Search

Tuesday, October 22, 2024

কফিনে পেরেক ঠোকা!

আইনজীবী জেড আই খান পান্না সফল হননি, হলে সর্বনাশ হয়ে যেত! তিনি খুন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ভিকটিম বেঁচে গেছে! নইলে আবারও সর্বনাশ হয়ে যেত।

আইনজীবী পান্নার বিরুদ্ধে 'হত্যাচেষ্টার মামলা' হয়েছে। ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামের একজনকে গুলি এবং মারধর শুরু করেন ১৮০ জন দুষ্কৃতিকারী। অবশ্য এরমধ্যে কে গুলি করেছেন আর কে মারধরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা এখনও জানা যায়নি! ক্রমশ জানা যাবে। তদন্তসাপেক্ষে পরে এটাও হয়তো প্রমাণিত হবে যে ১৮০ জন একসঙ্গে গুলি করেননি! করলে তো আর আহাদুল বেঁচে থাকতেন না। ১৮০টা গুলি খাওয়ার পর এই জগতে কে বেঁচেছে!

তো এই ১৮০ জন আসামীর মধ্যে  জেড আই খান পান্না আছেন ৯৪ নম্বরে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কারণ এই ভদ্রলোকের আছে অকল্পনীয় সংগ্রামী এক জীবন। তিনি যে ৭১ সালে লড়েছেন কেবল তাই না তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করে জেলও খেটেছেন। কর্নেল তাহেরের সঙ্গে জেলে ছিলেন []। এমন একজন মানুষ কোন-একটা হত্যা চেষ্টায় সরাসরি গুলি করেননি এটা আমি মানতে পারছি না।  তাঁকে ১ নং আসামী দেওয়াটাই সমীচীন ছিল।

মামলাটি করেছেন আহাদুল ইসলামের বাবা মো. বাকের। এই বিষয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাউদ হায়দার বলেন:

"আহতের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন, আমরা মামলা নিয়েছি। মামলাটি তদন্ত করে দেখা হবে যে এর সত্যতা রয়েছে কি না।" (ডেইলি স্টার, অক্টোবর ২০, ২০২৪)
ওসি সাহেব ভাল বলেছেন। আগে, অতীতকালে  ওসিরা যেমন করে বলতেন তিনি ঠিক তেমনই বলেছেন! তবে ওসি স্যারের কাছে ছোট্ট একটা বিষয় জানার ছিল। আমাদের পুলিশ স্যাররা কবে থেকে এমন দয়ালু হয়ে গেলেন! কেউ গেলেই দুম করে যে-কোনও মামলা নিয়ে নেন! এখন আমি যদি এই ওসি সাহেবের বিরুদ্ধে একটা মামলা দিতে যাই তাহলেও কী তিনি চট করে মামলাটা নিয়ে নেবেন?

আরেকটা কথা। মামলা বাদীও কিন্তু মারাত্মক চৌকশ একজন মানুষ! এই মামলায় এক দুই জন না, ১৮০ জনকে আসামি করেছেন! এবং জেড আই খান পান্না, বিজিবির বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এই সমস্ত নাম ঠিক-ঠিক মনে করে মামলাটা করেছেন। এ এক বিস্ময়, মহা বিস্ময়!

হাসিনাতন্ত্রের সামনে দেশের ক্রান্তিলগ্নে জেড আই খান পান্না নামের এই মানুষটা দাঁড়িয়ে ছিলেন সিনা টান করে।

যাই হোক, এখন জানলাম বাদী পান্না সাহেবের নাম 'ভুলে-ভালে' দিয়েছেন বলে প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তাতে এখন আর কিছু যায় আসে না! আমাদের মত আমজনতার লাউ-কদুর পার্থক্য না-জানার কারণ নেই, নিয়মিত বাজারে যেতে হয় যে।

এভাবে আসলে কফিনে পেরেক ঠোকা হয়েই যায়। এই সব করে-করে পুলিশকে আবারও শেখানো হচ্ছে কেমন করে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে কায়দা মত নাম ঢুকিয়ে দিতে হয়। বিচারক মহোদয়দেরও ভাল করে শেখানো হচ্ছে কাকে জামিন দেওয়া যাবে, কাকে দেওয়া যাবে না। কোন মামলার মেরিট আছে কোন মামলার নাই!

ভাল, ভাল তো! 'পরিবর্তনের হাওয়া' উড়িয় যায় দমকা হাওয়ায়। বিচারক মানিককে দেওয়া হয় ৫৪ ধারার মামলা [], সাকিবকে দেওয়া হয় হত্যা মামলা। কী আজব!

ধরে নিলাম, মানিক, সাকিবদের মত পাজিদেরকে শায়েস্তা করা প্রয়োজন, তাই বলে এই সমস্ত মামলা! মানিকের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, ১৪ লাখ টাকা সরকারী বাড়ি ভাড়া না-দেওয়া, মানি লন্ডারিং, টক-শোতে রাজাকারের বাচ্চা বলা এমন কত মামলাই তো দেওয়া সম্ভব। আর কিছু না-পেলে বিনা অনুমতিতে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছেন যেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তেমনি সাকিবকে ধরার আর কী কোন উপায় নেই? জুয়ার সঙ্গে জড়িত থাকা। শুনেছিলাম কুমিরের খামার চালাতো। তা কুমিরকে ঠিক মত খেতে দেয় কিনা, নাকি কুমিরকে মুড়ি খাইয়ে দিন পার করাচ্ছে। বা সাকিব আমেরিকায় বাড়ি কিনেছে। ভাল কথা, অতি উত্তম! তা বাংলাদেশ ব্যাংক কী টাকা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে? এই অনুমতিপত্র আমরা দেখতে চাই।

আফসোস, বড়ই আফসোস! শত বছরে এমন একটা সুযোগ আসে। শেখ হাসিনা যেভাবে জাঁকিয়ে বসেছিল আমার তো মনে হয় না কেউ এই কথাটা বিশ্বাস করত স্বাভাবিক মৃত্যু ব্যতীত তাকে এভাবে হটিয়ে দেওয়া সম্ভব। অন্তত আগস্টের ৫ তারিখের পূর্বে। অথচ আমরা কী অবলীলায়ই না এই অসাধারণ সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য মুখিয়ে আছি।

আমরা আসলে ঠিক কী যে চাচ্ছি উপরওয়ালাও জানেন কিনা কে জানে! আওয়ামীলীগ ওরফে হাসিনা দীর্ঘ  সময় ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। কোথাও-না-কোথাও, কেউ-না-কেউ, কোন-না-কোন প্রকারে ক্ষমতার বলয়ের স্পর্শে এসেছে। এখন সবাইকে হরেদরে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করলে তো ভারী মুশকিল! হাসিনার সময়ে যে-সমস্ত গাছ জন্ম নিয়েছে সব কেটে ফেলার পূর্বে এত কুড়ালের ব্যবস্থা করা যেমন প্রয়োজন তেমনি কেটে ফেলা গাছ রাখার জায়গাও...। 

আহারে-আহারে, এই সমস্ত বাচ্চাদের বলিদান কী অবলীলায়ই না উবে যাচ্ছে! এই বাচ্চাটার একটা হাত নেই:

চিকিৎসাধীন থাকার সময় এই বাচ্চাটার কথা শুনছিলাম। চোখের পলক না-ফেলে এ কী অবলীলায়ই না বলছিল:
এক হাত গেছে তো তো কী হয়েছে দেশ চাইলে আরেক হাত দিবো।

এমন কতশত গল্প! এই ছেলেটার কথা একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো। সেই সময়টার কথা। যখন ডাক্তার তাকে অবচেতন করার ওষুধ না-দিয়ে পায়ের হাড়ে ড্রিল করছিল: 


* অন্তবর্তীকালীন সরকার এখন জানাচ্ছেন এই মামলার পেছনে তাঁদের কারও হাত নেই। জেনে ভাল লাগছে। ভাল লাগার শেষ থাকবে না এই মামলায় যাদের হাত আছে তাদের খুঁজে বের করলে। যে ওসি সাহেব মামলাটা নিয়েছেন তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান, এখুনি...।

সহায়ক সূত্র:

১. কর্ণেল তাহেরের নিধনপর্ব: https://www.ali-mahmed.com/2013/05/blog-post_15.html
২. দেখা, ফিরে দেখা, ছাত্র আন্দোলন...: https://www.ali-mahmed.com/2024/07/blog-post_17.html
 

No comments: