আইনজীবী জেড আই খান পান্না সফল হননি, হলে সর্বনাশ হয়ে যেত! তিনি খুন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ভিকটিম বেঁচে গেছে! নইলে আবারও সর্বনাশ হয়ে যেত।
আইনজীবী পান্নার বিরুদ্ধে 'হত্যা চেষ্টার মামলা' হয়েছে। ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামের একজনকে গুলি এবং মারধর শুরু করেন ১৮০ জন দুষ্কৃতিকারী। অবশ্য এরমধ্যে কে গুলি করেছেন আর কে মারধরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা এখনও জানা যায়নি! ক্রমশ জানা যাবে। তদন্তসাপেক্ষে পরে এটাও হয়তো প্রমাণিত হবে ১৮০ জন একসঙ্গে গুলি করেননি! করলে তো আর আহাদুল বেঁচে থাকতেন না। ১৮০টা গুলি খাওয়ার পর এই জগতে কে বেঁচেছে!
তো এই ১৮০ জন আসামীর মধ্যে জেড আই খান পান্না আছেন ৯৪ নম্বরে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কারণ এই ভদ্রলোকের আছে অকল্পনীয় সংগ্রামী এক জীবন। তিনি যে ৭১ সালে লড়েছেন কেবল তাই না তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করে জেলও খেটেছেন। কর্নেল তাহেরের সঙ্গে জেলে ছিলেন [১]। এমন একজন মানুষ কোন-একটা হত্যা চেষ্টায় সরাসরি গুলি করেননি এটা আমি মানতে পারছি না। তাঁকে ১ নং আসামী দেওয়াটাই সমীচীন ছিল।
মামলাটি করেছেন আহাদুল ইসলামের বাবা মো. বাকের। এই বিষয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাউদ হায়দার বলেন:
"আহতের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন, আমরা মামলা নিয়েছি। মামলাটি তদন্ত করে দেখা হবে যে এর সত্যতা রয়েছে কি না।" (ডেইলি স্টার, অক্টোবর ২০, ২০২৪)
আরেকটা কথা। মামলা বাদীও মারাত্মক চৌকশ একজন মানুষ! এক দুই জন না, ১৮০ জনকে আসামি করেছেন! এবং জেড আই খান পান্না, বিজিবির বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এই সমস্ত নাম ঠিক-ঠিক মনে করে মামলাটা করেছেন। এ এক বিস্ময়, মহা বিস্ময়!
যাই হোক, এখন জানলাম বাদী পান্না সাহেবের নাম 'ভুলে-ভালে' দিয়েছেন বলে প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তাতে এখন আর কিছু যায় আসে না! আমাদের মত আমজনতার লাউ-কদুর পার্থক্য না-জানার কারণ নেই নিয়মিত বাজারে যেতে হয় যে। এভাবে কফিনে পেরেক ঠোকা হয়েই যায়। এই সব করে-করে পুলিশকে আবারও শেখানো হচ্ছে কেমন করে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে কায়দা মত নাম ঢুকিয়ে দিতে হয়। বিচারককে মহোদয়দেরও ভাল করে শেখানো হচ্ছে কাকে জামিন দেওয়া যাবে, কাকে দেওয়া যাবে না।
ভাল, ভাল তো! 'পরিবর্তনের হাওয়া' উড়িয়ে নিয়ে যায় দমকা হাওয়া। বিচারক মানিককে দেওয়া হয় ৫৪ ধারার মামলা [২], সাকিবকে দেওয়া হয় হত্যা মামলা। কী আজব!
ধরে নিলাম মানিক, সাকিবদের মত পাজিদেরকে শায়েস্তা করা প্রয়োজন, তাই বলে এই সমস্ত মামলা! মানিকের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, ১৪ লাখ টাকা সরকারী বাড়ি ভাড়া না-দেওয়া, মানি লন্ডারিং কত মামলাই তো দেওয়া সম্ভব। তেমনি সাকিবকে ধরার আর কী কোন উপায় নেই? জুয়ার সঙ্গে জড়িত থাকা। বা সাকিব আমেরিকায় বাড়ি কিনেছে। ভাল কথা, অতি উত্তম! তা বাংলাদেশ ব্যাংক কী টাকা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে? এই অনুমতিপত্র আমরা দেখতে চাই।
আফসোস, বড়ই আফসোস! শত বছরে এমন একটা সুযোগ আসে। শেখ হাসিনা যেভাবে জাঁকিয়ে বসেছিল আমার তো মনে হয় না কেউ এই কথাটা বিশ্বাস করত স্বাভাবিক মৃত্যু ব্যতীত তাকে এভাবে হটিয়ে দেওয়া সম্ভব। অন্তত আগস্টের ৫ তারিখের পূর্বে। অথচ আমরা কী অবলীলায়ই না এই অসাধারণ সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য মুখিয়ে আছি।
আমরা আসলে ঠিক কী যে চাচ্ছি উপরওয়ালাও জানেন কিনা কে জানে! আওয়ামীলীগ ওরফে হাসিনা দীর্ঘ সময় ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। কোথাও-না-কোথাও, কেউ-না-কেউ, কোন-না-কোন প্রকারে ক্ষমতার বলয়ের স্পর্শে এসেছে। এখন সবাইকে হরেদরে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করলে তো ভারী মুশকিল! হাসিনার সময়ে যে-সমস্ত গাছ জন্ম নিয়েছে সব কেটে ফেলার পূর্বে এত কুড়ালের ব্যবস্থা করা যেমন প্রয়োজন তেমনি কেটে ফেলা গাছ রাখার জায়গাও...।
আহারে-আহারে, এই সমস্ত বাচ্চাদের বলিদান কী অবলীলায়ই না উবে যাচ্ছে! এই বাচ্চাটার একটা হাত নেই:
এমন কতশত গল্প! এই ছেলেটার কথা একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো। সেই সময়টার কথা। যখন ডাক্তার তাকে অবচেতন করার ওষুধ না-দিয়ে পায়ের হাড়ে ড্রিল করছিল:
* অন্তবর্তীকালীন সরকার এখন জানাচ্ছেন এর পেছনে তাঁদের কারও হাত নেই। জেনে ভাল লাগছে। ভাল লাগার শেষ থাকবে না যাদের হাত আছে তাদের খুঁজে বের করলে। যে ওসি সাহেব মামলাটা নিয়েছেন তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান, এখুনি...।
সহায়ক সূত্র: