কষ্টে আছে এরা! আমরা একজনের মুখ থেকে শুনি:
 
আবু সাইদের বাড়িতেও প্রধান উপদেষ্টা গেছেন। এখানে আমি যে দৃশ্য দেখেছি বুক ভেঙ্গে আসে:
 
অন্তবর্তীকালীন সরকারের মানবিকতা, কাজ করার দ্রুততা, বিচক্ষণতা এখন পর্যন্ত আপ টু দ্য মার্ক। তবে, একটা কিন্তু থেকে যায়। 
স্বচ্ছতা। এটার খুব প্রয়োজন। সেই কারণে এটাই সমীচীন হবে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্য উপদেষ্টাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জনগণের কাছে প্রকাশ করা।

পাশাপাশি কোনও পরিকল্পনা ব্যয় ওয়েব সাইটে দিয়ে   দেওয়া। এমন অজস্র উদাহরণ আছে ১টা বালিশের দাম প্রায় ৬ হাজার টাকা। এটা আবার ভবনে উঠাতে লেগেছে প্রায় ১ হাজার টাকা!

এমনিতে আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি সাবেক আইনমন্ত্রী, যিনি আইনের ধারক-বাহক তিনি হলফনামায় দিয়েছেন, মাছ বিক্রি করে তিনি বছরে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করেন! এটা ১৮ সালের কথা! কেউ কিন্তু জানতে চায়নি কতশত পুকুরে তিনি মাছ ছাড়েন বা এলাকায় এতো পুকুর কোথায়! অবশ্য ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় জমে থাকা পানিতে সকালে মাছের পোনা ছেড়ে বিকালে বড়-বড় মাছ বাজারে বিক্রি করে থাকলে বলার কিছু নেই।

কিছু-কিছুৃ জায়গায় দেখছি ছাত্র রাজনীতি বন্ধের জন্য জোর দাবী হচ্ছে।
তারচেয়ে জরুরি হচ্ছে, শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা। শিক্ষকদেরও নাকি দল আছে, নীল-সাদা-গোলাপী! একটা সভ্য দেশে শিক্ষকদেরও আবার দল থাকে! বিশেষ করে 'পোষা ভিসি' নিয়োগ বন্ধ করা। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং নিয়ে। তিনি খুব অহংকার নিয়ে বলেছিলেন, ছা-ছপ-সিঙ্গারা নিয়ে। কী কী যে বললেন তা আমার মত সাধারণ মানুষের বোধগম্যের বাইরে! একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বাংলা ভাষাটা শুদ্ধ করে বলতে পারেন না।
"কেবল স্যারের কাছে একটাই জোরালো আশা, অন্তত মায়ের ভাষাটা, বাংলাটা যদি একটু শুদ্ধ উচ্চারণ করতেন তাহলেই আমরা বর্তে যেতাম।" [২৬]
আমি খুব আশাবাদি আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য চমৎকার একটা দেশ হবে এটা। একদিনে তো হবে না, সময় লাগবে। অবশ্য এর কিছু নমুনা আমরা দেখা শুরু করেছি, এটিএন বাংলার মত মিডিয়ার সাংবাদিক অপদার্থ জ ই মামুনও লাইনে চলে এসেছেন। মামুন হয়তো ভুলে গেছেন কিন্তু আমরা ভুলিনি। খালেদা জিয়াকে যখন এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তখন তিনি উল্লসিত হয়ে রিপোর্ট করছিলেন। 'মিডিয়াঈশ্বর' এই অসভ্যের এই বোধটুকু ছিল না যে, একজন মানুষের বাথরুম-বেডরুম দেখানো যায় না, বিশেষ করে একজন মহিলার:
"ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জ, ই, মামুন একজন সিনিয়র মানুষ। তিনিও কী অবলীলায়ই না সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বেডরুম-বাথরুম দেখালেন [২৯]!"
এখন বেচারার চাকরি থাকলেই হয়:
 
চেতনা বড় বিচিত্র। শেখ হাসিনা যখন জামাতের সঙ্গে হাত মেলান তখন কোন সমস্যা হয় না:
 
অথচ খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে অবলীলায় বলেন, খালেদা জিয়া নাকি সারাটা দিন এই একই গান গাইতে থাকেন:
 
দেশটা যেহেতু ওনার আর ওনার বাবা স্বাধীন করেছেন। আর কারও কোন অবদান ছিল না তাহলে কিছুতেই কোন সমস্যা নেই:
 
আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ১০০০ কেজি আম পাঠালেও কোন সমস্যা নাই।
মুক্তিযোদ্ধারা থাকেন আড়ালে:
 
আর বি-রা-ট মুক্তিযোদ্ধা 'চ্যাতনাবাজ' জাফর ইকবাল বা তার ছাত্রদের কোন সমস্যা নাই। কেবল বাচ্চারা পাকিস্তানের নাম মুখে নিলেই তিনি ব্রাশ করার পরামর্শ দেন, উইথ পেস্ট! অথচ মুক্তিযুদ্ধের খুব জরুরি সময়ে তিনি কাটিয়েছেন গর্তে! একজন অমায়িক গর্তবাসী!
তিনি সব দায়িত্ব দিয়ে দাঁড়ানো থেকে বসে এরপর গর্তে ঢুকে যান।
সবচেয়ে বড় কালপ্রিট হচ্ছে জাফর ইকবাল টাইপের মানুষগুলো। আর এদিকে দেখুন, আমাদের তেলতেলে ধামড়া-ধামড়া সব সাংবাদিকদের! কোন এক সদাশয় মানুষ ফাঁকে-ফাঁকে বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য ঢুকিয়ে দিয়েছে। এম সাখাওয়াত হোসেন শুধু-শুধু ক্ষেপেননি!
 
সাংবাদিকদের নিয়ে ফাহাম আবদুস সালামের এটা একটা মাস্টারপিস:
 
সাংবাদিকরা কেমন গলে গিয়ে জুতায় লেপ্টে যায় তার উদাহরণ মোজাম্মেল বাবু একজন। অথচ ভাবা যায় এই বাবই এক সময় 'পূর্বাভাষ' নামের চমৎকার একটা কাগজ বের করত।
 
শিক্ষার্থীরা অসাধারণ-সব কাজ করছে। পুলিশ না-থাকার কারণে এরা ট্রাফিকের কাজ সামলাচ্ছে। অনেক জায়গায় গাড়ির ভেতর অস্ত্র, টাকা, সরকারি নথিও পাচ্ছে। সেনাবাহিনীর কাছে জমা দিচ্ছে:
 
* বাচ্চারা এখন দেয়ালে যেসব আঁকছে এগুলো গ্রাফিতি বলা যাবে কিনা এতে বিতর্ক আছে। সম্ভবত দেয়ালচিত্র বা স্ট্রিট আর্ট বলাটাই সমীচীন। কারণ গ্রাফিতি বলতে যেটা বোঝায় "usually unauthorized writing or drawing on a public surface". 'Unauthorized' এটাই মূখ্য। আন্দোলন চলাকালীন ঝুঁকি নিয়ে লুকিয়ে-চুরিয়ে যেগুলো হয়েছে সেসব নিঃসন্দেহে গ্রাফিতি। যেমন এটার কথা ধরা যাক। অসমাপ্ত! কারণটা আমরা জানি না। কেউ কী রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এটা করছিল। অর্ধসমাপ্ত রেখে পালিয়ে যেতে হয়েছে নাকি করার সময় কেউ গুলি খেয়েছে। আমরা জানি না:

যাই হোক, আমরা এখনকারগুলোও গ্রাফিতিই বলি। তো, কোথাও অসাধারণ-সব গ্রাফিতি আঁকছে:

কিছু তো হাঁ করে তাকিয়ে থাকার মত:
 
কোথাও কাউকে ভাল লাগা উজাড় করে দিচ্ছে। 'সময় টেলিভিশ' যেখানে পুলিশকে উস্কানি দিচ্ছে বাচ্চাদের উপর গুলি চালাতে যেন ভাল একটা ফুটেজ নিতে পারে সেখানে যমুনা টেলিভিশন তথ্যনির্ভর সংবাদ প্রচার করে গেছে দিনের-পর-দিন:
 
এই গ্রাফিতিটার অন্য একটা মাত্র আছে। চারুকলার শিক্ষার্থী-শিক্ষক যখন বছরের-পর-বছর শান্তিনিকেতনি ভাষায় গ্রাফিতি করে গেছে সেখানে ওটার উপর এরা তাদেরটা করেছে:

কাউকে-কাউকে বলতে শুনছি এরা টাকা পায় কই? শোনেন মিয়ারা, অনেকে আনন্দের সঙ্গে সহায়তা করছে, এমনকি প্রবাস থেকেও টাকা-সহায়তা পাঠান। অনেক ছোট-ছোট বাচ্চারা বাবা-মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসে:
 
সবচেয়ে ভাল বিষয় হচ্ছে মাদ্রাসার ছেলেদেরকে দেখছি এরা খুব আগ্রহ নিয়ে গ্রাফিতি করছে। এরা এটা শিখুক: ধর্ম যার যার দেশ  সবার।
আমার কাছে এটা চমৎকার একটা দৃশ্য! কেন এমনটা মনে হবে না! মাদ্রাসার ছেলেরা কী আমাদের কারও-না-কারও সন্তান না? এই দেশের বিপুল একটা সংখ্যাকে অবহেলা করে সরিয়ে রাখাটা কোনও কাজের কাজ না।
তাছাড়া এই বিষয়টা মাথায় রাখলে ভাল হয় মাদ্রাসার ছেলে-মেয়েগুলির অধিকাংশই নিজের ইচ্ছায় এখানে পড়তে আসে না। বাবা-মা জোর করে এখানে পড়তে পাঠান। আল্লার রাস্তায় সেক্রিফাইস করে দিয়ে নিজেরা 'বিন্দাস' ঘুরে বেড়ান! 
যাই হোক, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অসাধারণ কাজের মধ্যে এটা একটা:


কেউ চাইলে করুক না সংস্কৃত ভাষায়। পারলে পালি ভাষায় করুক। সমস্যা তো নাই:
 
ট্রাফিক পুলিশ না-থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ট্রাফিকের দায়িত্বে নেমে পড়ে যা চমৎকার উদ্যোগ  কিন্তু এদেরকে এটা ভুললে চলবে না এরা এখনও শিক্ষার্থী। এখনও শেখার অনেক কিছু বাকী।
যেমনটা এই মেডিকেল শিক্ষার্থী 'ফিমার', মানুষের শরীরের একটা হাড় নিয়ে নেমে পড়েছে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে। মেডিকেল কলেজে 'ফিমার' নিয়ে এরা কেউ-কেউ অনেক সময় মারামারিতে নেমে পড়ে এটা শুনেছিলাম কিন্তু আজ দেখলাম, অন্য ভঙ্গিতে!
এটা করা যায় না, শেখার জন্য মানুষের হাড় ব্যবহার করা এক বিষয় আর অসম্মান করা অন্য।
অবশ্য এদেরকে পুরোপুরি দোষ দেওয়া চলে না কারণ এদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কী শেখানো হয়!
যেমন দেখুন, এখানে মেডিকেল কলেজের সব বড়-বড় ডাক্তার উপস্থিত। ঘটনা হচ্ছে চট্টগ্রামের এক বড় ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। অনেক পরে তাঁর কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করে পুলিশ। সেটাই দেখছেন স্যাররা।আহারে, দেশে একটা টেবিলের বড় অভাব! এই নির্বোধদের মাথায় এটা আসেনি যে এভাবে একটা মৃতদেহ বা মৃতদেহের হাড়ের প্রতি অসম্মান করা যায় না।   
 
বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রবীণ এবং অসম্ভব অভিজ্ঞ একজন মানুষ। তাঁর কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। তীব্র আশা, আমাদের বাচ্চাদের জন্য চমৎকার একটা দেশ রেখে যাবেন। তবে আপনি একটু কথা কম বললে ভাল হয় কারণ আমাদের মিডিয়া খন্ডিত বক্তব্য প্রকাশ করবে। আর আপনিও, ডিয়ার, মিডিয়ায় প্রচুর কথা বলেন!
আমরা আশা করি, আমাদের পলিসি মেকাররা হবেন  জনবান্ধব। এটা বলতে এমন না যে তিনি ডেকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে চা খাবেন। দেশের সমস্যা, লজ্জা-অপমান-কষ্ট আমাদের মত তাঁদেরকেও যেন স্পর্শ করে।
যেমনটা তিনি এখানে বলছিলেন গণভবনের পাঙ্গাস মাছ, মুরগি লুঠ করে নিয়ে যাওয়ার কথা:

তাঁর পরিষ্কার বক্তব্য আমাদেরকে মুগ্ধ করে। যেমনটা তিনি বলছেন, বাচ্চাদের উপর ব্যবহারের জন্য প্রাণঘাতি মারণাস্ত্র পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছিল:
 
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে আমাদের অনেক দাবী। আমাদের বাচ্চাদের উপরে যে অমানবিক নির্যাতন হয়েছে বিশেষ করে প্রাণনাশের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা। যেটা আমাদের 'বিজ্ঞ আদালত'-এর চোখেই পড়েনি কারণ আমাদের অধিকাংশ বিজ্ঞ আদালত এ দেশে দূরের কথা এ গ্রহেই থাকেন না!
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আপনার তো জানার কথা স্নাইপার রাইফেলের ভয়াবহতা। অনেক দূর থেকে মাথায় গুলি করা হয় কেবল মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে। আপনার কাছে সবিনয়ে জানতে চাই, বাচ্চাদের উপর কারা ব্যবহার করেছিল এই সমস্ত মারণাস্ত্র? শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে ধরেছে এমন ভয়ংকর এক অস্ত্র, 'স্নাইপার রাইফেল' গাড়ির বুট থেকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে:
 
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, দখলদার-চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে  আপনি কঠোর হবেন এটা আমাদের প্রবল আশা সে যে দলেরই হোক:
আপনি কঠোর হোন যথাযথ শাস্তি দিন, আইনের আওতায় কিন্তু এহেন বক্তব্য অন্তত আপনার কাছ থেকে আশা করি না, সরি: 
 
এম সাখাওয়াত হোসেন এই ভদ্রলোককে সরিয়ে দেওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত। এই মানুষটা সম্ভবত বিস্মৃত হয়েছিলেন বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ যে ভঙ্গিতে গুলি চালিয়েছে এই নৃশংসতা বিরল:
 


এই সব দৃশ্য দেখে আপনি ঘুমিয়েছেন কেমন করে:
শেখ হাসিনাকে আপনি আবার চা-এর দাওয়াত দিচ্ছেন। আপনাকে পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষাদের সঙ্গে বলি, আপনার জন্য এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হতো, পদত্যাগ করলে।
 
অনেকে জেন-জিদেরকে (Generation zoomer)-কে 'গেন্জি' বলে ট্রল করছেন। কিন্তু এদের কল্যাণে আমাদের এমন অনেক কিছুই দেখার সৌভাগ্য হয়েছে যা অভূতপূর্ব! আমাদের বালকবেলায় আমরা দেখেছি ওই সময় বাসার সহায়তাকারীদেরকে 'চাকর' বলা হত। মালিক নামের লোকগুলোর মধ্যে অনেকে কোথাও রিকশা করে গেলে এদেরকে রিকশার পাদানির কাছে বসিয়ে রাখত। সে এক বড় হৃদয়বিদারক এক দৃশ্য!
আমরা এখন এই সভ্য সমাজে তখনকার সেই অনাচার নিয়ে বিস্তর হাসাহাসি করি এই বলে যে ওই সময়ের লোকজনের শিক্ষার ঘাটতি ছিল ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু এখনকার সময়ে বিস্তর লেখাপড়া কি একটা গাড়িতে মালপত্রের সঙ্গে একটা মানুষকে এভাবে নিয়ে যাওয়া যায়! এই যুগে...!

যুগে-যুগে এমনটাই চলে আসছে। যারা সেক্রিফাইস করে, বীর তারা থেকে যায় পর্দার আড়ালে। চিন্তা করা যায়, এই বাচ্চা মেয়েটি এসেছিল ব্যাকপ্যাকে প্র্যাকটিক্যাল খাতা নিয়ে। আত্মরক্ষার জন্য। এই টেকনিক অবশ্য অনেককে গুলি থেকেও বাঁচিয়েছিল:
  এই ছোট্ট বাচ্চার সাহস:
 
এখন এঁদের অকল্পনীয় সাহস ম্লান করে দিচ্ছে এই সমস্ত অপদার্ধ। পুলিশ-ট্রাফিক ছিল না-বলে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছে। অনভিজ্ঞ এরা ভালই সামলিয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত সুযোগসন্ধানী টিকটকাররা ফাজলামি শুরু করে দিয়েছে। এই সমস্ত টিকটকারদের জাস্ট কান ধরে রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেয়াটা জরুরি, অতি জরুরি। এটাও জরুরি যথা সম্ভব দ্রুত ট্রাফিক পুলিশ তার কাজ শুরু করবে।
 
আমাদের দেশের কলাকুশলীদের আবেগ দেখে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এই যে আমাদের চঞ্চল চৌধুরি সাহেব মা-আ-আ বলে যে ডাক দিলেন:
 
এই ওলামাদের দেখেও মনে হবে 'ওলামালীগ':

পুলিশ ইউনিফর্ম গায়ে যেসব কথা বলে মনে হয় আওয়ামীলগের নিজস্ব পুলিশ:
 
এটা নাহয় গেল- সেনাবাহিনীর এই ভদ্রলোক সম্ভবত মেজর জেনারেল পদমর্যাদার (পরে জেনেছি যশোর সেনানিবাসের জেওসি)। এমন উদাহরণ বিশ্বে বিরল, ইউনিফর্ম-পরা সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল কারও পা ছুঁয়ে সালাম করছে!
সব হাসিনাময়! যেন অনেকটা এই রকম, ফালুময়:
 
শহীদুল্লা কায়সার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যে নাম শ্রদ্ধায় জড়িয়ে আছে। তাঁর মেয়ে শমী কায়সার বিটিভিতে এসে যে প্রকারে কান্নাকাটি করল আরেকটু হলে আমি নিজেই কেঁদে ফেলতাম।
বুঝলাম না, এরা কী শিল্পী, না জানোয়ার! কোন-একটা ধ্বংসযজ্ঞ গিয়ে এরা কী একটা প্রাণ আগে বাঁচাবে নাকি জড় পদার্থ!
আহা, আপনারা হাসপাতালে গিয়ে একটু আহতদের দেখে আসুন না। ওখান থেকে ফিরে এসে দালালদেরও তো গলা দিয়ে ভাত নামার কথা না। অন্ততএই ২২ বছরের এই বিধবাকে স্বান্তনা দিয়ে আসুন:
একটু গিয়ে ঘুরে আসুন না বিভিন্ন হাসপাতালে:
 
'মেট্রো রেল' চালু হচ্ছে সহসাই।
আমরা শুনেছিলাম চালু হতে আনুমানিক ১ বছর লাগবে:
আমার ধারণা, চায়নাকে ভাল টাকা দিলে ১ বছরে নতুন একটা মেট্রো রেল বসিয়ে দিত।
 
যানজটে প্রধান উপদেষ্টা বসে আছেন বা আটকে আছেন, এই নিয়ে দেখলাম অনেকের খুব গাত্রদাহ। 
এখন তারা বলার চেষ্টা করছেন প্রধান উপদেষ্টার সময় খুব মূল্যবান, সময়ের অপচয় হচ্ছে  হাবিজাবি কথাবার্তা। কেন রে বাপু, তাঁর সময়ের দাম আছে আমাদের কী সময়ের দাম নাই!
আমাদের দেশে সাধারণ একটা সচীবের জন্য যদি এই হয় অবস্থা তাহলে তো আর কথা চলে না। ওই সচীবের কিন্তু কিছুই হয়নি!
"২০১৯ সালের জুলাই মাসে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে ভিআইপি প্রটোকল দেওয়ার নামে একজন যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি না ছাড়ায়, অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যু হয়।"
তো, প্রফেসর ইউনূস যেটা করলেন এটা তো অসাধারণ একট উদাহরণ! তিনি এখন অনায়াসেই বুঝতে পারবেন জনসাধারণের যানজটে আটকে পড়ার কষ্ট। এবং তখন তাঁর আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে কেমন করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
 
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা একটা দেশে আলাদা করে কেন চাইতে হবে! রাষ্ট্র প্রত্যেকটা মানুষকে নিরাপত্তা দেবে। রাষ্ট্র মানে বাবা, বাবা কী তার সন্তানদের জন্য আলাদা-আলাদা দায়িত্ব পালন করে? এমনটা হয়ে থাকলে সে বাবা অবশ্যই খারাপ বাবা।
প্রফেসর ইউনূস যেটা পরিষ্কার করে বলে দিলেন:
কিছু বিষয় আমার চোখে আটকায় প্রফেসর ইউনূস যে চেয়ারে বসে আছেন সেটা সাধারণ একটা প্লাস্টিকের চেয়ার। আমাদের দেশে এই চল একেবারেই অচল! চোখের আরাম!
 
আল-জাজিরার তানভির চৌধুরিকে আমরা ভুলে গেছি! অথচ সব যখন বন্ধ, দেশের মিডিয়াও তেমন কিছু প্রচার করছে না তখন আল-জাজিরার এই প্রতিবেদন অসাধারণ একটা কাজ করেছিল:
 
বিস্মৃত হওয়া যাবে না মানজুর আল মতিনের কথা:
 
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন কন্ঠশিল্পী সায়ান:
 
অভিনয় শিল্পী আসাদ। আন্দোলনের সময় একেবারে সোজাসাপটা বক্তব্য:
 
যেমনটা ভুলে গেলে চলবে না বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা। এরা যুক্ত হয়ে এই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল:

 গ্রাফিতিতে অসাধারণ কিছু উঠে আসে। যেমন ফেলানি:
১৩ বছর হয়ে গেছে 'ফেলানির' [৩৭] বিচার হয়নি! যেন আমরা তারকাঁটা থেকে ফেলানিকে নামিয়ে আনতে আগ্রহী না। আমরা বিডিআর থেকে বিজিবি হলাম। সীমান্তের বাঘকে বেড়াল বানালাম। আবার সেই সীমান্তের বেড়ালকে ঢাকায় এনে বাঘ বানিয়ে দিলাম। বিডিয়ারের হিরোদেরকে আমরা জিরো বানিয়ে দিলাম। বিডিয়ারের বীর
জেনারেল Alm Fazlur Rahman [২৮] গভীর অভিমানে, কষ্টে এই প্রজন্মের জন্য এটাই রেখে যান, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না-করা হয়!
"আমি আমার একমাত্র কন্যাকে বলেছি আমার মৃত্যুর পরে আমার মরদেহকে যেন কোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়া হয়। "    
এই মানুষটা এখনও জীবিত। এখনও সুযোগ আছে এই মানুষটাকে যথাযথ সম্মান জানানো:
মনে আছে, রৌমারি সীমান্তে সংঘর্ষের ছবি এএফপির বরাত দিয়ে প্রথম আলো ছাপিয়েছিল:

প্রথম আলো ২০.০৪.২০০১

রানা প্লাজা। এ এক বেদনার ক্ষত! রানা প্লাজার উদ্ধার কাজ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ছিল। কিছু প্রশ্নও ছিল। আশা করছি এই সব প্রশ্নের উত্তর এখন পাওয়া যাবে:
 
ওই সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে যেসব প্রশ্ন ছিল এর উত্তর এখন আমরা পাব আশা করছি:
 
সালমান এফ রহমান। পাজির পা-ঝাড়া! কলকাঠি নেড়ে শেয়ার বাজারের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলেন! সে সেময় কত যুবক যে আত্মহত্যা করেছিল। কত পরিবার নিঃস্ব হয়েছিল। অনেক পরিবারের মেয়েরা দেহ ব্যবসায় নেমে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, পেটের দায়ে। ব্যাংক সব সাফ করে দিয়েছে।
এই মানুষকে অনেকে বলেন, দরবেশ কিন্তু আদতে তিনি অনেক বড় মাওলানার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এই মানুষটার এই ভিডিও ক্লিপটা দেখে আমি হতবাক। কত বড় মাওলানা! সালমান এফ রহমান এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বলছেন:
"...এখন, এখন, এখন এখানে আপনার সমস্যা আছে। সমস্যাটা কোথায়? কোরআনটা নিয়ে তেমন সমস্যা নাই। কোরআনটা নিয়েও সমস্যা আছে কিন্তু তেমন নয়। সমস্যা আপনার চলে আসে হাদিসটাতে...।" (সালমান এফ রহমান)
এই দেশে কোরআন নিয়ে এমন মন্তব্য করে পার পেয়ে যাওয়াটা অকল্পনীয়!
 
আজ মাওলানা সাহেব ধরা খেয়েছেন। ক্ষৌরকর্মও সেরে ফেলেছেন:

সাবেক আইনমন্ত্রীর দেখি বিস্তর 'ট্যাকাটুকা'!
 
সালমান এফ রহমানের কথা বলা বাতুলতা মাত্র। এই মানুষটা শেয়ার বাজার, শিক্ষা, ব্যাংক সবই শেষ করে দিয়েছে।


পূর্বে লিখেছিলাম, বিচার বিভাগ ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। কেবল বিচারপতিদের বা আইন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিলেই হবে না পুরো সিস্টেমটাকেই পরিবর্তন করতে হবে।
এই যে সাবেক আইনমন্ত্রী এবং সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতার করা হলো। আদালতে তোলা হলো, এখানে আমরা দেখেছি, আইনজীবীরা এদের প্রতি ডিম ছুড়ে মারছেন! অন্য কাউকে আবার কলার ধরে রাখছেন! এই আইনজীবীরা কী 'ছাতার' আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন!
 
"কিন্তু খুবই ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, এদের পক্ষে বিচারিক কাজে কোন আইনজীবী দাঁড়াননি বা দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি! কেন, এ স্রেফ অন্যায়। আইন বা আইনের লোক এটা করতে পারেন না। আইনজীবী পাওয়া এদের অধিকার। অতি খারাপ একটা উদাহরণ সৃষ্টি হল। "
এ সত্য, আনিসুল হক জুডিশিয়াল সিস্টেমটাকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আদালত, আদালতের বাইরে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তিনি তার নোংরা থাবা বসাননি! প্রতিটা ব্যাখ্যা রসিয়ে-রসিয়ে দিতেন:
তা মুচলেকা তো এখন আপনিও দিচ্ছেন-দিয়েছেন, এর গতি কী!
 
এখন বিচার বিভাগ ঢেলে সাজাবার কথা বলতে হবে, বারবার। আদালতের যে অবস্থা দেখলাম! একজন বিচারক বিচারকার্য পরিচালনা করেন কেমন করে? এটা কী কোর্ট নাকি মাছ বাজার!
 
আর যে হত্যা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে দলকানা ব্যতীত সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে এটা বাকোয়াজ একটা মামলা। আজ যারা আনিসুল হকের মিথ্যা মামলা নিয়ে উল্লাস করছেন তারা নিজেরাই নিজেদের ফাঁদ সৃষ্টি করছেন। আমরা বিএনপির মহাসচিবের ময়লার গাড়ি পোড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বের হতে চাই।
আওয়ামীলীগ, আনিসুল হকদের সময়ে বিএনপি নেতাদের অনেককে প্রতিদিন কোনও-না-কোনও মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হত। ভাবা যায়, একটা সভ্য দেশে একজন মানুষের ৪৫০ মামলা!
হিস্ট্রি রিপিট- আজ আনিসুল হক সেই দিনই দেখছেন। নিশ্চয়ই তিনি উপভোগ করছেন না। 
 
প্রফেসর ইউনূস খাঁচা-খাঁচা করতেন আমরা বুঝতে পারতাম না। এও নাকি সত্যি, যেদিন প্রফেসর ইউনূসের মামলার তারিখ থাকত সেদিন নাকি লিফট অচল থাকত। ৮৪ বছর বয়সী মানুষটাকে হেঁটে-হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে ৮ তলায় উঠতে হতো :
 
ইতিহাস ফিরে আসে বারবার! আজ আইনমন্ত্রীকে এই খাঁচার ভেতর দাঁড়াতে হলো:
 
কোথাও দেখলাম, ভাইজান আসছে রাজপথ কাঁপছে...। তা ভাইজানটা কে? অরি আল্লা, এ তো দেখি 'লুকিং ফর শত্রু'। হালে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। সে ভিন্ন বিষয় কিন্তু আমরা বড় বিস্মৃতিপরায়ণ জাতি! এই মানুষটা যে কেবল ১০ ট্রাক অস্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন না। অনেক সময় চাপে পড়ে আমাদেরকে অনেক কাজ করতে হয় যেমন পুলিশ করেছে শিক্ষার্থী-বাচ্চাদের সঙ্গে।
কিন্তু ২০০৭ সালে এই বাবর একটা খুনিকে বাঁচাতে গিয়ে এক দাগে ২০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। বসুন্ধরার আহমেদ আকবর সোবহান তার ছেলে সানবিকে খুনের মামলা থেকে বাঁচাতে।
প্রথম আলো ০১.০৬.২০০৭
 
এই খুনের সঙ্গে জড়িত যারা তাদের আজও বিচার হয়নি! আহমেদ সোবহানের এই আত্মীয় খুনি সানবিকে নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে স্বীকারও করেছিল, ২০০৮-এ:

এই আকবর সোবহানের আরেক ছেলে সায়েম সোবহান আনভির এ-ও মুনিয়া হত্যকান্ডের সঙ্গে জড়িত। মুনিয়ার বোন স্পষ্ট করে বলেছেন কেমন করে তাদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে:
 
এই খুনিদের প্রতিষ্ঠানে আনন্দের সঙ্গে চাকরি করেন ইমদাদুল হক মিলন, নঈম নিজামের মত লোকেরা! কেবল চাকরি করেন এমন না, পারলে আনভিরের মত বেয়াদব ছোকরার কাছে অর্ন্তবাসটাও বিকিয়ে দেন:
 
এই আকবর সোবহান নামের  খুনীর সহযোগী এখন আবার বড়-বড় কথা বলে! এ নাকি আমৃত্যু সমর্থন দিয়ে যাবে। এমনকি মৃত্যুর পরেও। বলে কী- মরলে আর বাঁচবি নারে, পাগল:
 
ওবায়দুল কাদেরের স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা দেখেছি। এটা একটা ইঙ্গিত ছিল কিনা কে জানে:
এরা দেশটাকে তালুকের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিল। কাদেরের মত এই দেশের কর্ণধার একজন, এফবির মত সোশ্যাল মিডিয়ায় নিলর্জের মত শত-শত ছবি আপলোড দেয়। প্রোফাইলে আবার ঘটা করে লেখে যে অসংখ্য ভাষা বগলদাবা করে রেখেছে, তার মধ্যে উর্দুও তার বগলে বা দখলে [৩১]। এখন কিন্তু তার নেত্রি খালেদা জিয়াকে ব্যঙ্গ করে নেচে-নেচে এই গানটা গাইবেন না, পেয়ারে পাকিস্তান...।
 
এ লোক মনে হয় বিদ্যুত খাম্বায় সঞ্চালন করেছিল বাপ-দাদার তালুক বিক্রি করে:
 
সংস্কারের বিপুল কাজ অসমাপ্ত। এই প্রজন্ম যেমন জহির রায়হানের কথা চিৎকার করে বলছিল, 'আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব ...' , আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখেছি এরা দ্বিগুণ না জ্যামিতিক হারে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে:
 
ছোট্ট যে মেয়েটা রুখে দিয়েছিল পুলিশের 'দানব গাড়ি':
 
এই প্রজন্মের জন্য আমাদের চলমান মগের মুল্লুকের দিন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, দ্রুত।  কাজ অনেক বাকী...!
'৩২ নম্বর বাড়ি' নিয়ে আজ ১৫ আগস্ট খানিকটা শঙ্কা ছিল, এ সত্য। এটার প্রতিরোধের মূল দায়িত্ব  ছিল সরকারের। কিন্তু আমরা দেখলাম শিক্ষার্থীদের নামে লোকজন ৩২ নম্বরে  আগত ব্যক্তিদের সেল-ফোন চেক করছে! কাউকে-কাউকে পেটাচ্ছে, অপদস্ত করছে, অর্ধ-নগ্ন করছে, কান ধরে উঠবস করাচ্ছে সিনিয়ার সিটিজেনদেরকে!:
কারা এরা-এরা কারা!? এই সব করার জন্য আমাদের বাচ্চারা অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে! অর্জিত অসাধারণ, অভূতপর্ব অর্জন যে ভেসে যাচ্ছে এটা কী কেউ খেয়াল করছে না! এটাও কিন্তু এক প্রকারের প্রতিবিপ্লব। প্রতিবিপ্লব কেবল অস্ত্র চালিয়ে হয় না। জনসাধারণের মাঝে ঘৃর্ণা ছড়িয়েও কিন্তু প্রতিবিপ্লব করা যায়। 
পূর্বে ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয়েছে সে ভিন্ন তর্কের জায়গা। কিন্তু তাই বলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটা অংশ '৩২ নম্বর বাড়ি' কেন ভেঙ্গে ফেলতে হবে!
আচ্ছা, ধরে নিলাম তখন সবাই ছিল এলোমেলো কিন্তু এখন তো ধীর-শান্ত! নদীর স্রোতকে যেমন আটকে রাখা যায় না তেমনি কারও শোক পালন করাকে। এরচেয়েও নিন্দনীয় কাজ হয়েছে ওখানে চটুল হিন্দি গান বাজানো। একেবারেই নির্দয় ছোটলোকের মত আচরণ! বাচ্চাদের রক্ত এখনও শুকায়নি অথচ এরা কদর্য আচরণ শুরু করে দিয়েছে:
সমস্ত বাংলাদেশ বাদ দিয়ে ঠিক এখানেই লুংগি ড্যান্স করার জন্য কি মা-রা তাঁদের বাচ্চাদের গুলির মুখে পাঠিয়েছিলেন?
মৃতরা ঘুমিয়ে চিরতরে গেছে চমৎকার একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে দেখতে! আর যারা জীবিত, তাঁরা শরীরের অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ হারিয়েও আহত বাঘের মতই, অসাধারণ একটা দেশকে দেখার অপেক্ষায়:
 
আমি মনে করি এটা অন্তবর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা, চরম ব্যর্থতা। ক্ষতি হয়ে গেল, বড় ক্ষতি। আপনি কাউকে শোক পালনে এভাবে বাধা দিতে পারেন না।
তারচেয়ে বরং যেটা করা যেত বড়-বড় ব্যানার বানিয়ে ৩২ নম্বরের রাস্তা-ঘাট দেয়ালের প্রতিটা অংশ শহীদ বাচ্চাদের ছবি দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া।   
যাও বাবারা, এবার শোক পালন করো। রোকেয়া প্রাচী সেখানে গিয়ে মোমবাতি ধরালো বা গীত গাইল কোন সমস্যা নেই। রোকেয়া প্রাচী একটা স্টুপিড-অপদার্থ! ভারতের একটা মিডিয়ায় এন্তার মিথ্যাচার করেছে। আমরা তাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছে:
 
আর ভারতের কিছু মিডিয়া কী পাগল হয়ে গেছে! এদের ঘিলু কী পেছনে চলে গেছে? ডক্টর এবং ডাক্তারের পার্থক্যও বোঝে না!
 
দাদাদের আর দোষ কী! আমাদের দেশের সংসদ সদস্য শেখ সেলিমও জানে না যে ডাক্তার এবং ডক্টর এর পার্থক্য, আজব!
আহারে, এই মানুষটাই এখানে কেমন মিইয়ে যান:

চিন্তা করা যায় এই মানুষটাই একজন নিপুনের জন্য কেমনতরো খেলো হয়ে যায়:
 
যাই হোক, কিছু অসাধারণ কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে:
 
 
যে ৫৭ জন প্রবাসী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়ে আটকা আছেন তাদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আবার এ-ও আনন্দের বিষয়, দুবাইয়ে বাংলাদেশি আইনজীবী ব্যারিস্টার আফরিন বিনা খরচে এই মামলা লড়বেন বলে জানিয়েছেন। এ সবই ভাল সংবাদ।
ওলোরা আফরিন, এই মানুষটাকে টুপি খোলা অভিবাদন। দেশের বাইরে যেখানে-যেখানে এই দেশের সন্তানেরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন সবাই এভাবে এগিয়ে আসবেন। এভাবেই জনবান্ধব একটা দেশ এগিয়ে যাবে। কোন জরুরি সমস্যা মাসের-পর-মাস ঝুলে থাকবে না। 

 
এ এক অসাধারণ খবর যে অবশেষে ৫৭ জন মুক্ত হয়েছেন:
 
এটাও অসাধারণ একটা সংবাদ! এটা ছিল স্রেফ সাগর ডাকাতি! আওয়ামী লীগ শাসনামলে বেসরকারী খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্যাপাসিটি চার্জের  নামে দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা! যার অধিকাংশই হয়েছে লুটপাট!!
এর উপর আছে ভারতপুত্র আদানি! অবশেষে কালো এই আইনটি বাদতল হলো। 
 
এই দেশের চাকা ঘুরে যাদের কারণে বন বন করে তাঁদের আমরা কী সম্মানই না দিয়েছিলাম। এই ভাঁড় মন্ত্রী এদেরকে লাটসাহেব-নবাবজাদা বলতে ছাড়েননি!:
এখন শুনছি, বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের স্যার-ম্যাডাম ডাকার আলোচনা হচ্ছে। এটা একটা অসাধারণ কাজ হবে। আগত যাত্রী-রেমিটেন্স যোদ্ধা এই সম্মান পাওয়ার হকদার। এটা কেন হবে না? সেল-কোম্পানিগুলোকে তো দেখি তার গ্রাহককে; হোক সে কৃষক, রিকশাচালক স্যার ডেকে-ডেকে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। আমাদের বিমানবন্দরেও পরিবর্তন এসেছে:
 
আদালত থেকে লোহার খাঁচা সরানো হয়েছে এটা চমৎকার একটা সংবাদ। মানুষ তো পশু না! তাছাড়া যারা এখানে দাঁড়ান তারা সবাই অপরাধী না। অন্তত রায় না-হওয়া পর্যন্ত অপরাধী বলা যাবে না।  
 
এই দেশের সমস্ত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম কালচার বন্ধ করতে হবে, দ্রুত।
 
যে রাষ্ট্র একজন শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে না সেই রাষ্ট্র অবশ্যই ব্যর্থ একটা রাষ্ট্র।
একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো রাতে বৃষ্টি হলে এরা ঘুমাবে কোথায়! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমাদের ডাইনিংয়ের খাবারের মান কেমন? সে কৌতুক করে উত্তর দিয়েছিল: ততটুকুই, যতটুকু ক্লাস এবং লাইব্রেরিতে যাওয়ার মত শরীরে এনার্জি থাকে!
বাচ্চাদের পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারে না যে সমস্ত শিক্ষালয় এদের তো পদ্মা সেতুর পিলারে ঝুলে যাওয়া উচিত!
হল এবং ডাইনিংয়ের সমস্যার সমাধান হলে ছাত্রদেরকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা অনেক কমে যাবে। উধাও হবে এই হাতিয়ারও:
হলে হলে এই সব উদ্ধার হচ্ছে। আজ ছাত্রলীগ ব্যবহার করেছে। কাল ছাত্রদল করবে। পরশু ছাত্র শিবির! এই সব চলতেই থাকবে।

আর এই সব কীভাবে ব্যবহার হয়? নমুনা:
এর সঙ্গে যোগ হয় আগ্নেয়াস্ত্র। এদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনাটা অতীব জরুরি।

হেলিকপ্টারে করেও গুলি করা নির্বিচারে:

অথচ শেখ হাসিনা বললেন হেলিকপ্টারে করে পানি দেয়া হচ্ছিল:

শেখ হাসিনা যখন তার সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে পুলিশ, বিডিআর, আর্মি, হেলিকপ্টার তখন ছোট-ছোট বাচ্চাদের হাতে ইটের টুকরা। এরা যুদ্ধক্ষেত্রকে স্রেফ একটা খেলার মাঠ বানিয়ে ফেলেছিল।
কী করবে বেচারাদের যে খেলার মাঠ নেই:
 
জাতির ঘাড়ে সিন্দবাদের ভূতের মত বসে থাকা ওয়াসার তাকসিম পদত্যাগ করেছে। এর কথা আলাদা করে বলা হচ্ছে এই কারণে এই তাকসিম একটা প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল! টাকার পাহাড় মাথায় নিয়ে বসে থাকা এই মানুষটাকে বিচারের আওতায় আনাটাও জরুরি:

এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি কঠিন এক অভিযোগ আছে আমার। আপনারা কী ভুলে গেছেন এই পরিবর্তনে নিহত-আহদের কথা। শহীদ আবু সাইদ সাহসের একটা প্রতীক- দেশে বিদেশে সবাই তাঁর নাম জানে। উপদেষ্টারা তাঁর বাসায় গেছেন আমরা এপ্রিশিয়েট করি। কিন্তু অন্যরা? যারা এখনও বেঁচে আছে অকল্পনীয় কষ্ট নিয়ে?
উপদেষ্টাগণ, এই মানুষটার চোখে চোখ রাখার ক্ষমতা আছে আপনাদের?
অথচ এঁদের কারণেই কিন্তু আমি-আপনি-আমরা এখানে আছি, এটা বিস্মৃত না হলে সবার জন্যই মঙ্গল। 
এই দেশে ইউএনও-ডিসির মত সাধারণ-একজন আমলার জন্য কোটি টাকার পাজারো স্পোর্টস গাড়ি দেওয়া হয়। এখন এদের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। আর্থিক সহায়তার দিন। আপাতত নিহতদের অন্তত ২৫ লাখ এবং আহতদের জন্য ১০ লাখ টাকার ব্যবস্থা করুন। ভাঁড়ারে টাকা না-থাকলে সালমান-টালমানদের সস্পদ বেচে দিন। কিছু একটু করুন, যত দ্রুত সম্ভব।   
 
এটা অসম্ভব আনন্দের সংবাদ। ব্র্যাক ব্যাংক আহত লোকজনকে সহায়তা দিচ্ছে। সাধু-সাধু:
 


 
আহতদের চিকিৎসায় কিছু-কিছু মানুষ, সংস্থা এগিয়ে এসেছেন:
 
ওয়েল, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে কম্বল-টম্বল দেওয়ার জন্য দেখি কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক-ব্যবসায়ীদের লাইন লেগে যেত। এরা এখন কোথায়?
 
একটা বিষয় ভেবে দেখাটা এখন খুব জরুরি। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনেরা কেন আওয়ামী আমলটা নিরাপদ মনে করেন? একটু হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ পরিষেদের উপদেষ্টার বক্তব্য খানিকটা শুনি:
এই আমলে হিন্দুরা নিরাপদ ওই আমলে না- এটা অন্য রাজনৈতিক দলের জন্য খারাপ উদাহরণ এবং ভাবার বিষয়!
 
টাকা-পয়সা দেখছি এখন বাদামের খোসা!  একটা সরকারী হাসপাতালের বাবুর্চির বাসার ভেতরের অংশ এটা:
 
ছোট্ট একটা পৌরসভার একজন মেয়রের কী বিপুল সম্পদ:


সামান্য একজন মেয়রের কী দবদবা:
 
একজন ডিআইজির কাছে ৬ হাজার কোটি টাকা!
 
শ্লা, ডিআইজি হারুনের কেয়াটেকারের ১০০ কোটি টাকা:
 
এক এস আলম নিয়ে গেছে ৯৫ হাজার কোটি টাকা! কী একটা দেশে বাস করতাম আমরা!
 
রূপপুরের এক প্রজেক্টেই শেখ হাসিনার 'ট্যাকাটুকা':
টাকাটা প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা! এই টাকায় মাত্র ২টা পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব!
খুবই ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, লুটপাটে সবাই কিন্তু শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা করছে কিন্তু তার বোন শেখ রেহানার কথা আলোচিত হয় না! ভাগ্যক্রমে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে। এই টিউলিপ সিদ্দিক যে একটা অমানুষ এটা ফিলিস্তিনের বাচ্চাদের মৃত্যুর বিষয়ে তার বক্তব্যে উঠে এসেছে। ইংল্যান্ডের পক্ষ নিয়ে বলেছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। সে মানুষ না অমানুষ সেটাই মূখ্য বিষয়।
 
শেখ হাসিনা এবং তার লোকজনেরা দেশটাকে নিজস্ব সম্পত্তি মনে করতো মনে হয়। হাজি সেলিম নামের এই ইতরটা প্রকাশ্যে মুজরা করে, বাঈজি নাচায়:
তার ছেলেটা আরেকটা ইতর:
 
আজ এই হাজি সেলিম নামের ইতরটার কী কান্না!
 
জয় আমেরিকায় কি করেন আল্লাহ জানেন! তারেক জিয়া লন্ডনের মত ব্যয়বহুল শহরে বছরের-পর-বছর কীভাবে চলেন এটাও আল্লাহ জানেন। সবই তিনি জানেন!
জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সমালোচনা সে ভিন্ন আলোচনা কিন্তু এই মানুষটাকে আর্থিক দূর্নীতি কখনও স্পর্শ করেনি!
 
আহারে-আহারে! ছোট-ছোট দৃশ্য কিন্ত কী বেদনার! ক্লাস চলে যথারীতি কিন্তু ছটফটে ছেলেটা আর নাই:

ছেলে ফিরবে না আর তবুও বোকা বাবাটা কী আর বুঝতে চান:
 
এই আন্দোলনে কিছু-কিছু দৃশ্য আইকনিক হয়ে গিয়েছিল:
 
আরাফাত নামের তেলতেলে লোকটা বলছিল: আন্দোলনকারীরা ড্রাগ নিয়েছে বলেই বুক পেতে দিচ্ছে:
 
ওহে, তেলতেলে আরাফাত, মানজুর আল মতিনকে দেখ, কেমন করে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে হয়:
আরাফাতরা প্রথম থেকেই ঘুরেফিরে বলে আসছিল, তৃতীয় শক্তি ঢুকে পড়েছে। এই মা সাফ বলে দিয়েছেন তৃতীয় শক্তি কেন চতুর্থ-পঞ্চম-ষষ্ঠ শক্তিও ঢুকেছে, অসুবিধা কোথায়!
 
অকল্পনীয় ঘটনাও ঘটে! কারও-কারও ফিরে আসা সিনামাকেও হার মানায়। এতো গুলি করেও পুলিশ একে মারতে পারেনি:
 
আবার এমন নাটকীয় ঘটনাও ঘটেছে যা অসম্ভব বেদনার। একজন অটো ড্রাইভারকে ছাত্ররা বলেছে একজন মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে নিতে হবে। সমস্ত রাস্তা তিনি টেরটিও পাননি এটা তাঁরই ছেলে:
 
কেবল যে শিক্ষার্থীরাই লড়েছে এমন না। অজানা, অচেনা মা-রাও:
 

যেমন মা তেমন ছেলে! 
 
আহারে-আহারে! কী মায়া!
 
কিছু-কিছু বিষয় খুবই শংকার। এরা যে মুক্ত হচ্ছে যথার্থ নিয়ম মানা হচ্ছে কি:
এই শিবির নাছিরকে ধরার সময় এর লোকজনেরা ১৫০০ গুলি ছুড়েছিল! ছেড়ে তো দিলেন এবার একটু চোখে-চোখে রাখেন:
 
সুইডেন-বেলজিয়াম-ফ্রান্স, সব ভাইদেরই ছেড়ে দেবেন? ভাল-ভাল!
 
বাংলা ভাই-ইংলিশ ভাই সব যে গণহারে ছেড়ে দিচ্ছেন পরে ফার্সি ভাই এলে সামলাতে পারবেন তো?
 
দানব কিন্তু তার মাকেও খেয়ে ফেলে:
 
আর এটা বিস্মৃত না-হলেই ভাল হবে যে এখনও হাজার-হাজার অস্ত্র বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এসএসএফের ভয়ংকর অস্ত্রের কিন্তু কোন খোঁজ নাই!

 ২১শে গ্রেনেড হামলা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
তখনকার এই সাবেক ডিআইজি কিছু প্রশ্ন রেখেছেন:

এই সরকারের যে বিষয়টা নিয়ে অতি সত্বর মাথা ঘামাতে হবে সেটা হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে। কেমন করে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়। কেবল ভোক্তা অধিকারের লোকজনেরা বাজারে গিয়ে জরিমানা করলেই হবে না। মূল জায়গায় হাত দিতে হবে:
 
যেমনটা ভোক্তা অধিকারের কাছে এই মানুষটা প্রশ্ন করছেন:

জরুরি একটা আলাপ। অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে সব মেনে নিচ্ছি। কিন্তু একটা বড় কিন্তু থেকে যায়। আমরা এখনও ভুল পথে হাঁটছি! আত্মঘাতি। কোথায় সংস্কার?
আওয়ামীলীগের নেতাদের যেসব মামলা দেয়া হচ্ছে। ধরা যাক, দিপু মনি। মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। একটা দুগ্ধপোষ্য শিশুও জানে এই মামলার ভিত্তি কী!
সেই আওয়ামী আমলের ময়লার গাড়ি পোড়াবার মত মামলা। সেই পুরনো গল্প! পুলিশকে মিথ্যা এজাহার লিখতে বাধ্য করা। সেই-ই, জাজকে দেখেও না-দেখতে বলা। এই চক্র থেকে আমরা কী বের হব না?
অথচ এই দিপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন অযথা বিদেশ ভ্রমণ করে দেশের কোটি-কোটি টাকা উড়িয়েছেন। শত কোটি টাকার বালু খেয়ে ফেলেছেন। নয়ছয় করে জায়গার দাম বাড়াতে কারসাজি করেছেন। এই সব জালে না-আটকে বায়বীয় মিথ্যা জালে আটকাবার চেষ্টা হাস্যকর এবং অসম্ভব খারাপ একটা উদাহরণ সৃ্ষ্টি করা।
 
আরেকটা ভয়াবহ কান্ড ঘটছে আদালতে নেওয়ার সময়। কেউ ডিম ছুড়ে মারছে তো কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। এই নিয়ে জনতা, বিএনপির আইজীবীদের উল্লাস! আচ্ছা, আইজীবী তো আইনের লোক, গুন্ডা তো না।
আজ দেখলাম, দিপু মনির গায়ে একজন বোতল থেকে পানি ঢেলে দিল। একটু কল্পনা করা যাক, পানির বদলে এসিড ছিল! এরা সবাই কিন্তু রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় আছে। এদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে সরকার বাধ্য।
আমরা দেখলাম, হাসানুল হক ইনুকে আদালত চত্বরে শত-শত পুলিশের সামনে লাথি মেরে পালিয়ে গেল জাফরান কালারের টি-শার্টের ফ্ল্যাগ উড়াতে-উড়াতে, এক কমান্ডো! কেউ তার গোপন কেশও স্পর্শ করতে পারল না। এই কমান্ডোকে এসএসএফের সর্দার বানিয়ে দেওয়াটা এখন আমাদের জোর দাবী:
 
গোলাম আযমের ফাঁসি চেয়ে যখন শাহবাগে লক্ষ-লক্ষ মানুষ বিক্ষোভ করছিল তখন গোলাম আযম হাঁটা দূরত্বের হাসপাতালে ভর্তি। কেউ তাকে স্পর্শ করার ভাবনা ভাবেওনি! 
আমার মনে হয় পুরান ঢাকা থেকে এই কোর্ট স্থানান্তর করা অতি জরুরি। এই আদালত সব দিক দিয়ে বিচার কাজের জন্য অনুপযুক্ত।
 
আদালত চত্বরে এই সমস্ত গুন্ডামি বন্ধ করতে হবে। যেমনটা আওয়ামী আমলে মাহমুদুর রহমানের [৩৩] উপর আক্রমণের এই দৃশ্য আমরা আর দেখতে চাই না। যেমনটা দেখতে চাই না লাল রক্তের পেছনে এই নীল পোশাক, ল্যাম্পপোস্টের মত দাঁড়ানো:
ভারত নিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল পরিষ্কার:
 
যেমন হাইকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এনায়েতুর রহিম। ভাল কথা, তাকে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন, বেশ। খুঁজে দেখেন তার আর্থিক অসঙ্গতি। বা তার রায়ের অসঙ্গতি বা অযাচিত সুবিধা নেওয়া। কিন্তু এই সব হাস্যকর মামলার জালে জড়িয়ে এই প্রজন্মের কাছে পূর্বের বাজে উদাহরণই থাকছে!
যেমন বিচারক মানিক সরকারের বাড়ি ভাড়া দেয়নি। হাজার কোটি টাকার জমি দখল করে রেখেছেন!
মামলা ঠুকে দেন।
সমস্যা তো নাই...। যেমনটা আমরা আওয়ামী আমলে দেখেছি জাফরুল্লাহ চৌধুরির বিরুদ্ধে মাছ চুরির মামলা দেওয়া হয়েছিল। এই দেশের সেরা-এক সন্তান মাছ চুরির অপবাদ নিয়ে কবরে গেছেন। তারচেয়ে জরুরি হচ্ছে, সরকার-পুলিশ-বিচার-আইন বিভাগ একটা জোকারে পরিণত হয়েছিল।
 
কেউ সেধে জোকার হতে চাইলে আটকাবার সাধ্য কার! আহারে সিস্টেম!  সিস্টেম আসলে সিস্টেম থেকে বেরুতে পারে না! সাবেক বিচারক মানিককে ভারতে যাওয়ার সময় আটক করা হয়েছে। যথারীতি আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এই মানুষটার ২বার ফাঁসি হউক সে ভিন্ন আলোচনা কিন্তু তাই বলে আমরা দেখেছি সরকারের কাস্টডিতে থাকার পরও এই মানুষটার গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে! :
আবার এই লোকের বিরুদ্ধে ৫৪ ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে! হে খোদা, এই কুখ্যাত ৫৪ ধারা কী এখনও বেঁচে আছে? একটা সভ্য দেশে? আর সাবেক বিচারপতির শত কোটি টাকার জায়গা দখল, বিপুল টাকার আর্থিক নয়ছয়, ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা, সব বাদ দিয়ে ৫৪ ধারা? আবারও সেই খেলা! আগের মতই রাষ্ট্রযন্ত্রের সবাইকে অপব্যবহার হতে বাধ্য করা। আমরা কী আরেকটা দানব তৈরি করছি!
আর কোন ধারা পাওয়া গেল না। ৫৪? আজব!
এক লোক অবৈধ ভাবে দেশ ত্যাগ করতে যাচ্ছে এটাই তো আইনের ব্যত্যয়!
এ সত্য, মানিক নামের এই মানুষটা নোংরা একটা মানুষ! এই জাজ মানিক সীমান্তে যখন অপমানজনক ভাবে ধরা পড়ে তখন এক প্রসঙ্গে বলছিলেন: 'উপস্থাপিকা দিপ্তীর কাছে তো আমি ক্ষমা চেয়েছি'। আমরা মনে-মনে বলেছিলাম, সাধু-সাধু কিন্তু ওরে পাজি, এ তো সাধে ক্ষমা চায়নি। চেয়েছে উকিল নোটিশ পাওয়ার পর:
 
মানুষটা একটা অমানুষ! একটা স্যাডিস্ট! একটা দানব যে কিনা মৃত্যু নিয়ে উল্লাস করে! এখানে বিচারক মানিক বলছে, 'আমি সাঈদিকে ফাঁসি দিয়েছিলাম'।
কথাটাই ভয়ংকর! একটা বিচারালয় চুলচেরা বিশ্লেষন করে ফাঁসির আদেশ দিতে পারে কিন্তু কোন ব্যক্তি না। মানিকের কথা মনে হয় একটা খুনির দম্ভোক্তি। এবং এতে কোন সন্দেহ নেই যে তার বিচারকার্য প্রশ্নবিদ্ধ!
 
আরেকটা বিষয়, আওয়ামীলগের সবাইকে কি ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেওয়া হবে? যেমন, ডা. সামন্ত লাল সেন? আমার জানা মতে, বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার পেছনে তাঁর অবদান অপরিসীম। যেমনটা আমরা দেখছি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিষয়টা। তিনি নারায়নগঞ্জেই ছিলেন এবং সবাইকে বিষাদে ভাসিয়ে বিদায় নিয়েছেন:
 
আবার যেমনটা খুলনায় হয়েছে। প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তাঁর শিক্ষালয়ে কোন পুলিশ ঢুকতে পারেনি। তিনি ছিলেন অটল: 
"আমার ক্যাম্পাসে কোন পুলিশ প্রশাসন ঢুকতে পারবে না। এখানে  আমিই প্রশাসন।"
তাঁকে পদত্যাগ না-করতে শিক্ষার্থীরা ঝাপিয়ে আন্দোলন করেছে!
 
দেশে এখনও অনেক অরাজকতা হচ্ছে এ সত্য। যেমন এটা একটা অসভ্য, অমার্জিত একটা দৃশ্য! এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জোর করে যে সমস্ত পদত্যাগ করানো হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। 
 
যে সমস্ত জায়গায় এই প্রকারের বিচ্যুতি আছে তা চাপ সৃষ্টি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কার্যকর করতে হবে:
 
যে ছাত্রটা তার শিক্ষকের গায়ে হাত তুলে উল্লাস করছে তাকে অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি না-দিলেও তার অভিভাবকের কাছ থেকে মুচলেকা নিতে হবে:

কোথাও-কোথাও আবার শিক্ষকদের সসম্মানে ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে:
 
অন্তত তার  আমরা আশা করছি দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে মানুষের শ্বাস ফেলার যো ছিল না। কল্পনা করা যায়, সামান্য লেখালেখির জন্য উঠিয়ে নিয়ে যায়, পঙ্গু করে দেয় একজন সাবেক রাষ্ট্রদূতকে! আমরা কোন ছাড়!
 
সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজের  ভাইরা খুনি!
সাবেক সেনা প্রধানের খুনি ভাইদের রাষ্ট্রপতি (পড়ুন পুুতুলপতি) ক্ষমা করে দেন:
আমি আশায় বুক বেঁধে আছি, কেউ-একজন আইনের আশ্রয় নেবেন যে, আমাদের রাষ্ট্রপতি কেমন করে, কাকে-কাকে, কেন ক্ষমা করেছেন? কি উপায়ে এই অনাচার বন্ধ করা যায়!
আমাদের রাষ্ট্রপতিরা এতো দয়াবান কেন?
 
মরার উপর খাঁড়ার ঘা! দুম করে বন্য চলে এলো। এখানেও অভূতপূর্ব কিছু দৃশ্য দেখা গেল:
 
আমাদের সেনা-নৌ-বিমান সবাই তাদের সর্ব শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে! কেন এমনটা হবে না? পোশাকধারী এই মানুষগুলো কী এই দেশের সন্তান না? এদেরকে জনবিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল বিভিন্ন উপায়ে, কূটচাল করে:

কী অপূর্ব একটা দৃশ্য:
 
আহা, চোখ ভরে আসে:
 
দেশে যখন ছাত্র-জনতাকে সাহায্য করছেন না পুলিশের ভয়ে তখন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এগিয়ে এসেছেন:
 
বন্যা, এই দূর্যোগেও এঁরাও এগিয়ে এসেছেন:
এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরকে আমরা কেন জানি আমাদের কাছ থেকে দূরে ঠেলে রাখি। এরা একটু সুযোগ পেলে কোথায় থেকে কোথায় যেতে পারেন এর উদাহরণ সরকারের উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তা ওয়ালিদুর রহমান [৩৫]। আজব একটা জাতি আমরা! এই দেশে এতো কল-কারখানা অথচ এদের জায়গা হয় না ওখানে!
 
বন্যা এলে সবার ত্রাণ দিতে যাওয়াার প্রয়োজন নাই তো। একটা ট্রাকে করে রওয়ানা হচ্ছেন ২০ জন মানুষ, আজব! এরা যাচ্ছে পিকনিক করতে।
 
কেউ-কেউ ত্রাণের নামে মেকআপের জিনিস দিচ্ছেন। এরা কী মানুষ!
এটা আমি বিশ্বাস করি। আগের-এক বন্যায় এক মেম্বার সাহেব এক বয়স্ক মহিলাকে টিসুূর প্যাকেট দিয়েছিলেন। এটা পত্রিকায় এসেছিল!  
দান কেমন করে করতে হয়, দেখেন বন্যায় এই লোকের কোটি টাকা ভেসে গেছে তারপরও তাঁর বাড়িতে ৩০ জনকে আশ্রয় দিয়েছেন, খাওয়াচ্ছেন!
 
আমাদের বাচ্চারা আমাদেরকে শিখিয়ে দিচ্ছে কেমন করে নম্রতা-বিনম্রতার সঙ্গে ত্রাণ দিতে হয়। মুগ্ধ নামের ছেলেটোর কথা মনে আছে আপনাদের:
মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ- এরা যমজ ভাই ছিল। মুগ্ধ আন্দোলনে গুলি খেয়ে মারা যাওয়ার পর স্নিগ্ধ কষ্টে নীল হয়েও দমে যায়নি! দেখুন, মুগ্ধ-এর যমজ ভাই স্নিগ্ধকে। আহা, তার কথাগুলো কান জুড়িয়ে যায়:
 
একে দেখুন ত্রাণ দিয়ে কেমন করে হাতজোড় করতে হয়, কেমন করে যিনি নিচ্ছেন তাঁকে আড়াল করতে হয়:
 
এটা প্রতীকী ছবি। কীভাবে ফটোসেশন করতে হয়:

ছাত্রদের এই কর্মকান্ডকে আমি সমর্থন করি:
শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ অন্য কারণে! অতীতের মত এরা স্কুলে আয়োজন করে ত্রাণ দিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো এমনিতেও আইজিপি, র‌্যাব ডিজির কাজ তো ত্রাণ দেওয়া না। 
ডিয়ার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয়, আপনাকে কেন বস্তা ধরে ত্রাণ দিতে হবে? আপনি বরং খোঁজ নেন, দূর্গত এলাকায় যে ডাকাতি হচ্ছে- 
এ তো বিপদের উপর বিপদ! এটা নিয়ে আলোকপাত করতে পারতেন, ব্যবস্থা নিতে পারতেন। বন্যা উপদ্রুত লোকজনেরা বুকে বল পেত।
আর আপনি সেনাপতি, আপনি আপনার দূর্গ সামলান। আনসারদের সচিবালয় ঘেরাওয়ে ছাত্রদের যেতে হলো কেন? খুব খারাপ একটা উদাহরণ সৃষ্টি হলো। পুলিশ কোথায় , এটা তো পুলিশের কাজ!
আমি ছাত্র-সমন্বয়ক সারজিসের এই বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত:
 
আপনারা কী নিশ্চিত হতে পেরেছেন এখানে যারা সচিবালয়ের সবাইকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তারা সবাই সরকার নিয়োজিত আনসার সদস্য?
 
ডিয়ার, আইন-বিচার-সংসদ উপদেষ্টা, আপনি একজন পোড়খাওয়া মানুষই নন একজন আইনের শিক্ষক, লেখকও। আমদের প্রবল আশা, আপনি কোথাও আইনের ব্যত্যয় হতে দেবেন না।
আমরা আপনাকে, আপনাদেরকে অবশ্যই সময় দিতে চাই। কিন্তু...!
আপনি বললেন, 'সাকিব তো বাংলাদেশের জন্য কিছুই বয়ে আনে নাই'? এটা কী আপনি বুঝে বললেন!
এতে কোন সন্দেহ নাই যে সাকিবের মত পাজি এই দেশে বিরল! সীমাহীন লোভের লকলকে জিহ্বা, দেশের জন্য উদাসীন, জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা- এক কথায় 'পাজির পা ঝাড়া'! কিন্তু খেলার বিষয়ে ওর আছে ঐশ্বরিক ক্ষমতা। আইন উপদেষ্টা, যা আপনার, আমার নাই।
ওকে শায়েস্তা করার বহু উপায় আছে তা না করে হত্যা মামলা? এটা কি আপনি নিজে বিশ্বাস করেন? একটা দুগ্ধপোষ্য শিশু বিশ্বাস করবে! আবারও বলি, আপনারা আবারও পুলিশ-বিচারালয়কে পূর্বে অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছেন। যার ভবিষ্যত ভয়ংকর!
আমরা সংস্কার চাই, আমরা এই সব পুরনো বৃত্ত থেকে বের হতে চাই। 
আর অসাধারণ ফুটবলার আমিনুল হকের যে উদাহরণ দিলেন। এ সত্য, তাঁর সঙ্গে যেটা হয়েছে তা ন্যাক্কারজনক! কিন্তু এ অতি বিস্ময়ের, আমিনুল এবং সাকিবকে মিলিয়ে আপনি যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন এটা তো রাজনীতিবিদদের ভাষা। আমরা অন্তত একজন আইনের শিক্ষকের কাছ থেকে এটা আশা করিনি!
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে ভিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে গোলাম মওলা রনি তার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ, যে মানুষটা সম্বন্ধে আপনি বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌভাগ্য যে এমন একজন উপাচার্য পেয়েছে। তাঁর একাডেমিক ফিরিস্তি এখানে আর দিলাম না। তবে তিনি আর যাই হোন আপনার মত কপট মানুষ না! যেমনটা আপনি একজন আপাদমস্তক মিছরির ছুরি!
একজন নিয়াজ আহমেদ হওয়ার শিক্ষা-যোগ্যতা রনির না-থাকুক অন্তত শিষ্টাচার শেখার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ!

রনির সম্ভবত এই প্রকারের ভিসি খুব পসন্দ:
এ যুবলীগের দায়িত্ব পেলে উপাচার্যের দায়িত্ব ছেড়ে দেবে! আমরা আমাদের সন্তানদের পাঠাই এই সমস্ত অপদার্থের কাছে শিক্ষা গ্রহণের জন্য। আহারে, বেচারার যুবলীগ বড়-বড় কলম নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে:
এখন ছাত্ররা যদি একে ঘাড় ধরে নামিয়ে যুবলীগের কোলে বসিয়ে দেয় খুব একটা দোষ দেওয়ার অবকাশ নাই! এ-ও এই ধরনের বড়-বড় কলম নিয়ে 'গুছ-লেংটি' দিয়ে দৌড়াল। সমস্যা তো নেই!
কেবল রনি নামের টক-শোর টকারের কথা বলে লাভ কী! এই হচ্ছে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী:
যেমন দেশের বুদ্ধিজীবী তেমনই দেশের লেখক:
 
আওয়ামীলীগের এক নেতাকে বলতে শুনলাম, গণভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচী নজিরবিহীন। এমনটা তো চলেই আসছে। আওয়ামীলীগও একদা 'হাওয়া ভবন' ঘেরাওয়ের কর্মসূচী দিয়েছিল:
তখন তারেক জিয়া ক্রিকেট খেলছিলেন!
 
ড. কামাল হোসেনকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে হেয় করা হয়েছে। একবার তো তাঁর বাসার সামনে ভাড়া করে লোক এনে বস্তির মত বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যাই হোক, কামাল হোসেনের মত গুণি মানুষকে কেমন করে সম্মান দেখাতে হয় তা আবারও দেখলাম। ধন্যবাদ, প্রধান উপদেষ্টা!
 
যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা পূর্বের প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে জগ-গ্লাস এনেছেন (বিষয়টা ব্রাত্য রাইসু ব্যতীত অন্য কারো চোখে সম্ভবত পড়েনি)! চমৎকারা একটা আইডিয়া নিঃসন্দেহে!
পানির সঙ্গে 'মাইক্রো-প্লাস্টিক' পেটে যাওয়াটা ভয়ংকর! ড. মো. ইউনূসের 'জিরো কার্বন' অসাধারণ একটা আইডিয়া।
কিন্তু ডিয়ার প্রধান উপদেষ্টা, টেবিলময় কেবল জগ আর জগ, গ্লাস আর গ্লাস! কাচেঁর বোতলে পানি রাখলে সেটাই সমীচীন হতো। তাছাড়া এখানে কেউ তো আর মরুভূমি থেকে আসেনি যে একদম এক জগ পানি লাগবে!

এর পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব বাজারে পাটের তৈরি 'সোনালী ব্যাগ' বাজারে আনতে হবে। বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খানকে ১০০ ভাগ কাজে লাগান। 
 
আমাদের দেশে সাংবাদিকদের 'সাংঘাতিক' বলাটা কেবল বলার জন্য না। অধিকাংশ, রিপিট অধিকাংশ মিডিয়া হচ্ছে দস্যুদের হাতে। সাংবাদিকরা হচ্ছে তাদের হাতিয়ার। এই সব সাংবাদিকদের কী পরিমাণ সম্পদ তা কল্পনাও করা যায় না:
 
'সময় টিভি' পুলিশকে প্ররোচিত করেছিল শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালাতে যেন এরা ভাল একটা গুলির ফুটেজ নিতে পারে। বন্যা নিয়েও এরা এই সব করেই সংবাদ কাভার করে:
    

কল্পনা করা যায়, আমরা কেমন একটা দেশে বাস করছিলাম! দেশের প্রথম সারির মিডিয়া 'যুগান্তর', 'ডিবিসি' এবং 'দেশ রুপান্তর'-এর সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের হত্যাযজ্ঞে সরাসরি জড়িত ছিল:
 
সোশ্যাল মিডিয়া অধিকাংশ মানুষকে নির্বোধ বানিয়ে দেয়, স্রেফ নির্বোধ! যেমন হাসিনা-কন্যা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। দেশ যখন বন্যায় ভেসে যাচ্ছে তার নিজের মা যখন দেশের বাইরে উদ্বাস্তু তখন হাহা-হিহি-হোহো করলেন ভাল কথা কিন্তু এটা বাজারে তুলে দেওয়াটা সমীচীন ন। দৃষ্টিকটু, ভারী দৃষ্টিকটু!

যত দিন যাচ্ছে আমরা পুলিশের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করছি:
 
শেখ হাসিনা নাকি 'মাদার অভ হিউমিনিটি' ছিলেন। দেশে গণতন্ত্রের বন্যা নাকি বইছিল সেই দেশের পুলিশ কেবল গুলি করে মারেইনি। আটার বস্তার মত মৃতদেহ ভ্যানে ছুড়ে মেরেছে। এরপর মৃতদেহে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে:
 
'মাদার অভ হিউমিনিটি' অসংখ্য দানব সৃষ্টি করেছে:
শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে:

পুলিশের উপর মানুষের এতো ক্ষোভ কেন ছিল এখন খানিকটা বুঝতে পারছি:
মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিক এটা জানার পরও পুলিশ তাকে এমন ভাবে গুলি করে যে এখনও তার শরীর ৯২টা স্প্লিন্টার (ছররার বল) আছে:
 
আমাদের ডাক্তার সাহেবরা তাদের উপর হামলার কারণে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিই কেবল দেন নাই জাতীর উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন:
এই ঘটনা নাকি ইতিহাসে নাই! কিন্তু আমরা 'পাতিহাসে' খুঁজে পেয়েছি!
তখন যে ডা. স্যাররা 'শটাং-ডাউন' করলেন না!
 
ব্রি. জেনারেল আজমি জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের কথা বললেন:
এটা এখনই বলতে হবে কেন? আর যে জাতীয় সংগীত আছে তাই-বা পরিবর্তন করতে হবে কেন? দেশের মানুষ যদি মনে করে এটার পরিবর্তন প্রয়োজন সে ভিন্ন তর্কের বিষয়! কিন্তু
সব বাদ দিয়ে আপনাকে এটা বলতে হবে কেন, ঠিক এখনই?  এটা তো এখন আপনার কাজ না। চুপ থাকেন, জাস্ট শাট-আপ!
 
আর আমি একটা বিষয় বুঝলাম না, ধরা যাক, কারও ঘর-বাড়ি নাই। সে একটা বাড়ি ভাড়া নিল। উঠার পরই শুরু হয়ে গেল বদনা বদলাও, দেওয়ালের রং ক্যাটক্যাটে পরিবর্তন আবশ্যক! বেসিনটা ঠিক ধবধবে না...। আজব! সবই অল্পতেই যেন মহা অস্থির হয়ে গেছে! 
 
পুলিশের বর্বরতার দায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লা আল মামুনের এড়াবার কোন সুযোগ নেই, ব্লাডি মার্ডারার!
 
সাবেক আইজিপি মামুনের হাতে হাতকড়া নাই, কেন?
 
কিন্তু সাবেক আইজিপি শহীদুল হক এখনই গ্রেফতার কেন? অন্তত এখন কেন!
আওয়ামীলীগ শাসনামলে ডা. সামান্ত লাল অসাধারণ-সব কাজ করেছেন। এমনিতে তিনি বার্ন ইউনিটের জন্য যে নিরলস পরিশ্রম করেছেন তা ভুলে যাওয়ার পূর্বে একটা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে একটু নিজের শরীরের চামড়ায় ধরে রাখুন। কেমন বোধ করছেন?
খুব খারাপ, খুব খারাপ! ডা. সামান্ত লাল শুভ নামের একজনকে খুন করেছেন। আচ্ছা, আপনারা একটু ঝেড়ে কাশুন তো, আসলে কী চাচ্ছেন আপনারা? আওয়ামী লীগের সময়ে যা কিছু সব আছে সব উপড়ে ফেলবেন? ওই সময় যে সমস্ত গাছ জন্মেছে ওগুলো কাটা পড়বে না? বা ধরুন ওই সময় যে সমস্ত বই লেখা হয়েছে সমস্ত বই কী পুড়িয়ে ফেলা হবে! বা ধরুন...এই ধরাধরির আসলে শেষ নাই। আমি আমার অল্প জ্ঞানে যা বুঝি, এই সমস্ত কর্মকান্ড হচ্ছে কফিনে পেরেক ঠোকা।
এদের প্রাণ দান অর্থহীন হয়ে পড়বে।
এমনিতেও রাজণীতিবিদদের কাছে আমাদের প্রাণ কেজি দরে মূল্য। 
বিচিত্র। ১৭ মে, ১৯৯১
হাসিনা সহ এখানে সবাই রাজনীতিবিদ! ৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের কথা যাদের মনে আছে তারা বলতে পারবেন কী ভয়াবহ দিন তখন।
১৫-২০ ফুট জলোচ্ছ্বাসসহ সেই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে সরকারি হিসাবেই ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রায় ১ কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছিল। (প্রথম আলো)
তো, ওখান থেকে ফিরে এসে শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ এই সাংবাদিক সম্মেলন করছেন!
 
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যাচ্ছেন। সফরসঙ্গী মাত্র ৮ জন! শেখ হাসিনা নিয়ে যেতেন ২০১৩ সালের ১৩৪, ২০১৪ সালের ১৭৮, ২০১৫ সালে ২২৭!
প্রফেসর ইউনূসকে সাধুবাদ। কিন্তু...! তাঁর সংগে তাঁর মেয়ে দিনা আফরোজ ইউনূস যাচ্ছেন। কেন? এবং এই খরচ কি সরকার বহন করবে?
 
আমাদের দূর্ভাগ্য, এই ২০২৪ সালে এসেও মুক্তিযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা আমরা জানি না। একটা পুরনো বিতর্ক ৩ লক্ষ নাকি ৩০ লক্ষ। এ সত্য, সংখ্যাটা কম-বেশি হলে বেদনা-গৌরব কমে যায় না। কিন্তু সত্যটা জানাটা জরুরি:
        

* এই লেখাটা অসমাপ্ত। সময়ে-সময়ে এখানে লেখা, তথ্য-উপাত্ত যোগ হবে।
** বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোন প্রকারের ভুল বা অসঙ্গতি কারও চোখে পড়লে সহৃদয়তার সঙ্গে জানবেন, বিষয়টা ইচ্ছাকৃত না। এবং জানাবেন, প্লিজ। অসঙ্গতি ধরিয়ে দিলে অনেকে রাগ করেন কিন্তু আমি লজ্জা পাই!
*** এই লেখায় ধারাবাহিকতা রাখাটা কঠিন। কারণ মাত্র ১ মাসে এবং এখন যা হয়েছে, হচ্ছে তা নিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটা বড় কঠিন।
 
 হাইপার লিংক:

১. জাফর ইকবালের ট্রেঞ্চ: https://www.ali-mahmed.com/2020/05/blog-post.html
২. জাফর ইকবাল এক অসুরের নাম: https://www.ali-mahmed.com/2020/06/blog-post_27.html
৩. নিরাপদ সড়ক: https://www.ali-mahmed.com/2018/08/blog-post.html
৪. বাস্তবকে ছাড়িয়ে যায় কল্পনা: https://www.ali-mahmed.com/2014/06/blog-post_24.html
৫. একজন ট্যাংকমানব: https://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_03.html
৬. উক্য চিং: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_8752.html 
৭. দুলা মিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_08.html
৯. ভাগিরথী: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_6057.html  
১৩. নৌ কমান্ডো: https://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_18.html
১৭. ফাইভ হান্ড্রেড ডেইজ: https://www.ali-mahmed.com/2013/06/blog-post_6986.html
১৮. শেকলগুলো ভেঙ্গে পড়ছে...: https://www.ali-mahmed.com/2009/03/httpwww.html
১৯. একজন সাগর এবং নড়বড়ে সাঁকোটা: https://www.ali-mahmed.com/2012/02/blog-post_15.html
২০. ছফার খেসারত: https://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_6474.html
২১. উহাদের দেশের জনগণ বড়ই বেতমিজ: https://www.ali-mahmed.com/2020/08/blog-post_29.html
২২. বাড়ি নিয়ে...: https://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_24.html
২৩. দানবের হাতে ক্ষুর: https://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_28.html 
২৪. একজন শহীদুল আলমের নগ্ন পা: https://www.ali-mahmed.com/2018/08/blog-post_9.html
২৫. ভাইয়া তুম...: https://www.ali-mahmed.com/2020/09/blog-post.html
২৬. আ মরি বাংলা ভাষা: https://www.ali-mahmed.com/2022/06/blog-post_15.html
২৭. সাধুবাদ-মুর্দাবাদ: https://www.ali-mahmed.com/2008/12/blog-post_08.html
২৮. আমাদের নায়ক, আমাদের কষ্ট: https://www.ali-mahmed.com/2019/10/blog-post_28.html
২৯. জ ই মামুন, অসভ্যতা: https://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_16.html
৩০. Global Defense Corp: https://www.globaldefensecorp.com/2024/08/17/ousted-bangladeshs-prime-minister-sheikh-hasina-her-son-sajeeb-wazed-joy-and-niece-tulip-embazeled-5-billion-from-overpriced-12-billion-rooppur-nuclear-power-plant-through-malaysian-banks/#google_vignette
৩১. ওবায়দুল কাদের: https://www.ali-mahmed.com/2020/08/blog-post_10.html
৩২. থ্রি ইডিয়টস...: https://www.ali-mahmed.com/2023/02/two-and-half-idiots.html
৩৩. মাহমুদুর রহমান, আমার দেশhttps://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_09.html
৩৪. মোস্তফা জব্বার, চৌর্যবৃত্তি: https://www.ali-mahmed.com/2015/03/blog-post.html
৩৫. ওয়ালিদ ইসলাম: https://www.ali-mahmed.com/2024/05/blog-post.html
৩৬. মেজর সিনহা: https://www.ali-mahmed.com/2020/09/blog-post_14.html
৩৭. ফেলানি: https://www.ali-mahmed.com/2011/01/blog-post_10.html
৩৮. কল্পনা চাকমা: https://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_19.html
৩৯. আমার পাপ, চোখের পাপ: https://www.ali-mahmed.com/2020/06/blog-post_21.html
৪০. গণভবন হোক গণমানুষের: https://www.ali-mahmed.com/2024/09/blog-post.html 
৪১. জীবন বড়ই আনন্দময়: https://www.ali-mahmed.com/2019/04/blog-post.html
৪২.
 ... ... ...
অবগতি:
 
আন্দোলনের শুরুতে লেখাটার শিরোনাম ছিল,  'আমার লেখালেখি সব মিশেছে গিয়ে আবর্জনায়'। এই শিরোনাম কেন এর  ব্যাখ্যা লেখার সময় পাচ্ছি না! 
 
পরে এতো দ্রুত সব পাল্টে যেতে লাগল তখন এই শিরোনাম পরিবর্তন করলাম। লেখাটার প্রথম কিছু অংশ নীচে এখানে রেখে দিচ্ছি:

একবার লিখেছিলাম সম্ভবত, জাফর ইকবালকে নিয়ে লেখা আমার জন্য 'শব্দের অপচয়'! তারপরও শুরু করিলাম তাহারই নামে। কারণটা বলি। আমাদের দেশে খুব বড় একটা সমস্যা হচ্ছে এটা, আমাদের দেশে এমন মানুষের বড় অভাব যাদের দেখিয়ে আমরা আমাদের সন্তানদের বলতে পারি, ব্যাটা, ওই মানুষটার মত হবি। জাফর ইকবাল, এই ভদ্রলোক আবার শিশু-কিশোরদের মাথা এলোমেলো-ঘাঁটাঘাঁটি করার বিরল সুযোগ নিয়ে এসেছিলেন। উপরওয়ালার দান- কী আর করা!

 

জাফর ইকবাল নামের এই 'চেতনার পোটলাটা' আবার বাহুত বাড়া দেশপ্রেমিক। এঁর মত দেশপ্রেমিক এই দেশে দূরের কথা এই গ্রহে আর 'কেক্কু' নাই!
কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই কপট লোকটাকে কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে না? আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এন্তার মিথ্যাচার করার জন্য, সবিরাম? জেনারেল এ এল এম ফজলুর রহমান স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন জাফর ইকবাল একটা মিথ্যাবাদি, চরম মিথ্যাবাদি []। এই লেখায় তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন:

"আমরা মুক্তযোদ্ধারা একদিন সবাই  মরে যাবো। তখন ড. জাফর ইকবালের এই লেখার প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না। সেই সময় অনেকেই তার কথাকে বিশ্বাস করবে। আমি একজন জীবিত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জানি, ১৯৭১ সালে ঢাকা শহর দখলের কোনো যুদ্ধ হয়নি। দুই নম্বর সেক্টরের ক্রাক প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা শহরে অপারেশন করত। তা ছিল একেবারেই চোরাগোপ্তা এ্যাকশন।

এই যে তিনি বলছেন কানের কাছে গোলাগুলির শব্দ, শেলিং-এর অসহ্য শব্দ যার হাত থেকে বাঁচতে তিনি কম্বল মুড়ি দিয়ে ট্রেঞ্চে আশ্রয় নিতেন এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঢাকা শহর দখলের এমন কোনও যুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হয় নাই।"
-জেনারেল এ এল এম ফজলুর রহমান

জাফর ইকবালের মত ধামড়া একটা মানুষ যুদ্ধের সময় যুদ্ধে না-গিয়ে কেবল গর্তেই লুকিয়েই থাকেননি, এন্তার মিথ্যাচার করেছেন। এই প্রজন্মকে মিথ্যায় ভাসিয়েছেন- এই প্রজন্মকে অনবরত মগজ ধোলাই করেছেন []। এখন আবার এই মানুষটা আসেন বাচ্চাদের শেখাতে! এদিকে মোস্ট ওবিডিয়েন্ট স্যারের ছাত্রদের আবেগ দেখে আমার এক চোখে জল অন্য চোখে পানি চলে এলো:

 
অন্য-এক ছাত্রের আবেগ দেখে কান্না কী আর থামে আমার। আহারে, তার বক্তব্য, 'এই একটি মানুষ কখনো বদলে যান নি'। এই একটি মানুষ মানে জাফর ইকবাল! ওনলি ওয়ান পিস- বাকী সব মেটামরফসিস!
 

আরেক দল আছে জ্ঞানপাপি। এরা ভয়ংকর! কারণ এরা বিপুল জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও জরুরি আলোচনার সময় এদের ব্রেনটা চট করে পেছনে চলে যায়। নমুনা:

তিনি বিরাট এক কাহিনী ফেঁদে পরিশেষে বলছেন:

"...বুঝলাম এই ছেলে প্রশিক্ষিত বাচ্চা শিবির। এরাই নেতৃত্বে। হাঁটা দিলাম।, আরও দু চারজন লোকের সাথে।"
কী আজব! তার ভাষায় নাইনে পড়ে একটা বাচ্চা ছেলে তার মোবাইল নিয়েছে বলে তিনি এটা বললেই সমীচীন ছিল: বেয়াদব একটা ছেলে। তা না-বলে তিনি বাচ্চাটাকে শিবির বানিয়ে দিয়েছেন, তাও প্রশিক্ষিত শিবির! ভাবা যায়, এটা একটা সুস্থ মানুষের কথা! রাজাকার-শিবির এই একটা ট্যাগ লাগিয়ে এরা সবই জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেন, এমনকি একটা মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলাও!

তিনি তখনকার কথা বলছেন যখন একটা দেশে বাচ্চা-বাচ্চা ছেলেরা বিক্ষোভ করছে নিরাপদ সড়কের জন্য []। একটা দেশ তার বাচ্চাদের নিরাপদ সড়ক দিতে পারছে না তার উপর মেরে-মেরে রক্তাক্ত করছিল, লজ্জায় দেশটার তো সাগরে ডুবে মরা উচিত ছিল!
 
ইতরামি চলতেই থাকে:

 
আমাদের বাচ্চারা যখন মারা যাচ্ছিল- দেশের এমন এক অবস্থায় আমাদের দেশের এক বিস্ময়, বাংলা ভাষার প্রতি সবচেয়ে বড় আবেগের থলেওয়ালা, মোস্তফা জব্বার নামের 'ভাষাবাপ' [৩৪]তো আর বসে থাকতে পারেন না। 
যথারীতি 'এস্টাটাস' প্রসব করেছেন। ভাবা যায়, এমন পর্যায়ের একজন মানুষ ফেসবুকে তার বন্ধু বাড়াবার জন্য মাইকিং করছে। পূর্বের অন্য এক লেখায় একে একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন, জাকারবর্গের নাম তো বাংলায় না, সে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালে? আমাদের 'বাংলা-স্যার' স্যার সাফ না করে দিলেন [১৫]। ভাবা যায়, কত বড় বঙ্গাল!
 

কোটা আন্দোলনে অমানুষ-পশুরা যখন বাচ্চাদের হাত ছেড়ে দেয় তখন কেউ-না-কেউ তাদের পাশে সিনা টান করে দাঁড়ান! বিদেশী এই মানুষটার নাম ড. ডেভিড ডাউল্যান্ড, রেজিস্ট্রার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

আমাদের শিক্ষকদের মধ্যেও কেউ-কেউ থাকেন আমাদের সন্তানদের পাশে। আহমাদ মোস্তফা কামাল নামের এই শিক্ষক শুরু থেকেই ছিলেন ছাত্রদের পাশে। আসলে এমনটাই তো হওয়ার কথা।

পারিবারিক প্রসঙ্গ শেয়ার করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। তবুও খানিকটা প্রাসঙ্গিক বিধায় বলি। আগাম ক্ষমা প্রার্থনা,  কারও তাড়া থাকলে এই অংশটুকু বাদ দিয়ে পড়বেন। বাবা হিসাবে আমি একজন খুবই নীচু শ্রেণীর মানুষ। আমি থাকি মফস্বলে। এখানকার স্কুল শেষ করার পর আমার ছেলে শাহীন কলেজে পড়েছে। কোন দিন আমার যাওয়া হয়নি! এরপর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে আড়াই বছর হবে। 'প্যারেন্টস ডে'-তে বা কোন অনুষ্ঠানেই যাওয়া হয়নি! সেরা ছাত্রের পুরষ্কার পেল, যাওয়া হয়নি! এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অনুষ্ঠানে ম্যাজিক দেখায়, যাওয়া হয়নি! 

ক-দিন আগে এক কাজে গিয়েছিলাম ওদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার ছেলে খুব আগ্রহ করে ওদের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। ব্রি. জেনারেল আনোয়ারুল ইসলাম নামের সদাশয় মানুষটাকে আমি বলেছিলাম: আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সবই আপ-টু-দ্য-মার্ক কেবল একটা বিষয় ব্যতীত। ফুডকোর্টে, যেখানে শিক্ষক-অভিভাবকরাও যান সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অল্প-কিছু ছেলে-মেয়েদের আচরণ ভারী দৃষ্টিকটু- অশালীন!

পরে অনেকেই এটা শুনে সেকি হা হা হাসি! প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি এসব ডালভাত। বটে রে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বলে কী ভ্যালুজ-মূল্যবোধ, নৈতিকতা অন্য গ্রহে হাঁটা দেয়!

তো, রেজিস্ট্রার ভদ্রলোককে ঠিক এই কথাটাই বলেছিলামআমরা বাবা, মা-রা যখন মাঠে-আপিসে থাকি তখন আপনারাই তো বাবা, মা-র রোলটা প্লে করেন। আসলেই তো- এঁরা তো কেবল শিক্ষক নন, বাবা-মাও! এটা কেবল বলার জন্য বলা না, আমার লেখালেখির শপথ।   
 
    

No comments: